শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

শেখ ফাহমিদা নাজনীন এর কবিতা ‘হিসাবটা মিললে’

বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ৩, ২০২২
শেখ ফাহমিদা নাজনীন এর কবিতা ‘হিসাবটা মিললে’

হিসাবটা মিললে 
              - শেখ ফাহমিদা নাজনীন 

গতকাল শেষ রাতে, 
যখন তুমি ফিরছিলে,
রাস্তাটা ছিলো নির্জন, সড়কবাতিগুলো সারারাত জ্বলে জ্বলে ক্লান্ত, 
তার আলোর রেশটুকু ঝাপসা হয়ে আসছিলো, 
বেওয়ারিশ কুকুরগুলো রাতভর চক্কর দিয়ে 
শেষরাতে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়েছিল 
লম্বা দালানগুলোর গলি ঘুপচিতে।

তাদের সাথে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ঘুমিয়ে ছিলো 
আরও কিছু দুপেয়ে প্রাণী। 

দিনের ঝকঝকে আলোয় যাদের কখনো সখনো 
চকলেট আর সেফটিপিন ফেরী করতে দেখো,
কখনো দোকানীদের ফেলে দেওয়া বাসী ফুলের মালা 
অথবা ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ছোটাছুটি করতে দেখো।

শেষরাতে তাদের অনাহুত উপস্থিতি তোমার যাত্রাকে বিষিয়ে তোলেনা।

স্বল্প আলোয় রাস্তার উঁচুনিচু, 
দুপাশের আবর্জনার স্তুপ দৃষ্টির অন্তরালে থেকে যায়।

শেষরাতের আলো ভারি জাদুকরী হয়,
শুনশান রাস্তায় মায়াবী আবেশ তৈরি করে রাখে।

অবশ্য তুমিও খানিকটা অপ্রকৃতস্থ থাকো
তোমাদের সামাজিক কেন্দ্রের রোজকার জমায়েত শেষে। 

তোমরা তাকে পার্টি বলে থাকো।
এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের মধ্যে তোমরা হাতে গোনা মাত্র ক'জনা।
প্রতিরাতে তোমাদের কারও না কারও, কিছু না কিছু ইস্যু রয়েই যায়।

জন্মদিন, বিবাহের মাসপূর্তি, কারও টাকে চুল গজালো, কারও বা চুল পড়লো,
তোমাদের ইস্যুর শেষ নেই। 

তোমাদের কান্না আমরা কখনো দেখিনি, 
তোমরা আনন্দ কিনে নিতে ভালোবাসো।

তোমাদের গাঁয়েহলুদের উৎসবে বিদেশি শিল্পীরা উড়ে আসে আকাশযানে,
সারারাত গান শুনিয়ে এক বস্তা মোহর নিয়ে ফিরে যায় শেষরাতে। 
এই রাজকীয় অভ্যাসটা তোমাদের নতুন ট্রেন্ড। 
অথচ গত মহামারীর বছরগুলোতে 
কতজন বাস্তুহারা হলো, কতজনের বেতন নেমে এলো অর্ধেকে,
কতজন দু'বছর ধরে বেতনই পায়নি, 
তোমরাও বোধ করি সে খবর জানো।
তোমাদের কারখানাতে হরহামেশা কর্মী ছাটাই হয়,
তাতে তোমাদের কি দোষ? 
বিশ্বজুড়ে মহামারী চলছে যে,
তবু যদি তোমাদের রাত্তিরের পার্টিতে বিদেশি শিল্পীর আনাগোনা না হতো, 
যদি মোহরের বস্তাখানা দিনের আলোয় উপুড় করে দিতে পারতে,
কারখানার হাড় হাভাতে কর্মীদের মধ্যিখানে,
তবে কি খুব অসুবিধা হয়ে যেতো? 
এ আমার অন্যায় আবদার, এ ভারি আত্মপ্রবঞ্চনা! 
অথচ আমরা অসংখ্য হাড় হাভাতে  গুচ্ছের মতো আছি, 
তোমাদের আদমশুমারী তার হিসাবটা কখনোই ঠিকঠাক দিতে পারবে না। 
আর তোমরা? 
হাতে গোনা মাত্র ক'জনা।
একটা আবদার করি শোনো,
তোমাদের সারারাতের জমকালো পার্টি ভেস্তে দাওনা একদিন, 
ঘরে ফিরে এসো আঁধার হবার আগেই, 
রাস্তার দুই ধারে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকে যে দুপেয়েগুলো,
একদিন গুনে নাও তাদের, 
তোমাদের এক বস্তা মোহর! 
আর ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের একগুচ্ছ দুপেয়ে প্রাণী! 
কি গো হিসাবটা মিললো তো?

শেখ ফাহমিদা নাজনীন 
২১ জানুয়ারি ২০২২।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল