নিজস্ব প্রতিবেদক:
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন বিভাগ। রোববার বেলা ১২টার দিকে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্টারের দপ্তরে এ অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর গাজী এম এস তামিম। মামলার অপর দুই আসামি হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পলাতক আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ওই সময় দায়িত্বে থাকা পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। আসাদুজ্জামান খান কামাল পালিয়ে থাকলেও আবদুল্লাহ আল-মামুন কারাগারে রয়েছেন।
গত জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের সময় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আর শেখ হাসিনাকে এ ঘটনায় ‘মাস্টারমাইন্ড’ এবং ‘সুপিরিয়র কমান্ডার’ অভিহিত করা হয়েছে। গুলির সরাসরি নির্দেশনা বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল এবং বাস্তবায়ন করেছেন সাবেক আইজিপি মামুন। মামলায় বর্তমান সরকারের দু’জন উপদেষ্টা, পুলিশ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ ৩৫ থেকে ৪০ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে।
ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে উঠে এসেছে, ‘গণঅভ্যুত্থানের শেষ মুহূর্তে (গত ৩, ৪ ও ৫ আগস্ট) শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সব বাহিনীকে হেলিকপ্টার, ড্রোন, এপিসিসহ মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরস্ত্র, নিরীহ আন্দোলনকারী সাধারণ মানুষ, যারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছিলেন তাদের সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন বা নির্মূল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।’
এ ক্ষেত্রে সরাসরি হত্যার নির্দেশ, গুলি করে পঙ্গু করার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ক শেখ হাসিনার বহু কল রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কল রেকর্ড, ভিডিও ফুটেজ, উদ্ধার করা বুলেট, হেলিকপ্টারের ফ্লাইট শিডিউলসহ বিভিন্ন আলামত পাওয়া গেছে। এর আগে জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন গত ১২ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেয় তদন্ত সংস্থা।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৪ আগস্ট ট্রাইব্যুনালে প্রথম অভিযোগ করা হয়েছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বাদী হয়ে মামলা করে।
প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ অভিযোগের মধ্যে প্রথমটি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ‘উস্কানি’ ও ‘প্ররোচনা’ দেওয়া; দ্বিতীয় অভিযোগ সরাসরি গুলির নির্দেশনা এবং বাকি তিনটি অভিযোগ সুনির্দিষ্ট ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংঘটিত হয়েছে।
প্রসিকিউশন জানিয়েছে, এ মামলায় সাক্ষী হিসেবে হতাহতদের যেসব ডাক্তার চিকিৎসা দিয়েছেন, যারা সরাসরি আহত হয়েছেন এবং শহীদ পরিবারের স্বজন যারা লাশ বুঝে নিয়ে দাফন করেছেন, তারাও সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে আসবেন। পাশাপাশি আলামত হিসেবে বিভিন্ন কল রেকর্ড, অসংখ্য ভিডিও ফুটেজ, জাতীয় দৈনিকে কাটিং প্রস্তুত এবং উদ্ধার করা বুলেট জব্দ করা হয়েছে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমার পর শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিদের হাজির হওয়ার নির্দেশ দেবেন ট্রাইব্যুনাল।