গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ বছরের যাত্রায় এখনো শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়নি। বারবার অভিযোগ ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সত্ত্বেও ক্যান্টিন সমস্যার স্থায়ী সমাধান আসেনি। ক্যান্টিনের দায়িত্ব একাধিকবার হস্তান্তর হলেও সমস্যার কোনো কার্যকর পরিবর্তন হয়নি, বরং কিছুদিন পরই পূর্বের দুরবস্থায় ফিরে যায়।
খাবারের দাম ও পরিমাণে রয়েছে অসঙ্গতি। নাস্তা ও দুপুরের খাবারের জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে হলেও শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন নিম্নমানের খাবার, যা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রস্তুত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই এমন বৈষম্য চলছে। রান্নাঘরের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, বিশুদ্ধ পানির অভাব ও স্থান সংকট শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ক্যান্টিনে খাবার খোলাভাবেই রাখা হয়, ব্যবহৃত পোড়া তেল সংরক্ষণ করে পরদিন আবার রান্নায় ব্যবহার করা হয়। রান্নাঘর ভেজা ও দুর্গন্ধময়, এবং রাঁধুনিরা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।
ক্যান্টিনের পরিবেশ ও অব্যবস্থাপনার তীব্র সমালোচনা করে ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী শান্ত আহমেদ বলেন, “ক্যান্টিনের রান্নাঘরে বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা নেই, ফলে সব সময় ভ্যাপসা পরিবেশ বিরাজ করে। খাবারে প্লাস্টিক, মুরগির পালক পাওয়া যায়। আসবাবপত্রে ময়লা লেগে থাকে। পর্যাপ্ত বসার জায়গা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে খেতে বাধ্য হন।”
ক্যান্টিনের দায়িত্বে থাকা মো. আরশেদ প্রথমে কয়েকটি অভিযোগ অস্বীকার করলেও ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের প্রমাণ উপস্থাপনের পর ভুল স্বীকার করেন। তিনি জানান, “ঈদের পরে ক্যান্টিনের দায়িত্ব ছেড়ে দেব।”
এ বিষয়ে ক্যান্টিন কমিটির সদস্যরা জানান, "শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও মানসম্পন্ন খাবার নিশ্চিত করতেই আমরা সবসময় সচেষ্ট। ইতোমধ্যে ক্যান্টিনে নানা ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হয়েছে, তবে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ফের আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। নিয়ম মেনে কর্মীদের টুপি, গ্লাভস পরিধান ও খাবার সুরক্ষিত রাখার নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে—কর্মীদের স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত করতে পুনরায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনরকম বেতন না পাওয়ায় তারা প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য মনে করছেন না।"
তারা আরও জানান, শুধু সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের ব্যবস্থার কারণেই অনেকে ক্যান্টিন পরিচালনায় আগ্রহ দেখান না।
যদি শিক্ষার্থীরা বর্তমান ম্যানেজারের পরিবর্তন চান কিংবা নিজস্ব উদ্যোগে রাধুনি নিয়োগে আগ্রহী হন, তবে ক্যান্টিন কমিটি সেক্ষেত্রে যথাযথ যাচাই-বাছাই করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “আমার কাছে অভিযোগগুলো পৌঁছেছে। ক্যান্টিন কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি অবহিত করতে বলেছি।”
ক্যান্টিন সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে একাধিক ফুড কোর্ট চালুর প্রস্তাব দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ক্যান্টিন স্থানান্তরের পরিকল্পনা থাকলেও এখনও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে একাডেমিক ভবনের তৃতীয় তলার বি ব্লকে একটি আধুনিক ডিজিটাল ক্যাফেটেরিয়া স্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে।