নিজস্ব প্রতিবেদক:
বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে অতি-উচ্চ, উচ্চ, মধ্যম, ও নিম্ন- এই চার স্তরের সিগারেট বিক্রির অনুমোদন রয়েছে। ফলে সিগারেটের দাম বাড়ানো হলে সিগারেট ব্যবহারকারিরা উচ্চতর স্তরের সিগারেট ব্যবহার বন্ধ করে নিম্নতর স্তরের সিগারেট ব্যবহার শুরু করার সুযোগ বেশি পাচ্ছেন। আগামী অর্থবছরে তাই নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একিভুত করে সিগারেটের স্তর সংখ্যা চারটি থেকে কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব করেছে তামাক-বিরোধী নাগরিক সংগঠনগুলো। এছাড়াও একেক শলাকা সিগারেটের দাম অন্তত ৯ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে এই সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সিগারেটের কর-কাঠামোতে এমন ব্যাপকভিত্তিক সংস্কারের এখনই সময় বলে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। আজ (বুধবার, ১৪ মে ২০২৫) “বাংলাদেশে সিগারেটের কর-কাঠামো পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা” শীর্ষক সেমিনারে তারা এমন মত দিয়েছেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য এবং বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই)-এর সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আহমদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ-এর গবেষণা পরিচালক ড. এস. এম. জুলফিকার আলী।
সেমিনারে প্রেক্ষাপট উপস্থাপনায় উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী বলেন আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের স্তরের সংখ্যা তিনটিতে নামিয়ে এনে সকল স্তরের সিগারেটের খুচরা মূল্য কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়াতে হবে। তা করা গেলে সিগারেটের ওপর করের হার না বাড়িয়েও সিগারেট ব্যবহার কমানো যাবে, পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব হবে। প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন যে, সিগারেটের স্তর সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি সকল স্তরের সিগারেটের ওপর শতাংশ হিসেবে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা নিয়েও আলোচনা করা জরুরি। কারণ, অধিকাংশে ক্ষেত্রেই বাজেটে ঘোষিত খুচরা মূল্যের চেয়ে বাজারে বেশি দামে সিগারেট বিক্রির কারণে সরকার প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কর ফাঁকি ঠেকাতে সিগারেটে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা দরকার বলে একমত পোষণ করেন ড. জুলফিকার আলী। সিগারেটে করারোপের ক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণের চেয়ে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষাকেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে বলে জানান রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য আলী আহমদ।
সাম্প্রতিক অর্থবছরগুলোতে বাজেটে সিগারেটের দাম অল্প করে বাড়ানো হলেও নাগরিকদের মাথাপিছু আয়বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির তুলনায় ওই দামবৃদ্ধি অপ্রতুল বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল। যেমন: সর্বশেষ তিন অর্থবছরে চাল-ডাল-তেল-চিনির মতো নিত্যপণ্যের দাম ৯ থেমে ৮৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়লেও সিগারেটের দাম গড় হিসেবে বেড়েছে ৭ শতাংশের সামান্য বেশি। আগামী বাজেটগুলোতে তাই সিগারেটের দাম নির্ধারণের সময় আয়বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতিকে যথাযথভাবে বিবেচনার আহ্বান জানান সিপিডি-এর রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত। সেমিনার সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগি ড. মাহবুব হাসান।