শনিবার, ০৩ মে ২০২৫

'পতিতাবৃত্তি কি বৈধ পেশা?' মালয়েশিয়ার সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু ভাবনা

সোমবার, এপ্রিল ২১, ২০২৫
'পতিতাবৃত্তি কি বৈধ পেশা?' মালয়েশিয়ার সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু ভাবনা

ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম:

গত কিছুদিন ধরে আলোচনায় এসেছে মালয়েশিয়ার বর্তমান সরকার—যার নেতৃত্বে রয়েছেন ইসলামপন্থী নেতা আনোয়ার ইব্রাহীম—পতিতাবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রিত পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। সরকার জানিয়েছে, এই পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, ট্যাক্স দিতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আসতে হবে। যারা অননুমোদিতভাবে এই কাজ করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই সিদ্ধান্তে স্বাভাবিকভাবেই অনেকের ভ্রু কুঁচকেছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দেশ, যেখানে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম, সেখানে পতিতাবৃত্তিকে আইনগত কাঠামোয় আনাকে অনেকেই ধর্ম, নৈতিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় হিসেবে দেখছেন। তবে কিছু বাস্তব দিক বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, শুধু “নৈতিকতা বনাম পাপ” এর দ্বন্দ্বে এই সিদ্ধান্তকে ব্যাখ্যা করা যথেষ্ট নয়।

১. স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাপনাই মূল উদ্দেশ্য?

অনেক দেশেই দেখা গেছে যে পতিতাবৃত্তিকে অবৈধ রাখার কারণে এই পেশাটি বেআইনি গোপন জগতে চলে যায়। ফলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অনুপস্থিতি, যৌনবাহিত রোগের (STD) বিস্তার, এমনকি এই পেশার নারীদের প্রতি সহিংসতা মারাত্মক আকার ধারণ করে। মালয়েশিয়া সম্ভবত এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে একটি “হেলথ-ফোকাসড পলিসি” নিয়ে।

২. অপরাধ চক্র নিয়ন্ত্রণ ও মানব পাচার রোধ

পতিতাবৃত্তিকে অবৈধ রাখলে সেটি বহু অপরাধী চক্রের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। মাদক, শিশু পাচার, এবং নারী নির্যাতনের মতো অপরাধের সঙ্গে এই সেক্টরের যোগসূত্রও বহু পুরোনো। রাষ্ট্র যদি এটি নিয়ন্ত্রণে আনে, তবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়—এমন যুক্তি দিয়ে আইনটি পাস করানো হতে পারে।

৩. মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চাপ

বর্তমানে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন পতিতাবৃত্তিকে একটি “চয়েস অফ প্রফেশন” হিসেবে দেখার পক্ষে কথা বলে থাকে। মালয়েশিয়ার মতো একটি উন্নয়নশীল দেশ—যেটি আন্তর্জাতিক সাহায্য, বাণিজ্য এবং বৈদেশিক সহানুভূতির ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল—সেই আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী একটি অবস্থান নিতে চাইতে পারে।

৪. ধর্মনিরপেক্ষ বাস্তবতা বনাম আদর্শ ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা

আনোয়ার ইব্রাহীম একজন ইসলামপন্থী রাজনীতিবিদ হলেও, মালয়েশিয়া একটি বহু-ধর্মীয় রাষ্ট্র। সেখানে মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, হিন্দু, চীন ও ভারতীয় জাতিগোষ্ঠীসহ নানা মত ও পথের মানুষ বাস করে। ফলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অনেক সময় ধর্মীয় নীতির চেয়ে বাস্তবতানির্ভর হতে বাধ্য হয়। তিনি হয়তো একটি আইনি কাঠামোয় এনে একটি সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছেন—দমন নয়।

৫. প্রযুক্তির যুগে নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শরীর কেনাবেচা আজ এক ক্লিকে সম্ভব। সামাজিক মিডিয়া ও ডেটিং অ্যাপগুলোর অবাধ ব্যবহার পতিতাবৃত্তিকে এক অদৃশ্য, কিন্তু সর্বব্যাপী সমস্যায় রূপান্তরিত করেছে। একে গোপনে থাকার চেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক বেশি কার্যকর—এমন ভাবনা থেকেও এ সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

তবে এই সিদ্ধান্ত কতটা নৈতিক বা ইসলামসম্মত?
এখানে দ্বন্দ্ব প্রবল। একজন মুসলিম হিসেবে ইসলামের স্পষ্ট অবস্থান জানি—পতিতাবৃত্তি হারাম, নিষিদ্ধ ও সমাজের জন্য ধ্বংসাত্মক। তবে একজন রাষ্ট্রচালকের জন্য প্রশ্নটা অনেক সময় “ধর্মীয় নিষেধ” বনাম “বাস্তব নিয়ন্ত্রণ” এর মধ্যে ভারসাম্য খোঁজার হয়।

যদি উদ্দেশ্য হয় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, রোগ প্রতিরোধ, ও সমাজের একটা বাস্তব সমস্যাকে আইনি কাঠামোয় এনে দমন করা—তবে এটি একটি কৌশলগত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হতে পারে। কিন্তু একই সাথে এটাও স্পষ্ট—এই সিদ্ধান্ত একটি গভীর বিশ্বাসগত ও নৈতিক দ্বিধার জন্ম দেবে মালয়েশিয়াসহ মুসলিম দুনিয়ায়।

লেখক : ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম, কলামিষ্ট, সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল