আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সাম্প্রতিক মার্কিন বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় 'গুরুতর ক্ষতি' হয়েছে এবং এতে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি 'কয়েক বছর পিছিয়ে গেছে' বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ)-র পরিচালক জন র্যাটক্লিফ।
র্যাটক্লিফ বলেন, ইরানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে, যদিও পুরো কর্মসূচি ধ্বংসের কথা তিনি বলেননি।
এর আগে প্রতিরক্ষা দপ্তরের একটি ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, হামলার পরেও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মূল উপাদানগুলো অক্ষত রয়েছে। ওই প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।
ট্রাম্প দাবি করেন, মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা 'সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস' হয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, হামলার প্রভাব নিয়ে 'ভুয়া সংবাদমাধ্যম' ইচ্ছাকৃতভাবে 'মিথ্যা প্রচার' করছে।
তিনি জানান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার পেন্টাগনে সংবাদ সম্মেলন করবেন, যা ট্রাম্পের ভাষায় 'মার্কিন বীর পাইলটদের মর্যাদা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ও অপ্রতিরোধ্য' হবে।
এদিকে, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইরান ও ইসরায়েল দ্বিতীয় দিনের মতো একটি নাজুক যুদ্ধবিরতি মেনে চলছে।
বুধবার নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ইরানের ওপর মার্কিন বিমান হামলা ছিল 'চরম ধ্বংসাত্মক'।
ট্রাম্প জানান, আগামী সপ্তাহে সম্ভাব্য আলোচনায় তিনি ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে একটি প্রতিশ্রুতি চাইবেন। তবে এ ধরনের আলোচনার বিষয়ে তেহরানএখনো কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি।
মার্কিন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সরাসরি ও পরোক্ষ যোগাযোগ হয়েছে।
এদিকে সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফ বলেন, 'ঐতিহাসিকভাবে নির্ভরযোগ্য ও সুনির্দিষ্ট' একটি গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, ইরানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে এবং সেগুলো পুনর্গঠন করতে 'বছরের পর বছর' লেগে যাবে।
র্যাটক্লিফকে ট্রাম্প নিজেই নিয়োগ দিয়েছিলেন।
জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডও মার্কিন হামলার ক্ষতির বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান সমর্থন করেছেন।
তিনি তার এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেন, 'যদি ইরান পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে নাতানজ, ফোরদো ও ইসফাহান—এই তিনটি স্থাপনা সম্পূর্ণরূপে পুনর্গঠন করতে হবে, যা কয়েক বছর সময় নেবে।'
গত শনিবার মার্কিন সেনাবাহিনী ১২৫টি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
নতুন স্যাটালাইট চিত্রে দেখা গেছে, ফোরদোর দুইটি প্রবেশপথের কাছে ছয়টি বড় গর্ত দেখা গেছে, একই ধরনের গর্ত ইসফাহানে ও লক্ষ্য করা গেছে। তবে গভীর ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
গত মঙ্গলবার পেন্টাগনের ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির ফাঁস হওয়া একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি মাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে গেছে।
যদিও মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিবের দাবি, প্রতিবেদনটি 'নিম্ন আত্মবিশ্বাস' এর সাথে তৈরি করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ক্ষতির প্রাথমিক মূল্যায়ন এখনও পরিবর্তিত হতে পারে। দেশটির ১৮টি গোয়েন্দা সংস্থার কাজ ও ক্ষমতার ভিন্নতার কারণে কখনো কখনো তাদের রিপোর্ট আলাদা বা একে অপরের সঙ্গে মিল নাও থাকতে পারে।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, হামলার আগে তেহরান তার উচ্চসমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বড় অংশ অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছিল।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাঘায়ি বলেন, 'পারমাণবিক স্থাপনাগুলো গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে' তবে তিনি বিস্তারিত জানাতে পারেননি।
ইসরায়েলি পারমাণবিক কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফোরদোতে হামলায় 'গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে', যা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি 'বহু বছর পিছিয়ে' দিয়েছে।
তবে ইরানি সংসদ উপদেষ্টা মেহদি মোহাম্মাদি দাবি করেন, ফোরদোতে 'কোনও অপরিবর্তনীয় ক্ষতি হয়নি'।
দীর্ঘকাল ধরে ইরানের দাবি, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, ইরান সক্রিয়ভাবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না।