সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

ইন্টারনেট আসক্তি, ক্যারিয়ার নির্বাচনে বিভ্রান্তি: সমাধান যে পথে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩
ইন্টারনেট আসক্তি, ক্যারিয়ার নির্বাচনে বিভ্রান্তি: সমাধান যে পথে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

সময় জার্নাল প্রতিবেদক:

প্রযুক্তির আসক্তি খারাপ নয় ,যদি তার সদ্ব্যবহার করা হয়। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কে কাজে লাগাতে হবে। ইনোভেটিভ কাজ কে এগিয়ে নিতে প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করতে হবে। তরুণদের বিপুল সম্ভাবনা কে কাজে লাগাতে মাদকাসক্ত রোধ করতে হবে।

আজ ২৯ সেপ্টেম্বর(২০২৩) শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে "দি বাংলাদেশ এন্টি ড্রাগ ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত “আসক্তির ভয়াবহতা ও ক্যারিয়ারে বিভ্রান্তি: সমাধান যে পথে” শীর্ষক দিনব্যাপী এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের  সহযোগিতায়  অনুষ্ঠানটির মিডিয়া পার্টনার ছিলো সময় জার্নাল। ইভেন্ট পার্টনার ছিলো 'এফবি'। সহযোগী হিসেবে ছিলো ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকোনমিক্স, পোর্টল্যান্ড গ্রুপ, যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল এগ্রি কেয়ার, পেট্রোবাংলা, বিসিএস কনফিডেন্স, ইউ এসবাংলা, ইউনিভার্সেল মেডিকেল ও ইকেম।  

উদ্বোধনী সেশনে সভাপতিত্ব করেন দ্যা বাংলাদেশ এন্টি ড্রাগ ফেডারেশনের জেনারেল  সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম রলি। পুরো কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক শিরিনা খাতুন বিথি এবং কবি ও সাংবাদিক ইমরান মাহফুজ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর কিউরেটর এবং  সাবেক শিক্ষা ও আইসিটি সচিব নজরুল ইসলাম খান (এনআই খান),  এডভোকেট শাহ মনজুর রহমান। 

সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের কে চিন্তার বিষয় কে ইতিবাচক দিকে নিয়ে যেতে হবে। আমরা পশ্চিমা বিশ্বের মানুষ থেকে খারাপ জিনিস গুলো শিখি। তাদের ভালো জিনিস গুলো শিখি না।তারা সিদ্ধ খাবার খায়। এটা তাদের ভালো দিক। ল্যাটোস খাবারের কারণেও আসক্তি হয়।তাই খাবার নির্বাচনেও সতর্ক থাকতে হবে। আগে বড় পরিবার ছিল। এখন পরিবার ছোট হয়ে গেছে। আমি আগে ম্যাজিস্ট্রেট ছিলাম। তখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা পেছনে থাকতো। নির্বাচনের জন্য ব্যবসায়ীদের টাকা নিয়ে থাকে অনেকেই। ফলে এখন ব্যবসায়ীরা অনুষ্ঠানের সামনে থাকে। পারিবারিক শিক্ষা, চিন্তার শক্তি মানুষ কে নিয়ন্ত্রণ করে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর কর্মশালাটি চারটি সেশনে পরিচালিত হয়। সেগুলো হচ্ছে:
১) মাদকে কেন আসক্ত হয় এবং পরিত্রাণের উপায়,
২) ডোপ টেস্ট কি, কেন জরুরী,
৩)ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং এবং ক্যারিয়ার গাইড লাইন এবং 
৪)ইন্টারনেট আসক্তি এবং রক্ষার উপায়।


মাদকে কেন আসক্ত হয় এই বিষয়, ইন্টারনেট আসক্তি এবং রক্ষার উপায় এ বিষয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও মানসের প্রতিষ্ঠাতা বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরুপরতন চৌধুরী বলেন, 'বর্তমান সময়ে চারিদিকে ভয়াবহ আকারে মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। যে বয়সে তরুণদের উদ্যমী হয়ে সৃষ্টিশীল কাজ করার কথা ছিল, সে বয়সে তারা ইয়াবা সপবন করে। কিন্তু প্রত্যেক তরুণকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কারণ মাদক চুল পড়া, চোখে ছানি পড়া, মুখে ও গলায় ক্যান্সার, পরিপাকতন্ত্রে ক্যান্সার, পুরুষের যৌব ক্ষমতা হ্রাসসহ মানবদেহের সকল অঙ্গের ক্ষতিসাধন করে। অনেকের মাঝে ভুল ধারণা রয়েছে ই-সিগরেট তেমন ক্ষতিকর নয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে,এটিও সমান ক্ষতিকর।'

'কোন বয়সে বিভ্রান্তি: কোন বয়সে লক্ষ নির্ধারণ করতে হবে' বিষয়ের উপর বক্তব্যে রিডিং ক্লাব ট্রাস্টের সভাপতি আরিফ খান বলেন, পৃথিবীর সকল মানুষ অনন্য।  ফলে প্রত্যেককে নিজের উপযুক্ত বিষয় বাছাই করতে হবে। আমাদের সমস্যা হলো, মানুষের থেকে অণুপ্রেরণা নেয়ার বদলে তার মতো হতে চাই। পৃথিবীর সফল হওয়ার একটি গোপন কথা হলো পরিশ্রম মেধার সমার্থক।  সমাজ 'মেধা' এবং 'পরিশ্রম'  শব্দকে আলাদা করে দিয়েছে। অথচ সৃষ্টিকর্তা ন্যায়পরায়ণ এবং আমার প্রাপ্য মেধা তিনি আমাদেরকে দিয়েছেন। ফলে পরিশ্রমই কেবল মানুষকে আলাদা করে দেয়। 

 এ বিষয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক কাজল রশীদ শাহীন বলেন,  আমাদের মাঝে মৌলিক প্রশ্ন উৎপাদন করার মানসিকতা থাকতে হবে। এই প্রশ্ন থেকেই আমাদের মাঝে চিন্তার জন্ম হবে। মানুষের কাজ হলো এই চিন্তাকে ইতিবাচক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। মোবাইল ফোনকে আমরা বর্তমনাে খুবই নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করছি। অথচ চাইলে এর সর্বোচ্চ সার্থক ব্যবহার সম্ভব হতো। 

আরও বক্তব্য রাখেন বিসিএস কোচিং কনফিডেন্স এর পরিচালক লায়ন তাসলিমা গিয়াছ, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক  মুজিবুর রহমান , সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক ,রিডিং ক্লাবের সভাপতি এবং আইনজীবী এডভোকেট  আরিফ খান , সাংবাদিক ও গবেষক কাজল রশীদ শাহীন , অনলাইন শিক্ষক ও প্রশিক্ষক  কে এম হাসান রিপন , জাতীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ বোর্ড এর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা: অরূপ রতন চৌধুরী , সংগঠনের উপদেষ্টা খবির উদ্দিন আহমেদ, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের  অতিরিক্ত মহাপরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী ,জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মশিউর রহমান প্রমুখ।
 
সমাপনী অনুষ্ঠানে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, "মাদকাসক্ত ও মাদক সেবন শুধু নেশা নয়, এটা একটা রোগ। প্রেম ঘটিত কারণ, একাকিত্ব, হতাশার কারণে মাদকাসক্ত হয়ে যায়। মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বিকল্প হিসেবে বিনোদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশের ৬৪ জেলায় মাদকসেবীদের চিকিৎসার সুযোগের আছে।কেউ মাদকাসক্ত হলে বিন পয়সায় চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।

তিনি আরও বলেন, "মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জনগণ কে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছে। সকলের কাছে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য মসজিদের ইমাম থেকে শুরু সমাজের সর্বস্তরের মানুষ কে সম্পৃক্ত করতে হবে।
সমাজ ও দেশ থেকে মাদক দ্রব্য নির্মূল করে পরিবার কে মাদক মুক্ত করবো। আমরা মাদক নিজে সেবন করবো না এবং অপরকে সেবন করতে দিবো না।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মশিউর রহমান বলেন, আমরা শুধু মাদকাসক্ত নয়, ক্ষমতার আসক্ত,বিভিন্ন নেশায় আসক্ত। প্রযুক্তির আসক্তি খারাপ নয়,যদি তার সদ্ব্যবহার করা হয়। যে দেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে,সে দেশ মাদকের ভয়াবহতা রুখে দিতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন," পৃথিবীর বড় বড় ডাক্তার, উকিলদের ডিগ্রি গুলো ইংল্যান্ডের। এখন দেশ থেকে যারা বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করতে বিদেশে উন্নত জায়গায় যায়, তারা আর ফেরত আসে না। এখন নিজেকে আন্তর্জাতিক মানের তৈরি করার জন্য উপাদান গুলো আপনার হাতের মুঠোয়।  আগে কথা বলার জন্য নীলক্ষেত অথবা উত্তরায় কল বুকিং দিয়ে বসে থাকতে হতো। আগে গবেষণার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে লাইব্রেরীর বই যথেষ্ট ছিল না। বায়তুল মোকাররম, জাদুঘরে যেতে হতো তথ্য সংগ্রহ করতে। এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবকিছুই  আপনার হাতে।

অনুষ্ঠানে সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।অনুষ্ঠানে প্রতিটি সেশনের গান, কবিতা আবৃত্তি এবং কুইজের আয়োজন করা হয়। বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।

সার্টিফিকেট বিতরণের মাধ্যমে দিনব্যাপী আয়োজনের সমাপ্তি হয়।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল