শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

অবস্থাদৃষ্টে , কান্নাকাটি করা ছাড়া আর কোন কিছু করার আছে বলে মনে হয় না

বৃহস্পতিবার, মে ২০, ২০২১
অবস্থাদৃষ্টে , কান্নাকাটি করা ছাড়া আর কোন কিছু করার আছে বলে মনে হয় না

আব্দুন নূর তুষার : পত্রিকা খুলে রুচিহীণ হলুদ ও লাল রং এর একটি বিজ্ঞাপন চোখে পড়লো।

১. সেখানে দাবী করা হয়েছে যে মন্ত্রনালয়ে একটি সভাশেষে যখন একান্ত সচিব, সচিবের কক্ষে তখন সেই একান্ত সচিবের কক্ষে এক মহিলা ঢুকে পড়েন।

যে কক্ষের ভেতরে ”স্টেট সিক্রেট” থাকে সেই কক্ষ এতই অরক্ষিত যে যে কেউ সেখানে ঢুকে পড়েন। 
সেখানে ”স্টেট সিক্রেট” এর ফাইল অরক্ষিত অবস্থায় খোলা পড়ে থাকে যাতে যে কেউ তার ছবি তুলতে পারেন।
কক্ষে কেউ ছিল না? তাহলে কনস্টেবল মিজান কোথা থেকে এলো? তার কর্তব্যস্থল কোথায়? দায়িত্ব কি ছিলো? কক্ষের সামনে পাহারা দেয়া?
নাকি সে দরজার চাবির ফুটো দিয়ে দেখছিলো?

২. তিনি প্রথমে তার নাম সুলতানা বলেছিলেন। তারপর তার আইডি দেখে তারা নিশ্চিত হন যে এই মহিলার নাম রোজিনা ইসলাম।
তাহলে ওসমানি সাহেবের থানায় দেয়া চিঠিতে তাকে জনৈক রোজিনা বলার মানে কি? তারা তো নিশ্চিত জানতেন তিনি প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা।

৩. তার মোবাইলটি চেয়ে নেয়া হয় ও তার পাসওয়ার্ড নেয়া হয়।
মোবাইল চাইলো আর দিয়ে দিলো? পাসওয়ার্ডও দিয়ে দিলো। এত রাষ্ট্রীয় গোপনীয় দলিল সহ মোবাইলের পাসওয়ার্ড উনি আপোসে দিয়ে দিলো?
কোন প্রক্রিয়ায় এই পাসওয়ার্ড নেয়া হতে পারে সেটার বর্ণনা নাই। তবে মানুষ কি এতই উজবুক যে এটা বুঝতে পারে না , যে মোবাইলে তার গোপন নথি আছে তার পাসওয়ার্ড তিনি সহজে দেবেন না?
ভিডিওতে পরিস্কার দেখা যায় তিনি হাত দিয়ে ভিডিও করতে না করছেন ও বারবার মোবাইলটা ফেরত চাইছেন। 

৪. মহিলা কর্মকর্তার মাধ্যমে তার দেহ তল্লাশী করা হয়েছে। 
সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে যে এই মহিলা কর্মকর্তাটি কে? দেহতল্লাশী করার জন্য অনুমতি নিতে হয় এবং অনুমতি না দিলে কেবল মাত্র আইন শৃংখলা বাহিনীর কোন মহিলা কর্মকর্তা দিয়েই সন্দেহ বশত তার দেহ তল্লাশী করা যেতে পারে। এটাই সভ্য দেশের নিয়ম। আমাদের দেশে কি নিয়ম সেটা বলা মুশকিল।
এই দেহতল্লাশী কে করেছিলো?

৫. শরীরের মধ্যে ফাইল ও কাগজপত্র ছিলো। 
উনি ফাইল চুরি করে চলে আসছিলেন? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? ”স্টেট সিক্রেট” এর ফাইল চুরি হলে কেউ সেটা বুঝতোই না? এমনভাবে অবহেলায় অরক্ষিত অবস্থায় ”স্টেট সিক্রেট” পড়ে থাকে যে ফাইল সহ মেরে দেয়া যায়?  
যতো ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে তার কোনটিতে কিন্তু কোন ফাইল বা কাগজ নাই।

৬. করোনা ভ্যাকসিনের ক্রয় চুক্তি সংক্রান্ত কাগজ প্রকাশিত হলে করোনা ভ্যাকসিন পাওয়া সমস্যা হয়ে যাবে? 
ক্রয় চুক্তি ও ভ্যাকসিনের টেকনিকাল বিষয়াদি দুটো দুই জিনিস। ক্রয় চুক্তি প্রকাশিত হলে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতো পারার বিষয়টি অতিশয়োক্তি বলে মনে হয়। 

এরি মধ্যে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে যে ভ্যাকসিনের কারিগরী বিষয়াদি ও কিছু তথ্য প্রকাশ নিয়ে অপকাশ্যতার চুক্তি বা নন ডিসক্লোজার চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা।

মনে রাখতে হবে যে অপ্রকাশ্যতার চুক্তিটি নিজে কখনো অপ্রকাশ্য নয়। বরং সেই চুক্তিতে উল্লিখিত বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ তথ্যাদি প্রকাশ করা যাবে না এটাই চুক্তি। জনগণের জানার অধিকার আছে কোন ধরনের তথ্যাদি প্রকাশ করা যাবে না বলে সেখানে চুক্তি করা হয়েছে।

যেমন ভ্যাক্সিনের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার তথ্য প্রকাশ করা যাবে না এমন কোন বিষয় যদি সেখানে থাকে সেটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই নন ডিসক্লোজারে কি কি প্রকাশ করা যাবে না বলে খত দেয়া হয়েছে সেটা জানার অধিকার অবশ্যই মানুষের আছে।

৭. সময়ক্ষেপনের জন্য যে অজুহাত দেয়া হয়েছে সেটা বড়ই শিশুসুলভ। 
রোজিনা এত শত শত পৃষ্ঠা চুরি করেছিলেন যে সেটা বুঝতে তাদের ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লেগেছে? শাহবাগে খবর দিতে এত সময় লেগেছে?

