সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
প্রতিশোধ নিতে বহিরাগতদের দ্বারা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর এক ছাত্রের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান। ভুক্তভোগী মোবারক হোসাইন আশিক ল'এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের একই বর্ষের শিক্ষার্থী
শনিবার (৬ মে) পৌনে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ভুক্তভোগী কুষ্টিয়া থেকে ক্যাম্পাসের বাসে করে এসে প্রধান ফটকের সামনে নামেন। পরে সেখানের একটি চা দোকানে তার দুইজন বন্ধুসহ চা খাওয়ার সময় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মুশফিকসহ ১৫ থেকে ২০ জন তাঁদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলার সময় তারা লাঠিসোঁটা ও বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে তাঁকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। পরে ভুক্তভোগী সেখান থেকে দৌড়ে ক্যাম্পাসের দিকে গেলে ধাওয়া করে তাকে আবারও মারা হয়। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। পরে তাকে তাঁর সহযোগী ও সিনিয়র ভাইয়েরা সেখান থেকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ডাক্তারের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরবর্তীতে কুষ্টিয়াতে প্রেরণ করা হয়।
এ ঘটনায় সেদিন রাত সাড়ে ১০টায় অভিযুক্ত মুশফিকের বহিষ্কারের দাবিতে ভিসির বাংলোর সামনে আন্দোলন করেছেন ভুক্তভোগীর বন্ধুরা। পরে প্রক্টরিয়াল বডির আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করেন।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচার ও ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে আজ সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, 'ভুক্তভোগী আজকে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এর আগেও অবতরণিকা উৎসবের ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যেহেতু ঘটনাটি পূর্বের ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট সেহেতু উক্ত কমিটিকে এই ঘটনাটি তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে সুপারিশসহ রিপোর্ট জমা দিতে বলেছি। এরপর আমরা বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিব।'
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মুশফিকুর রহমানকে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ মার্চ ব্যাচের অবতরণিকা উৎসব চলাকালে উৎসবের টি-শার্ট বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান। মুশফিক সবাইকে টি শার্টের সংখ্যা গুণে দিতে বলেন। কিন্তু ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী তাসিন ইসলাম রাহিন তাকে না বলেই এলোমেলোভাবে টি-শার্ট দিতে গেলে মুশফিক তাকে বাঁধা দেন৷ এ সময় তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে দুপুর ২টায় অনুষদ ভবনস্থ বাংলা মঞ্চে অনুষ্ঠান চলাকালে এই ঘটনার জের ধরে রাহিন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের রাব্বি ফকির ও ল'এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মোবারক হোসাইন আশিকের নেতৃত্বে প্রায় ৩৫/৪০ জন মুশফিকসহ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী রানা আহম্মেদ অভি ও সাব্বির রহমান শাওনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। ওইদিনই বিষয়টি নিয়ে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিলেন উক্ত ঘটনার ভুক্তভোগীরা। পরে উক্ত ঘটনায় আবার ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আবেদন জানিয়ে পাল্টা অভিযোগ করেন অভিযুক্তরা। উভয় পক্ষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২২ মার্চ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিলো। কিন্তু কমিটি গঠনের প্রায় দেড় মাস অতিবাহিত হলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি।
এমআই
