আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
এয়ারপোর্টের টার্মিনালের ভেতর সে সময় বাজছিল প্রখ্যাত কানাডিয়ান সঙ্গীতশিল্পী সেলিন ডিওনের একটি গান। বহির্গমনের গেটের কাছে এক যাত্রী হঠাৎই এক পায়ের জুতা খুলে একপাশে ছুড়ে মারলেন। তারপর সেই খালি পায়ে ভর করে গানের তালে শুরু করলেন নাচ। তার নাম ব্লেক ম্যাকগ্রাথ।
এ ধরনের দৃশ্য সাধারণত এয়ারপোর্টে দেখা যায় না কিংবা আগে অন্তত দেখা যায়নি। তবে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ভিডিওতেই টার্মিনালের ভেতর যাত্রীদের কাউকে না কাউকে এভাবে নাচতে দেখা যায়। এটি যেন ট্রাভেল ট্রেন্ড হয়ে উঠেছে। নাচের এসব ভিডিও ভিউও হচ্ছে মিলিয়ন মিলিয়ন।
টার্মিনালের ভেতর নাচের এমনই একটি ভিডিওর শিরোনাম ছিল- 'এই টিকটকে দুর্দান্ত পারফর্ম করলাম, কিন্তু ফ্লাইটটা মিস হলো।'
গত শরত্কালে যখন নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার ব্লেক ম্যাকগ্রাথ টেক্সাসের ডালাস-ফোর্ট ওয়ার্থ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে তার ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, বলা যায় তখন থেকেই এই ট্রেন্ডের শুরু।
সেদিনের কথা স্মরণ করে ম্যাকগ্রাথ বলছিলেন, একবার তার এক বন্ধু এয়ারপোর্টে নেচেছিলেন। ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করার সময় তার সেই বন্ধুর কথা মনে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে বন্ধুর মতো তিনিও নাচবেন। যে কথা সেই কাজ।
টার্মিনালের ভেতর তখন বাজছিল সেলিন ডিওনের "ইট'স অল কামিং ব্যাক টু মি নাউ" গানটি। আর এ গানের তালেই নাচ শুরু করেন ম্যাকগ্রাথ। নাচের জন্য এ গান বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, এটি একটি নাটকীয় ও আবেগপ্রবণ গান। আর গানটি মোটামুটি সবারই জানা।
ম্যাকগ্রাথের ২১ সেকেন্ডের নাচের ভিডিওটি তার সহকারী ক্যামেরায় ধারণ করেন। এতে দেখা যায়, লাগেজের ওপর চড়ে ক্যামেরার সামনে আসেন ম্যাকগ্রাথ। এরপর লাগেজ থেকে নেমে বাম পায়ের জুতাটি খুলে একপাশে ছুড়ে মারেন। তারপর ডান পা শূন্যে ভাসিয়ে খালি পায়ে ভর করে বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকেন তিনি। ঘোরা শেষে কয়েকটি ডিগবাজিও দেন।
ম্যাকগ্রাথ সিএনএন ট্রাভেলকে বলেন, 'ফ্রিস্টাইল নাচে এতটাই উপভোগ করছিলেন যে খুশিতে ডিগবাজি ও লাফাতে শুরু করেছিলাম।'
ম্যাকগ্রাথ ওই সময় ভিডিওটি টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু তার সহকারী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে জানালেন, 'সময় হয়েছে, এখন যেতে হবে।'
ম্যাকগ্রাথ বলেন, 'আমরা সঙ্গে সঙ্গে গেটের দিকে দৌড়ে যাই। তবে সেখানে যাওয়ার পর দায়িত্বে থাকা লোকেরা আমাদের বলেছিলেন, গেট বন্ধ হয়ে গেছে। ফ্লাইট চলে গেছে।'
পরে ভিডিওটি টিকটকে পোস্ট করার সময় ম্যাকগ্রাথ এর শিরোনাম দেন- 'এই টিকটকে দুর্দান্ত পারফর্ম করলাম, কিন্তু ফ্লাইটটা মিস হয়ে গেল।' আর ক্যাপশনে লেখেন, 'এটা কি মূল্যবান ছিল????'
ভিডিওটি শেয়ার করার পর খুব দ্রুত ভিউ বাড়তে থাকে। ম্যাকগ্রাথের ক্যাপশনের জবাবে অসংখ্য ব্যবহারকারী লেখেন, 'হ্যাঁ'।
ভিডিওটি এ পর্যন্ত ৬.৭ মিলিয়ন বার ভিউ হয়েছে। সংখ্যাটা আরও বাড়ছে। ম্যাকগ্রাথ আরও কয়েকটি এয়ারপোর্টেও নাচের ভিডিও তৈরি করেছেন। তার এসব ভিডিও দেখে অনেকেই একইভাবে নাচের ভিডিও বানিয়েছেন। তারাও টার্মিনালের ভেতরে সেলিন ডিওনের গানের তালে নাচ করেছেন। এমনকি শিশুদেরও এভাবে নাচ করতে দেখা গেছে।
ম্যাকগ্রাথ জানালেন, শিশুরাও এই ট্রেন্ডে অংশ নিচ্ছে দেখে তিনি বেশ খুশি।
ম্যাকগ্রাথকে অনেক এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষই তাদের এয়ারপোর্টে এসে নাচের ভিডিও তৈরির আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এসব এয়ারপোর্টের একটি নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম স্কিপল এয়ারপোর্ট। সেখানকার এক কর্মকর্তা ম্যাকগ্রাথের একটি টিকটক ভিডিওতে মন্তব্য করে লিখেছেন, 'তাহলে, কবে আসছেন আমস্টারডামে?'
আমস্টারডাম স্কিপল এয়ারপোর্টের এক মুখপাত্র সিএনএন ট্রাভেলকে বলেন, তাদের কর্মীরা ম্যাকগ্রাথের এই ইতিবাচকতা আর সৃজনশীলতাকে দারুণভাবে উপভোগ করেন।
তিনি আরও বলেছেন, 'তিনি (ম্যাকগ্রাথ) সবসময় স্কিপলে স্বাগত। আর অন্য যাত্রীরাও চাইলে আমাদের এয়ারপোর্টে একটু নাচতে পারেন!'
ম্যাকগ্রাথ নিজেও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে কীভাবে এই ট্রেন্ড এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠল এবং লোকেরাও এটাকে এত ভালোভাবে গ্রহণ করল।
'এই নাচ বিশ্বের বহু মানুষকে আনন্দিত করেছে, যা সত্যিই দারুণ', বলেন ম্যাকগ্রাথ।
অনেকেই ম্যাকগ্রাথের মতো নাচছেন। তবে এখন পর্যন্ত তাদের কারো ফ্লাইট মিস হয়েছে বলে তিনি শোনেননি।
এমআই