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি রক্ষা করা যদি এতই বড় দায়িত্ব হয়, তাহলে উন্মুক্ত স্থানে এগুলো ফেলে রাখা ও কক্ষে কেউ না থাকা অবস্থায় একজন অপরিচিত মানুষকে সেখানে প্রবেশ করানোর সময় এই দায়িত্ববোধ কোথায় ‍ছিলো? পরিচয় না জেনেই তাকে সেখানে প্রবেশ করতে দিলো কে?

৮. তাকে সসম্মানে কক্ষে রাখা হয়েছিল? 
অভিযুক্তের শরীরে হাত দিয়ে চাপাচাপি করতে জনৈক হিজাবঢাকা মহিলাকে ভিডিওতে দেখা গেছে। তাকে সেখানে কিভাবে সম্বোধন করা হচ্ছে সেই ভয়েস টোন ও শোনা গেছে। 
এটাই কি সম্মানের নমুনা?

৯. তিনি নিজে নিজে মাটিতে শুয়ে পড়েছিলেন? যিনি নিজে নিজে মাটিতে ময়লায় শুয়ে পড়লেন তিনি আপোসে মোবাইল দিয়ে দিলেন আর পাসওয়ার্ডও?
তাকে ভিডিও করছিলো কে? পুরো সময়টার বিভিন্ন অংশের যে ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো কি তার অনুমতি নিয়ে করা হয়েছে? 

১০. তাকে কাজী জেবুন্নেসা বেগম সহ কয়েকজন জিজ্ঞাসাবাদ করে পরিচয় জেনেছেন। এটা বলা হয়েছে।
বাকি কয়েকজন কারা?

১১. তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের মন্ত্রনালয়ের জড়িত কেউ থাকলে তাকে খুঁজে বের করবে বলেছে।
এই পুরো বিজ্ঞাপনে এটাই একমাত্র যৌক্তিক কথা। 
এ কারণেই প্রশ্ন জাগে।

এই মন্ত্রনালয় ভুয়া এন ৯৫ মাস্ক সরবরাহকারী কোম্পানীকে কালোতালিকাভূক্ত করেছে ? শাহেদ ও আরিফ-সাব্রিনার পৃষ্ঠপোষকতাকারী কারা , সে বিষয়ে তদন্ত করেছে?
করলে সেই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে?
দোষী কাউকে পাওয়া গেছে? 
এখানেই কবি নীরব।
এবার একটু পত্রিকাগুলোর প্রতি বলা যাক?

১. অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ ছাড়া , যাদের বিরুদ্ধে অশিষ্ট আচরণের অভিযোগ আছে সেই মন্ত্রনালয়ের একটি বিজ্ঞাপন পয়সা দিলো বলেই সকলে ছেপে দিলেন?

২. এই বিজ্ঞাপন যারা দিয়েছেন তারা আদালতে অভিযোগ করেছেন। এই ব্যাখ্যা তারা আদালতে দেবেন। তাদের এই ব্যাখ্যা এভাবে ছেপে দিয়ে জনমত প্রভাবিত করাতে পত্রিকাগুলি সহায়তা করলো কি কারণে? 
নিজেদের প্রতিষ্ঠানের কর্মরত সাংবাদিকদের পেছনে প্রতিষ্ঠানের কি কোন ধরনের সমর্থনসূচক অবস্থান নাই?

৩. সংবাদ সম্মেলন বয়কট করে সেই সম্মেলনে যা বলা হতো বলে মনে হয়, সেটাকে টাকা নিয়ে ছেপে দিয়ে পত্রিকাগুলি কি মেসেজ দিলো?
যে সংবাদ বয়কট হবে সেটা টাকা দিলে ছাপা হবে?

প্রিয় কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের কান্নার ছবি দেখে মায়া হয়েছিল। এখন মনে হচ্ছে এই কান্না তিনি অব্যাহত রাখতে পারেন। সহসা এটা বন্ধ না করে মাঝে মাঝেই কান্নাকাটি করার অভ্যাস জারী রাখাই ভালো।
কারণ অবস্থাদৃষ্টে , কান্নাকাটি করা ছাড়া আর কোন কিছু করার আছে বলে মনে হয় না। 

বি:দ্র: স্টেট সিক্রেট আছে এমন ফাইল এর ছবি দেখেছি জেমস বন্ড ছবিতে। সেখানে ফাইলের ওপর লেখা থাকে টপ সিক্রেট। ফর ইয়োর 
আইজ অনলি। 
আমাদের ফাইলের ওপর কি লেখা থাকে? আদৌ কি কিছু লেখা থাকে?

লেখক : চিকিৎসক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।
যেটা দেখে বুঝবো কোনটা বাজার ফর্দ আর কোনটা ”স্টেট সিক্রেট?”


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল