বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

চীনের পিপিপি সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির প্রস্তাব, বিষয়টি স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ

রোববার, আগস্ট ৭, ২০২২
চীনের পিপিপি সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির প্রস্তাব, বিষয়টি স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ




সময় জার্নাল ডেস্ক: শ্রীলঙ্কায় বর্তমান পরিস্থিতির জন্য চীনের ঋণ দেওয়ার নীতিকে কিছুটা দায়ী করছে পশ্চিমা বিশ্ব। ভবিষ্যতে এ ধরনের দায় থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) বা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব মডেলে দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের দিকে যাচ্ছে চীন। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে পিপিপি সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে তারা। বিষয়টি স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ।


গতকাল রোববার ঢাকায় বাংলাদেশ ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। এ বৈঠকে পিপিপি সহযোগিতা বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) উদ্যোগে ঢাকাকে পাশে চায় বেইজিং। চীন জানিয়েছে, ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেবে। এ ছাড়া চীনে পড়তে যেতে চাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা দেওয়া শুরু করা হবে। তাইওয়ান ইস্যুতে এক চীন নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়ে পাশে থাকায় বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে। চীন জানিয়েছে, যে কোনো সংকটে বাংলাদেশের পাশে থাকবে তারা। সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে এই বৈঠক হয়। এতে চারটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। চীনের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।


দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেওয়া ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেছেন, চীন বাংলাদেশের পাশে আছে, সেই বার্তাই সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে প্রতিফলিত হয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশকে তারা পাশে চায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি বিবেচনায় অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছুটা রক্ষণশীল নীতি নিয়েছে চীন। চীনের ঋণ নেওয়া কোনো দেশ দেউলিয়া হয়ে গেলে একদিকে যেমন বদনাম হয়, অন্যদিকে তৈরি হয় ঋণের টাকা আদায়ের ঝুঁকি। ফলে আফ্রিকায় তারা পিপিপি মডেল শুরু করে। বাংলাদেশেও তারা একই মডেলে কাজ করতে চায়। এ মডেলে চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করবে। তারাই বাংলাদেশে প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে এবং আলোচনার মাধ্যমে ১০-২০ বছরের ব্যবধানে তাদের অর্থ সেই প্রকল্প থেকে তুলে নিয়ে যাবে। এতে ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি কমে আসবে।


বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। সকালে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি নতুন প্রস্তাব। বর্তমানে খুবই সংক্ষিপ্ত প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা পিপিপিতে কাজ ও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বলেছি। চীন এতে সম্মতি দিয়েছে।


২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্টের সফরে করা চুক্তিগুলোর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত আরেক কর্মকর্তা বলেন, চীনের প্রেসিডেন্টের সফরে ২০ বিলিয়ন ডলারের ২৭টি প্রকল্পের চুক্তি হয়েছিল। এর মধ্যে আটটির আর্থিক চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। সেই আটটি প্রকল্পের মোট ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড় করেছে চীন। চীনের প্রেসিডেন্টের সফরের চুক্তিগুলো জিটুজি বা দুই দেশের সরকারের মধ্যে হয়েছে।


 সেগুলো চলমান থাকবে। জিটুজি ও পিপিপি সমানভাবে চলবে। তবে এখন পিপিপিতে অগ্রাধিকার বেশি দেবে চীন। বৈঠকে শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতি, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস), কোয়াড বা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক ফ্রেমওয়ার্ক (আইপিইএফ) নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়গুলোতে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে তাইওয়ান ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনের মাধ্যমে ত্রিপক্ষীয় একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে একাধিক বৈঠকও হয়েছিল। মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেওয়ার পর এটি আটকে গেছে। চীনকে অনুরোধ করা হয়েছে এ প্রক্রিয়া আবারও চালু করার জন্য। চীন এ নিয়ে মিয়ানমারকে জানিয়েছে। তবে মিয়ানমার জানিয়েছে, তারা প্রথমে স্থিতিশীল হতে চায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্যতম অগ্রাধিকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন। এ বিষয়ে চীন বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে। এক চীন নীতি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা এক চীন নীতি গ্রহণ করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, চীন একটাই। এ ক্ষেত্রে আমরা তাদের সঙ্গে রয়েছি।


চীনের সঙ্গে থাকলে অন্য দেশের সঙ্গে মতবিরোধ হবে কিনা এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম। আমাদের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি আছে। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখেই চলেছি। কেউ কেউ এতে অসন্তুষ্ট হবেন। বর্তমানে বিশ্বে আরেকটি শীতল যুদ্ধের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বের হতে হয়তো একটি অবস্থান নিতে হবে। আর এ হিসেবে আমরা স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আছি।


চীনের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রায় ৭০টি দেশ এর পক্ষে মত দিয়েছে। করোনা-পরবর্তী উন্নয়নের পথে এটি সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। আমরা জানিয়েছি, সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন পক্ষ এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। আমরা এগুলো নিয়ে গবেষণা করে দেখব। চীনের প্রস্তাবও আমরা বিবেচনা করব; পরে আমাদের অবস্থান জানাব। সকালে মো. শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের জানান, আমাদের অর্থনীতি রপ্তানিনির্ভর। দু'দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে চীন আরও ১ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 


সে কারণে বাংলাদেশ এখন থেকে চীনের বাজারে ৯৮ শতাংশ পণ্য শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পাবে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ অতিরিক্ত সুবিধা চালু হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনের কারখানা ও প্রযুক্তি স্থানান্তরে সহায়তা করা হবে বলে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন। আলোচনায় এ কে আব্দুল মোমেন চীনের বিনিয়োগ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। বাণিজ্য বৈষম্য দূর করা আলোচনায় একটি বড় ইস্যু ছিল।


পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেন। এরপর চারটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- পিরোজপুরে অষ্টম বাংলাদেশ-চায়না মৈত্রী সেতুর হস্তান্তর সনদ, দুর্যোগ মোকাবিলা সহায়তার জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি সমঝোতা নবায়ন, ২০২২-২৭ মেয়াদে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা সমঝোতা নবায়ন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের ফার্স্ট ইনস্টিটিউট অব ওশেনোগ্রাফির মধ্যে মেরিন সায়েন্স নিয়ে সমঝোতা স্মারক।


বাংলাদেশে চব্বিশ ঘণ্টারও কম সময় সফর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। শনিবার বিকেলে ঢাকায় পৌঁছেন তিনি। গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা ছেড়ে যান ওয়াং ই।



এসএম












Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল