মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন:
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু ছিল নারীঘটিত তুচ্ছ বিষয়। এ সংঘর্ষ আবাসিক হল পর্যন্ত গড়াতো এবং এক পর্যায়ে ছোট-বড় কিংবা তুমুল সংঘর্ষের সৃষ্টি করতো। আর এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতো হলগুলো তে থাকা নিরীহ সাধারণ ছাত্ররা। নারীঘটিত কেলেঙ্কারিতে গড়ে ১০ টির মধ্যে ৮ টি গড়াতো সংঘর্ষ পর্যন্ত।
২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে হাবিপ্রবির ১৮ তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীর প্রেমিকাকে সিনিয়র ব্যাচের এক ছাত্র উত্ত্যক্ত করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শেখ রাসেল হল ও এক্সটেনশন হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে, যাতে ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি নারীঘটিত ঝামেলায় বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদে শিক্ষকরা উভয় পক্ষের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেন। তবে আলোচনা চলাকালে হলের শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয় এবং ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পরবর্তীতে দুই আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে, যাতে অন্তত দুইজন শিক্ষার্থী আহত হন।
এছাড়াও ২০২৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন টিভি রুম বনাম কাঁচরুম বিরোধ, মার্চ ২০২৩- তাজউদ্দীন হলের সাথে জিয়া হলের কাঁচরুম, ১৩ মে ২০২৩ তাজউদ্দীন হল ইস্যু, ১৩ মে ২০২৩ জিয়া হলের কাঁচরুম বনাম টিভিরুম ইস্যু, প্রায় সবগুলোতেই কেন্দ্রে ছিল নারীঘটিত বিষয়।
তবে ২০২৪-২৫ সালে এ ধরণের ঘটনা কম ঘটলেও একটি মাত্র ইস্যু ছিল টক অফ দ্যা টাউন। সে ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করা হয়।
এসব ঘটনায় বেশিরভাগ সময় জড়িয়ে পড়তো আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা। হাতে উঠতো দেশীয় অস্ত্র। সে সময়ে আহত হওয়া একাধিক শিক্ষার্থীরা বলেন, কি জন্য মারামারি হতো তা আমরা জানতামই না। নির্দেশ দিলে যেতে হতো। না গেলে সিট ক্যান্সেল করার ভয় দেখাতো। ব্যক্তিগত বিষয়ে সাধারণ ছাত্রদের ব্যবহার করা হতো। আমরা আহত হতাম। অথচ চিকিৎসার খরচ নিজেদেরকেই বহন করতে হতো।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এবং গণরুম প্রথা বিলুপ্তির কারণে অনেকাংশে কমে গেছে এ বিষয় গুলো। একইসাথে বর্তমান প্রশাসন এবং প্রক্টরিয়াল বডি সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন যেন এ ধরণের ঘটনা না ঘটে।
প্রক্টরিয়াল বডি জানান, ক্যাম্পাস অভ্যন্তরে শিক্ষার্থীদের অবাধে মেলামেশা বন্ধ করতে তারা সর্বদা সচেষ্ট রয়েছেন। একইসাথে ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় (বিসিএস গলি, মহাবুলীপুর, কর্নাই) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যার পর আড্ডা, একসাথে বসে থাকা, মাদক মুক্ত রাখতে এবং নারী উত্যক্তের বিষয়ে জিরো টলারেন্সে কাজ করা হচ্ছে।
এমআই