শনিবার, ০৪ মে ২০২৪

অধ্যাপক পারভজের অর্থনীতির বিশ্লেষণধর্মী গ্রন্থ 'গরীব বান্ধব বাজেট'

রোববার, এপ্রিল ২১, ২০২৪
অধ্যাপক পারভজের অর্থনীতির বিশ্লেষণধর্মী গ্রন্থ 'গরীব বান্ধব বাজেট'

মুহাম্মদ মুসা খান:

প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ, সাম্প্রতিক সময়ে টেলিভিশনের একজন পরিচিত মুখ। তিনি টকশোতে রাজনীতি-অর্থনীতি- ব্যাংকিং সেক্টর-সব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়ে দর্শকদের স্পৃহা পূরণ করে যাচ্ছেন। তিনি তিন দশকের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে শিক্ষকতায় যুক্ত রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি ‘রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ’ হিসেবেও  নিজেকে পরিচিত করতে পেরেছেন। করোনা সংকটে ও বর্তমানে দরিদ্র মানুষের প্রতি তাঁর সহানুভূতি ও সহযোগিতা-,তাঁকে ‘গরীবের অর্থনীতিবিদ’ হিসেবে পরিচিতি দান করেছে। ‘গরীব বান্ধব বাজেট’- তাঁর তৃতীয় গ্রন্থ। ইতোপূর্বে তিনি ‘'সুষম সমাজ’’ ও নামে আরও দুটি গ্রন্থ প্রকাশ করে সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ‘গরীব বান্ধব বাজেট’ গ্রন্থটি পড়ে মনে হয়েছে- এই গ্রন্থ  অর্থনীতির ব্যতিক্রমধর্মী এবং সময়োপযোগী গ্রন্থ । ‘গরীব বান্ধব বাজেট’  গ্রন্থটি মোট ১১টি অধ্যায়ে বিভক্ত করে তিনি ভিন্ন বিষয় সন্নিবেশ করেছেন। তিনি দেশ-বিদেশের  স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদদের চিন্তা-ভাবনা-মন্তব্য এই বইতে তুলে এনেছেন। যা পাঠকদের জানার আগ্রহকে প্রশমিত করবে। 

 ‘চিন্তা ও উপলব্ধি’ শিরোনামের প্রথম অধ্যায়ে তিনি গরীবের ভাগ্য, বাজেট নিয়ে গরীবের ভাবনা, বাজেটে গরিবের ভাগ্য বদল হয় না - ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল  লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, কিন্তু সমাজ থেকে বৈষম্য যায়নি। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম ছিল পাকিস্তানের  ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন ২২ হাজার পরিবারের  সাথে ১৭ কোটি মানুষের বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে ‘’। তিনি প্রশ্ন তুলেছে, “সর্বসাধারণের পরিশ্রমের টাকা দিয়ে বিভিন্ন খাত যেমন-স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ভর্তুকি, প্রণোদনা, বৈদেশিক ঋণ  ইত্যাদি খরচ মেটানো হচ্ছে। তার বিপরীতে দেশের ওই গরিব মানুষগুলোর  প্রাপ্তির হিস্যা কতটুকু?“ তিনি বলেছেন, ‘দেশের দরিদ্র মানুষ এবং যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে -তারা ঘোষিত বাজেটে কি পেয়ে থাকে! তিনি  বলেন, ‘বাজেট নিয়ে আমি গরীবের ভাবনা জানতে চেয়েছি।

 কিন্তু তাঁরা বলেছেন, বাজেট নিয়ে তাঁদের কোন চিন্তা নেই’ । একজন রিক্সাওয়ালা বলেছেন, ‘আমিতো রিক্সা নিয়ে ফ্লাইওভারে উঠতে পারবো না বা মেট্রোরেলে  চড়ার শখ  পূরণ হবে না’। মূলত তাঁরা চায় তিনবেলা মোটা চালের ভাত আর রাতে মাথা গোঁজার ঠাঁই। তাই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণের আনন্দ গরীব মানুষকে স্পর্শ করে না’। দ্বিতীয় অধ্যায়ে তিনি ‘বাজেট ধারণা’ শিরোনামে বিভিন্ন প্রকার বাজেট, বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের খুঁটিনাটি, রাজস্ব আদায়, বাংলাদেশের বাজেট প্রণয়নের ধাপসমূহ ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। তৃতীয় অধ্যায়ে তিনি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ করেছেন। সেখানে তিনি মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা, লক্ষ্যমাত্রার প্রবৃদ্ধি অর্জন কেন সম্ভব নয়, ডলার সংকট, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করেছেন। চতুর্থ অধ্যায়ে তিনি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ করেছেন । মূলত এই অধ্যায়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে তিনি গ্রাফ ও চিত্রের মাধ্যমে বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন । তিনি লিখেছেন, ‘এই বাজেটে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানোর সুনির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা ছিলনা। উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি তখনই অর্থবহ হবে, যখন এর সুফল বৃহত্তর জনগণ পাবে’। পঞ্চম অধ্যায়ে ‘টেকসই উন্নয়ন বাজেট’ বিষযয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। ‘দারিদ্র্যতা, দূর্নীতি ও সুশাসন’ শিরোনামের অধ্যায়ে তিনি উল্লেখ করেছেন, দেশে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বাড়ছে এবং  বিভিন্ন সেক্টরের দুর্নীতি বাড়ছে। 

তিনি মহাসড়ক নির্মাণ, ফ্লাইওভার নির্মাণ, রেলপথ নির্মাণে  ভারত ও চীনের খরচের সাথে বাংলাদেশের খরচের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে, বাংলাদেশের খরচের পরিমাণ অস্বাভাবিক বেশি, যা দুর্নীতির আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণিত করে। এই অধ্যায়ে তিনি- ‘কুইক রেন্টাল  বিদ্যুৎ প্রকল্প, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বালিশ কান্ডের কথা  উল্লেখ করে বলেন- দুর্নীতি, সন্ত্রাস চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি,  ঘুষ ইত্যাদি বন্ধ করা না গেলে সুশাসন প্রতিষ্ঠাও সুদূর পরাহত হবে’। তিনি চমৎকার ভাবে আরও লিখেছেন, দূর্নীতিমুক্ত, জবাবদিহি ও অংশগ্রহণমূলক, ন্যায়সঙ্গত, প্রশাসন গঠন করার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করার না গেলে- বাজেট কখনোই জনগণের প্রকৃত কল্যাণ বয়ে আনবে না।’’ সপ্তম অধ্যায়ে তিনি দেশ হতে অর্থ পাচারের চিত্র তুলে ধরেছেন।   তিনি বলেছেন, যারা অবৈধভাবে টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের  বিরুদ্ধে কঠোর  আইনি  ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।  এই গ্রন্থে তিনি ‘নারী ও নতুন উদ্যোক্তাদের’ ‘সীমিত ঋণ সুবিধার’ কত উল্লেখ করে তাদের ঋণ সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন এবং ‘গরীব বান্ধব ব্যাংকিং ব্যবস্থা’র দাবি জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘’এদেশে কৃষক, শ্রমিক, কুলি-মজুর, আয়া-বুয়াসহ আরো অনেক মানুষ আছে । রাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্ক কি শুধু ভোটার কার্ডের? বাজেটে তাদের হিস্যা, রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের অংশীদারিত্ব কোথায়? গরীব বান্ধব বাজেট বলতে আমি তাদের কথা বলি। প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ’'র এর গরীব বান্ধব বাজেট গ্রন্থটি ‘বাজেট’ সম্পর্কে অর্থনীতি সচেতন মানুষ ও শিক্ষার্থীদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবে এবং আগামীতে বাজেটে গরীবের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে সরকারকে উদ্বুদ্ধ করবে বলে আমরা মনেকরি।

লেখক : মুহাম্মদ মুসা খান।  কলামিস্ট ও সমাজকর্মী। 
emai : mkhanctgbd@yahoo.com


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল