শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

আয় না থাকলেও ২০০০ টাকা কর দেওয়া কতটা নৈতিক

শনিবার, জুন ৩, ২০২৩
আয় না থাকলেও ২০০০ টাকা কর দেওয়া কতটা নৈতিক

সময় জার্নাল ডেস্ক:

রাজস্ব আদায় বাড়াতে একটি মরিয়া চেষ্টা—বেশ কিছু সেবা নিতে গেলে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দেওয়ার যে নিয়মটি এবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নতুন বাজেটে প্রস্তাব করেছেন, তাকে এককথায় এভাবেই দেখেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করার পর এই প্রস্তাবের নৈতিক দিকটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, প্রশ্ন উঠেছে এটি কতটা যৌক্তিক। কিংবা প্রচলিত আইন একে সমর্থন করে কি না।

বাজেটে বলা হয়েছে, ৪৪ ধরনের সেবা নিতে গেলে একজন টিআইএনধারীকে দুই হাজার টাকা ন্যূনতম আয়কর দিয়ে রিটার্ন দাখিল করে তার প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাঁর যদি আয়কর দেওয়ার মতো আয় না–ও থাকে, তারপরও তাঁকে দুই হাজার টাকা আয়কর পরিশোধ করতে হবে। যদিও করমুক্ত আয়ের সীমা বলে একটি বিধান রয়েছে এবং আগামী অর্থবছরের জন্য ওই সীমার ক্ষেত্রে আরও ছাড় দেওয়া হয়েছে। এখন একজন ব্যক্তির তিন লাখ টাকা আয়ের ওপর তাঁকে কোনো কর দিতে হয় না। আগামী বছরে এটা বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হয়েছে।

দেশের প্রায় ৮৮ লাখ মানুষ আছেন, যাঁদের একটি কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন রয়েছে। নানা কারণে তাঁরা এটি নিয়েছেন। এঁদের মধ্যে ৩০ লাখের কিছু বেশি মানুষ তাঁদের রিটার্ন জমা দেন। তাঁদের অনেকেই শূন্য–কর দেখিয়ে রিটার্ন জমা দেন, অর্থাৎ আয়কর দেওয়ার মতো আয় তাঁদের নেই। আশু বিপদে পড়বেন তাঁরা। এরপর ঝামেলায় পড়বেন তাঁরা, যাঁদের ৪৪টি সেবার কোনো একটি নেওয়ার প্রয়োজন হবে।

ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দেওয়ার প্রেক্ষাপট সম্ভবত তৈরি করা হয়েছিল গত বছরে বাজেট পেশ করার সময় থেকেই তখন বলা হয়েছিল, ৩৮টি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে ন্যূনতম করের বিষয়টি তখন ছিল না এবারের বাজেটে এই সংখ্যা আরও ৬টি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে সমস্যা হলো, বিষয়টি খুবই বিস্তৃত একজন মানুষকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে হলে তাঁকে কোনো না কোনোভাবে এই ৪৪ সেবার দ্বারস্থ হতে হবে সিটি করপোরেশন পৌর এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স করা, পাঁচ লাখ টাকার বেশি পোস্টাল সঞ্চয় হিসাব খোলা কিংবা সঞ্চয়পত্র কেনা, ব্যাংকে ১০ লাখ টাকার বেশি আমানত, জমিঅ্যাপার্টমেন্ট কেনাবেচা, সন্তানকে ইংলিশ মাধ্যম স্কুলে ভর্তি, মহানগর এলাকায় বিদ্যুসংযোগ, দুইতিন চাকার মোটরযানের নিবন্ধন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পণ্য সেবা বিক্রিকী নেই এর মধ্যে!

পৃথিবীতে যেসব দেশে করজিডিপি অনুপাত একেবারে নিচের দিকে, বাংলাদেশ তার একটি মানুষের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে তাই রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির কোনো বিকল্প হয়তো নেই কিন্তু সিপিডি মনে করছে, সরকার এটি করছে মরিয়া হয়ে কারণ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির ফলে সরকারকে আগামী অর্থবছরে বড় পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে হবে সিপিডির হিসাবেই দেখানো হয়েছে, আগামী বছরে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে হলে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত যতটা রাজস্ব আদায় হয়েছে, তার তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি আদায় করতে হবে

রাজস্ব আদায় বাড়ানোর প্রয়োজন হলেও সরকার কিন্তু বিশেষ সুবিধা দিয়েছে ধনীদের এবারের বাজেটে তাঁদের সম্পদের ওপর সারচার্জের ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী এত দিন তিন কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে সারচার্জ দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল আগামী বছরের জন্য এটা চার কোটি টাকা করা হয়েছে নৈতিক প্রশ্নটি সেই কারণেও উঠছে

আরেক দিকে দুই হাজার টাকার ন্যূনতম করের বিষয়টি সরকারের নীতির পরস্পরবিরোধীও বটে সমালোচকেরা যাকে বলছেন যৌক্তিক নয় সরকার একদিকে মানুষকে স্বস্তি দিতে যখন করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়েছে, তখন কর দেওয়ার ক্ষমতা নেই, এমন মানুষকে কর দিতে বাধ্য করছে করমুক্ত আয়ের একটি সীমা নির্ধারণ করে সরকারই স্বীকার করে নিয়েছে যে কিছু মানুষ আয়কর দেওয়ার মতো অর্থ আয় করে না আয়কর অধ্যাদেশের মাধ্যমেই সেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, অর্থা এর একটি আইনি দিক রয়েছে

সমস্যা হলো, নূন্যতম করের বোঝা এমন মানুষের কাঁধে চাপতে যাচ্ছে, যাঁরা এই মুহূর্তে বেশ খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অনেক ক্ষেত্রে লাগামছাড়া; বাড়িভাড়া, যানবাহনের খরচ, নানা পরিষেবার বিল, সন্তানের পড়াশোনার খরচসব মিলিয়ে তাঁদের কষ্ট সুতরাং চাপে থাকা মানুষের ওপর চাপ আরও বাড়বে

কিন্তু সরকার বিষয়টি আমলে নিচ্ছে বলে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে না বাজেটপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নটি এসেছেঅর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব গরিব মানুষের ওপর চাপ হয়ে দেখা দেবে কি না নিজে জবাব না দিয়ে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল দায়িত্ব দেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের ওপর তাঁর জবাব ছিল রকম, আগে দেখতে হবে এটা কাদের জন্য বাধ্যতামূলক এটা দরকার ট্রেড লাইসেন্সে, পিস্তলের লাইসেন্সে, সিটি করপোরেশন এলাকায় গাড়ি বাড়ি কিনতে বা কমিশন এজেন্টের জন্য সাধারণ মানুষের এসব সেবার প্রয়োজন নেই এই ধরনের সেবা যাঁরা নেন, তাঁদের জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দুই হাজার টাকা জমা দিয়ে উন্নয়নের অংশীদার হওয়া গর্বের বিষয় এটা তাঁদের জন্য বোঝা হওয়ার কথা নয়

অর্থা যৌক্তিকতা, নৈতিকতা কিংবা বৈষম্যের যে প্রশ্নই তোলা হোক না কেন, নীতিনির্ধারকেরা যে তাতে খুব একটা কান দেবেন, তা এখনো মনে হচ্ছে না

এস.এম


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল