বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

ফিলিস্তিনি গল্প

দ্য স্টোরি অফ দ্য ল্যান্ড

বুধবার, মে ১৯, ২০২১
দ্য স্টোরি অফ দ্য ল্যান্ড

মূল : সারাহ আলি
ভাষান্তর : মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা

আমি তার অশ্রুসিক্ত চোখের দিকে তাকালাম এবং সেখানে সুখের মতো কিছু একটার দেখা পেয়ে আমি হাসলাম। যে মানুষটাকে আমি সব সময় বাবা হিসেবে জেনে এসেছি, আজ তিনি ফিরে এসেছেন। 

আজ তাকে আর সেই অপরিচিত লোকটার মতো দেখাচ্ছে না, যাকে গত তিন বছর ধরে আমি পুরোপুরি চিনতে পারিনি। তাকে আর সেই ভুলোমনের স্থির মূর্তির মতো মনে হচ্ছে না, যিনি সব সময় দেয়ালের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন এবং বাড়ির কেউ যখন তাকে সম্বোধন করত, তখন অনাগ্রহের সাথে মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেন।
 
তিনি এখন এখানেই আছেন। তিনি এখানেই উপস্থিত আছেন। এবং আমি যখন আমার ভালো ফলাফল নিয়ে বড়াই করতে লাগলাম, তখন তিনি সত্যি সত্যিই সেটা শুনতে লাগলেন। 

তুরস্কের স্পন্সর করা একটা সংস্থার স্বাক্ষরিত এক টুকরো কাগজ এবং একটা ফোন কল আমার বাবাকে ফিরিয়ে এনেছে। আমি আবার তার চোখের দিকে তাকালাম। এবার আরও সাবধানে। এই ভয়ে যে, আমার প্রথম দেখা হয়তো ভুল ছিল। বাবার চোখে  সেই পরম সুখের দেখা পেয়ে আমার মুখ জুড়ে আবারও চওড়া একটা হাসি ছড়িয়ে পড়ল।

এখন যখন আমরা ভূমি দিবস উদযাপন করি, তখন আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, যারা ১৯৭৬ সালে নিজেদের জমির জন্য রুখে দাঁড়িয়েছিল। সে সময় ইসরায়েল ঘোষণা করেছিল, হাজার হাজার একর ফিলিস্তিনি জমি বাজেয়াপ্ত করা হবে। ঐ ঘোষণার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত মিছিল চলার সময় ছয় জন নিহত হয়েছিল। ৩০শে মার্চের এই দিবসটা আমাদের হৃদয়ে আমাদের জমির, আমার বাবার জমির স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।

কয়েক সপ্তাহ আগে আমরা একটা ফোন কল পেলাম। আমাদেরকে জানানো হলো, তুরস্কের অর্থায়নে পরিচালিত একটা পুনর্গঠন কর্মসূচির জন্য বাবার নাম নির্বাচিত হয়েছে। এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হচ্ছে, গাজার যেসব কৃষকের জমি ২০০৮ সালের ইসরায়েলি আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল, তাদেরকে গাছগুলো পুনরায় রোপণ করতে সাহায্য করা। তারা কৃষকদেরকে সব ধরণের সহজীকরণ উপকরণ সরবরাহ করবে। যেমন গাছ কাটার সরঞ্জাম, বেড়া, চারা, বীজ, সেচ ব্যবস্থা প্রভৃতি।

যেসব সংস্থা কৃষকদেরকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়, তাদের কাছে আবেদন করতে বাবা অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। জমির বিনিময়ে তিনি কীভাবে টাকা নেবেন? অন্যান্য সহায়তা কর্মসূচির মতো এই কর্মসূচি কৃষকদেরকে কোনো অর্থ দেয় না। এর পরিবর্তে এরা তাদেরকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে।

বাবার জন্ম যদিও কৃষক পরিবারে, কিন্তু তিনি সে পথে হাঁটেননি। তিনি পড়াশোনা করেছিলেন মিশরে, অর্থনীতি এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে এবং যৌবনের বেশিরভাগ সময় তিনি কাটিয়েছিলেন সাংবাদিকতা করে। মূলত তিনি কুয়েতের সংবাদপত্রগুলোতে কলামিস্ট হিসেবে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বিষয়ে লেখালেখি করতেন। 

অবশ্য তিনি যখন গাজায় ফিরে আসতেন, তখন তাকে বহু বছর আগে আমার দাদার রেখে যাওয়া জমিগুলো দেখাশোনা করতে হতো। এটা তার জন্য কঠিন কিছু ছিল না। ধীরে ধীরে এই জমি তার কাছে জীবিকার চেয়ে বরং অনেক বেশি আবেগের বিষয় হয়ে ওঠে। এটা ছিল অল্প কিছু বিষয়ের একটা, যাকে তিনি গুরুত্ব দিতেন, যা তাকে প্রতিদিন ব্যস্ত রাখত। দুনিয়ার বুকে এটাই ছিল তার স্বর্গ।

গাজায় তেইশ দিনের ইসরায়েলি আক্রমণের সময় আমরা নিয়মিত সংবাদ পাচ্ছিলাম যে, ইসরায়েলি বুলডোজার জমিগুলো গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা শুনছিলাম, হাজার হাজার গাছ ধ্বংস হয়ে গেছে, আমাদের চাচার গাছগুলো নষ্ট হয়ে গেছে, আমাদের নিজেদের গাছগুলোও শেষ হয়ে গেছে। আমরা শুনেছিলাম, পূর্বাঞ্চলীয় কৃষিজমির পুরো জেলা, শার্গা, নাই হয়ে গেছে। কিন্তু এগুলো ছিল গুজব — অন্তত বাবা সেরকমই বিশ্বাস করতে চেয়েছিলেন।
 
আমাদের সবার আশা ছিল, আমাদের জমিটা এখনও অক্ষত আছে, কেউ সেটাকে স্পর্শ করেনি। আমরা এই ধারণা আঁকড়ে ধরে ছিলাম যে, কেবল অন্যদের গাছই উপড়ে ফেলা হতে পারে। কিন্তু আমাদের সুন্দর, অপ্রতিদ্বন্দ্বী জয়তুন গাছগুলোকে অবশ্যই উপড়ানো হবে না। 

আমাদের বিশ্বাস ছিল, নিজেকে স্থানীয় গাজাবাসীর মতোই দেশপ্রেমিক হিসেবে প্রমাণ করার জন্য বাবার একমাত্র গর্বের বিষয় ছিল যে গাছগুলো, সেগুলোকে অবশ্যই উপড়ে ফেলা হবে না।

স্থানীয় গাজাবাসীদের অনেকেই বাবাকে এই বলে ভর্ৎসনা করত যে, তিনি "অবিবেচকের মতো কালো সোনার দেশ ছেড়ে" বাইরে চলে গিয়েছিলেন এবং এত বছর পর এখন আবার এখানে বসবাস করার জন্য ফিরে এসেছেন।
 
তাদের বিশ্বাস ছিল, কুয়েতের থাকার  সময় বাবা প্রতিদিন কুয়েতি তেলের পুলে সাঁতার কাটতেন। কিন্তু বাবা ব্যাপারটাকে দেখতেন সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে। তিনি সব সময় বিশ্বাস করতেন, এখানে, এই গাজাতেই আছে জাইত আল-মুকাদ্দাস, তথা পবিত্র তেলের ভূমি।

গাজার আকাশ আবার নীল হয়ে এসেছে। আক্রমণ শেষ হয়েছে — খবরে বলা হয়েছে আক্রমণ শেষ। বাবা সেখানে গেলেন। তিনি জমিগুলো দেখতে গেলেন। নিজের জয়তুন গাছগুলোর ব্যতিক্রমতার উপর বিশ্বাস স্থাপন করে তিনি সেগুলো দেখতে গেলেন। বুলডোজার অপারেটরের হৃদয়ের ছোট্ট সাদা জায়গাটার উপর বিশ্বাস স্থাপন করে তিনি সেগুলো দেখতে গেলেন। 

তার বিশ্বাস ছিল, বুলডোজার অপারেটর আমাদের জমির সৌন্দর্য দেখে না থেমে পারবে না। তার ভেতরের যে সহজাত শুভ সত্ত্বা তাকে এই জমি গুঁড়িয়ে দিতে নিষেধ করবে, সেটা সে না শুনে পারবে না। তিনি সেখানে গিয়েছিলেন মানুষের দয়ার উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। তিনি সেখানে গিয়েছিলেন আল্লাহ্‌র উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। 

আমার ভাই তার সাথে সেখানে গিয়েছিল। সে পরে আমাদেরকে বলেছিল, পুরো রাস্তা জুড়ে তাদের শুধু সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়া জমি চোখে পড়েছে। সেসব জমির উপর  বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া যে পরিমাণ মৃত গাছ পড়ে ছিল, সেগুলো দিয়ে পরিবারগুলোর বছরের পর বছরের জ্বালানী কাঠের চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। 

ভাইয়া বলেছিল, সেখানে পৌঁছে মানুষকে কাঁদতে দেখে বাবাও কাঁদতে শুরু করে দিয়েছিলেন। তারা কেঁদে যাচ্ছিলেন। তারা পতিত, দুর্বল এবং পরাজিত গাছগুলো দেখছিলেন আর কেঁদে যাচ্ছিলেন। এই জায়গাতেই ছিল তাদের স্বর্গ।

আমাদের জমির দৃশ্যটা হতবাক করার মতো কিছু ছিল না। সহজ কথায় বলতে গেলে আমাদের গাছগুলো অন্যদের তুলনায় ব্যতিক্রম ছিল না। আমাদের গাছগুলোও শেষ হয়ে গিয়েছিল। দুর্দশা এবং অস্বীকারের একটা মিশ্রণ জায়গাটাকে গ্রাস করে নিয়েছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম, বাবার বিশ্বাসটুকু চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। পৃথিবীটাকে কুৎসিত একটা স্থান বলে মনে হচ্ছিল।

আমাদের গাছগুলোর মধ্যে কেবল একটা গাছ তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। গাছটা পরবর্তীতে পুরো এলাকার আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল। আক্রমণের মাত্র এক সপ্তাহ আগেই বাবা ভাইয়াকে বলেছিলেন, গাছটা কীরকম বাঁকা হয়ে যাচ্ছে, এবং কীভাবে দ্রুত তাদের এ থেকে নিস্তার পাওয়া উচিত। 

তারা গাছটা কেটে ফেলার পরিকল্পনা করছিলেন, এবং পরিহাসমূলকভাবে এটাই ছিল একমাত্র গাছ, যা ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নষ্ট করেনি। একঘেয়েমির কারণে, নাকি করুণার কারণে, আমি ঠিক বলতে পারি না; কিন্তু গাছটা তখনও দাঁড়িয়ে ছিল। পরে যখনই আমার কাজিনরা এ ব্যাপারে বাবার মন খারাপ ভাব দূর করতে চাইত, তারা পুরো বিষয়টা নিয়ে মজা করত। 

"সৈন্যরা কীভাবে জানত যে আপনি এই গাছটাই কেটে ফেলার পরিকল্পনা করেছিলেন, এবং সেজন্য তারা নিজেরাই এটা না কেটে চলে গিয়েছিল?" আমার কাজিনরা মন্তব্য করত। 

তাদের কথা শুনে সবাই হাসতে শুরু করত। কিন্তু বাবা হাসতেন না। তার জমি এবং জয়তুনের বাগান তার কাছে হাসির বিষয় ছিল না।

সেদিন বাবা এবং ভাইয়া যখন বাড়িতে ফিরে এলো, তখন ভাইয়া আমাদেরকে বলতে শুরু করল তারা কী দেখেছিল। সে আমাদেরকে জানালো, গাছগুলো ছিল সমূলে উৎপাটিত - "আল-শাজার তাজার্‌রাফ," সে বারবার উচ্চারণ করছিল। 

বাবা তার ঘরে বসেছিলেন। কাঁদছিলেন। পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে বাবার একটা দৈনন্দিন সময়সূচি তৈরি হয়ে গিয়েছিল: সকালে তিনি নামাজ পড়তেন এবং কুরআন তিলাওয়াত করতেন। আর রাতের বেলা তিনি কাঁদতেন।

ইসরায়েলি আগ্রাসনের সময়ে বা তার ঠিক পরে জমি, ঘরবাড়ি কিংবা আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির কথা বললে সেটাকে খুব স্বার্থপর এবং অন্যদের প্রতি উদাসীনের মতো শোনায়। যখন মানুষ মারা যেতে থাকে, তখন মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া সুন্দর বাড়িটা নিয়ে কথা বলা যায় না। 

যখন মানুষ তাদের হাত-পা হারাতে থাকে, সারা জীবনের জন্য অক্ষম হয়ে যেতে থাকে, তখন বিলাসবহুল গাড়িটার কথা বলা যায় না, যে গাড়িটাকে হয়তো একসময় এলাকার মাঝারি মানের রাস্তার মোড়ে ফুলদানির মতো দেখাতো, কিন্তু যা এখন ধূসর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। 

যখন কোনো মা তার বিদায় না দিতে পারা সন্তানকে কবর দিতে থাকে, তখন জমির কথা কিংবা নির্দয়ভাবে উপড়ে ফেলে গাছের কথা বলা যায় না। 

যাদের কেউ মারা যায়, বা অঙ্গহানি ঘটে, তারাবি শুধু কথা বলে। তারা কাঁদে। শোক করে। অন্যরা শুধু শুনে যায়। তাদের তুচ্ছ, ক্ষুদ্র দুঃখের স্মৃতির জন্য তারা নীরবে কষ্ট পেতে থাকে। এবং সম্ভবত এ কারণেই বাবার দুঃখের উপর আরও একরাশ মর্মবেদনা এসে জড়ো হয়েছিল।

আমাদের যে গাছগুলো উপড়ে ফেলা হয়েছিল, সেগুলো সম্পর্কে, বিশেষ করে সেগুলোর সংখ্যা এবং বয়স সম্পর্কে সঠিক তথ্য  জানার জন্য আমি সম্প্রতি বাবার কাছে গিয়েছিলাম।

"কেন এটা জিজ্ঞেস করছ তুমি? তুমি কি ঐ দাতব্য সংস্থাগুলোতে আবেদন করছ, যেগুলো মানুষকে গাছ লাগাতে সাহায্য না করে উল্টো অল্প কিছু টাকা আর এক ব্যাগ ময়দা ধরিয়ে দিতে চায়? তাদের কাছে আবেদন করছ? তাদের সাহায্য আমাদের দরকার নাই! পুনর্নির্মাণ কর্মসূচির যে ছেলেটার সাথে আমার দেখা হয়েছিল, সে গত সপ্তায় ফোন করেছে। তারা ইতোমধ্যেই শ্রমিক এবং কৃষক পাঠিয়ে দিয়েছে কাজ শুরু করার জন্য। তারপরেও কি তুমি দাতব্য সংস্থায় আবেদন করতে চাও?"

“না বাবা! আমি শুধু আমার ব্লগের জন্য একটা লেখা লিখছি।"

“ব্লগ? আচ্ছা, যাই হোক সেটা!"

“তো? কয়টা গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছিল? ১৮০টা জয়তুন গাছ মনে হয়, না? আর ...?"

"১৮৯টা জয়তুন গাছ। ১৬০টা লেবু গাছ। ১৪টা পেয়ারা গাছ … ” তিনি ক্রুদ্ধস্বরে কথা বলছিলেন। আমি সঠিক সংখ্যা মনে রাখতে না পারায় তিনি রেগে গিয়েছিলেন।

আমি বিব্রত হয়ে মাথা নিচু করে ভাবতে লাগলাম, কেন আমি এই কাজটা করছি। আমার চিন্তা বাধা পেল যখন তিনি বলে উঠলেন, "তুমি যেটা করছ, পরেরবার যখন এরকম কিছু করার সিদ্ধান্ত নিবে, তখন সঠিক সংখ্যা মনে রাখার চেষ্টা করবে!"

আমি কোনো উত্তর দিলাম না।

"আমার কথা শুনেছ তুমি? মোট ১৮৯টা জয়তুন গাছ ছিল। ১৮০টা না। ১৮১টা না। ১৮৮টাও না। ১৮৯টা জয়তুন গাছ।"

কয়েক মিনিট পর তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। তীব্র অপরাধবোধ ছাড়া আমি আর কিছু অনুভব করতে পারছিলাম না।

যে ভূমিকে ইসরায়েলিরা ঈশ্বর প্রদত্ত ভূমি বলে দাবি করে, সেই ভূমিতে একজন ইসরায়েলি সৈন্য কীভাবে ১৮৯টা জয়তুন গাছ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিতে পারে,  এটা আমি কোনোভাবেই বুঝতে পারি না। সে কি এই সম্ভাবনার কথা ভাবেনি যে, ঈশ্বর এতে ক্রুদ্ধ হতে পারেন? সে কি এটা বুঝতে পারেনি যে, সে গাছের উপর দিয়ে বুলডোজার চালিয়ে দিচ্ছে?

যদি কখনও ফিলিস্তিনি বুলডোজার আবিষ্কৃত হতো (হাহা, আমি জানি!) এবং যদি আমাকে হাইফার একটা বাগানে ঢোকার সুযোগ দেওয়া হতো, তাহলেও আমি কখনোই কোনো ইসরায়েলির রোপণ করা গাছ উপড়ে ফেলতে পারতাম না। কোনো ফিলিস্তিনিই পারত না। ফিলিস্তিনিদের কাছে গাছ মানেই পবিত্র। এবং যে জমিতে গাছ লাগানো থাকে, সেই জমিও পবিত্র।

এবং যখন আমি গাজার কথা বলি, তখন আমার মনে পড়ে, গাজা কেবল ফিলিস্তিনের ক্ষুদ্র একটা অংশ। আমার মনে পড়ে ফিলিস্তিন গাজার চেয়ে অনেক বড়। 

ফিলিস্তিন হচ্ছে পশ্চিম তীর; ফিলিস্তিন হচ্ছে রামাল্লা; ফিলিস্তিন হচ্ছে নাবলুস; ফিলিস্তিন হচ্ছে জেনিন; ফিলিস্তিন হচ্ছে তুলকর্ম; ফিলিস্তিন হচ্ছে বাইত লাহাম; এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ফিলিস্তিন হচ্ছে ইয়াফা, এবং হাইফা, এবং আক্কা, এবং ফিলিস্তিন হচ্ছে সেই শহরগুলো, যেগুলোর নাম ইসরায়েল আমাদেরকে ভুলিয়ে দিতে চায়।

আজ আমি বুঝতে পারি, ঐ ফোন কল আমার বাবাকে ফিরিয়ে আনেনি। কিংবা ঐ প্রতিষ্ঠানের স্বাক্ষর করা কাগজটাও বাবাকে ফিরিয়ে আনেনি। তাকে ফিরিয়ে এনেছে তার জমিগুলোর পুনরজ্জীবিত হয়ে ওঠা স্মৃতি। 

তাকে ফিরিয়ে এনেছে জয়তুন গাছগুলোর স্মৃতি, যেগুলো প্রতিবার যখন তিনি তাদের নিচে বসতেন, সূর্যের জ্বলন্ত রশ্মিকে ফাঁকি দিয়ে তাদের ছায়া উপভোগ করতেন, তখন তাকে এক ধরনের নিরাপত্তার অনুভূতি দিত। 

তাকে ফিরিয়ে এনেছে সোনালি তেলের স্মৃতি। শ্রেষ্ঠ এবং বিশুদ্ধতম সেই তেল জেরিক্যানে ঢেলে এরপর মূল্যবান উপহার হিসেবে পরিবার এবং বন্ধুদের হাতে তুলে দেওয়ার স্মৃতি। 

তাকে ফিরিয়ে এনেছে দীর্ঘ বছর ধরে জমি লালন করার, তার সাথে একাত্বতার এবং সেখান থেকে মানুষকে দান করার বছরগুলোর স্মৃতি।

আমার বাবার সাথে তার জমির একটা অটুট বন্ধন আছে। প্রতিটা ফিলিস্তিনির সাথে তাদের ভূখণ্ডের একটা অটুট বন্ধন আছে। ক্রমাগত চারা উপড়ে এবং গাছ কেটে ফেলে ইসরায়েল এই বন্ধনটা ভেঙে ফেলতে চায় এবং ফিলিস্তিনিদের উপর তাদের নিরাশার শাসন চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করে। আর বারবার গাছ রোপণ করার মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনিরা ক্রমাগত ইসরায়েলের এই শাসনকে প্রত্যাখ্যান করে যাচ্ছে। 

বাবা বলেন, "আমার জমি, আমার আইন।"

সময় জার্নাল/এসএ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল