শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ব্যাংক খাত নড়বড়ে হলে মুদ্রানীতি দিয়ে কী হবে?

শনিবার, জানুয়ারী ২১, ২০২৩
ব্যাংক খাত নড়বড়ে হলে মুদ্রানীতি দিয়ে কী হবে?

অর্থনীতি ডেস্ক:

ঘোষিত মুদ্রানীতিকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এর মাধ্যমে বর্তমানে মূল্যস্ফীতির যে বড় চ্যালেঞ্জ তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তারল্য এবং ডলার সংকটেরও নিরসন হবে না। এছাড়া ব্যাংক খাতের যে নড়বড়ে অবস্থা তা সংস্কারে মুদ্রানীতিতে কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। তাহলে এই মুদ্রানীতি দিয়ে কী হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বলা হয়েছে সতর্কতামূলক সহায়ক মুদ্রানীতি। সতর্ক দিয়ে কী হবে। সতর্ক মুদ্রানীতির প্রয়োজন নেই। সহায়ক মুদ্রানীতি হতে পারে। তবে এখন দরকার সক্রিয়, বাস্তবসম্মত এবং কার্যকর মুদ্রানীতি। কিন্তু ঘোষিত মুদ্রানীতি ঘুরেফিরে গতানুগতিক। রুটিন ওয়ার্ক। কিছু সংখ্যা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সরকারি ঋণ প্রবাহ বাড়বে। এটা তো উৎপাদনশীল খাতে যাবে না। যাবে অবকাঠামো এবং যোগাযোগে। এতে বেসরকারি বিনিয়োগে আরও প্রভাব পড়বে। দেশে এই মুহূর্তের প্রধান চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। এই মুদ্রানীতি তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এছাড়া দীর্ঘদিনের বড় চ্যালেঞ্জ ব্যাংক খাতের দুর্বলতা। খাতটি সংস্কার, সুশাসন, তদারকি জোরদার-মুদ্রানীতিতে এগুলো বেশি বলা উচিত ছিল। সে প্রতিশ্রুতি নেই। এছাড়া মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন করবে কে? নিঃসন্দেহে ব্যাংক খাত। সে ব্যাংক খাত নড়বড়ে হলে মুদ্রানীতি দিয়ে কী হবে? অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কিছুই বলা হয়নি। তার মানে ব্যাংক খাতের প্রাতিষ্ঠানিক এবং কাঠামোগত যেসব দুর্বলতা দূর করা দরকার-মুদ্রানীতিতে সেসব পদক্ষেপের উল্লেখ নেই। ‘কিছু বললে (বাংলাদেশ ব্যাংক) বলে আমরা দেব টাকা।’ আরে টাকা তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাচ্ছে সরকারের কাছে। উৎপাদন এবং সরবরাহ না বাড়ালে ডলার সংকটও কাটবে না। বর্তমানে আলোচিত সমস্যাগুলো সমাধানে মুদ্রানীতিতে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। তাছাড়া দেশে অনিশ্চয়তা এবং ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এখনো টেকসই বাংলাদেশ গড়ে ওঠেনি। সে কারণে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগও হয় না।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু তা নেওয়া হয়নি। বিদেশে মুদ্রা পাচার বন্ধে সাহসী উদ্যোগ এবং খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর অবস্থান জরুরি। নতুন করে আরও ঋণখেলাপি যেন না হয় সে বিষয়েও শক্ত প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন। এসবের কিছুই মুদ্রানীতিতে নেই। শুধু ভোক্তা ঋণে সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কারণ মোট ঋণের মাত্র ৮ শতাংশ হতে পারে ভোক্তা ঋণ। এতে সাধারণ মানুষের কষ্টের কোনো লাঘব হলো না। উলটো আরও কষ্ট বাড়তে পারে। সব মিলিয়ে এটা একটা দুর্বল মুদ্রানীতি বলে মনে করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, রোববার নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়, ভোক্তাঋণের ক্ষেত্রে সুদহার ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। বর্তমানে ব্যাংকের সব ধরনের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে বেঁধে রাখা হয়েছে। এখন সেখানে ভোক্তাঋণের সুদহার বাড়িয়ে ১২ শতাংশ পর্যন্ত করতে পারবে ব্যাংকগুলো। এর ফলে ব্যাংকগুলো এখন ভোক্তাঋণের সুদহার বাড়াতে পারবে। তবে শিল্পঋণসহ অন্যান্য ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, অন্যান্য ঋণের বেঁধে দেওয়া সুদহার তুলে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন থাকবে। আমানতের সুদহার উš§ুক্ত করে দেওয়া ও ঋণ সুদহারে কিছুটা শিথিল করায় তা আমানতের সুদহার বাড়াতে সহায়তা করবে। এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে আমানতের সর্বনিম্ন সুদহার বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, তিন মাস ও তার বেশি মেয়াদি আমানতের সুদ কোনোভাবেই তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতির কম হতে পারবে না।

২০২০ সালের এপ্রিলে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেওয়ার পর আমানতের সুদহার আড়াই শতাংশেও নামিয়ে এনেছিল। বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতি যেখানে উঠেছে, তাতে ব্যাংকগুলোকে আমানতের সুদহারও বাড়াতে হয়। কিন্তু ঋণের সুদ নির্দিষ্ট থাকায় ঋণ ও আমানতের সুদের মধ্যে সমন্বয় করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এজন্য ব্যাংকগুলো ঋণ ও আমানতের সুদহার তুলে নেওয়ার দাবি করে আসছিল।

নতুন মুদ্রানীতিতে ঋণে সুদহারের ৯ শতাংশ সীমা অপরিবর্তিত রেখে নীতি সুদহার বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ব্যাংকগুলোকে পুনঃক্রয় চুক্তি বা রেপোর বিপরীতে ৬ শতাংশ সুদে ধার নিতে হবে, যা এতদিন ছিল ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। একইভাবে বিপরীত পুনঃক্রয় চুক্তি বা রিভার্স রেপোর সুদহার ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর ধারের সুদহার বাড়বে।

সামগ্রিক বিবেচনায় এবারের মুদ্রানীতিকে সতর্কমূলক বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আগের মতোই ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আর মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ১২ দশমিক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশে নামানো হয়েছে। তবে বাজেটের বিশাল ঘাটতির অর্থায়নে সরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ কমায়নি বরং বাড়িয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে এ লক্ষ্য ঠিক করে ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ করা হয়েছে।


/আইপি


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল