আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইরান। তবে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থাকে অসহযোগিতা করার বিষয়ে ইরান যে অবস্থান নিয়েছে এতে দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির স্বচ্ছ্বতার প্রশ্নে উদ্বেগ বাড়তে পারে। একই সঙ্গে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খবর বিবিসির।
বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) কতটা ভূমিকা রাখছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ইরান তাদের অসহযোগিতার অবস্থানের পেছনে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি কমিশনের বিরুদ্ধে যথাযথ দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগ করেছে।
সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। ইরানের পার্লামেন্ট এমন অভিযোগ এনে বলেছে যে, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা একটি রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
কী কাজ করে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা?
প্রায় সাত দশকের পুরোনো আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বিশ্বে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করে থাকে। একইসঙ্গে সংস্থাটির কাজের মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ করা।
এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৭ সালে এবং এটি জাতিসংঘের অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। সদস্য দেশগুলোতে পারমাণবিক স্থাপনা এবং উপকরণগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সহায়তা করে এই সংস্থা। সেক্ষেত্রে তারা পারমাণবিক নিরাপত্তা বিষয়ক মান ও গাইড লাইন তৈরি করে।
এছাড়াও আইএইএ পারমাণবিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য সদস্য দেশগুলোকে প্রযুক্তিগত সহায়তাও প্রদান করে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ক্ষমতায় থাকাকালে ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন এবং রাশিয়া অর্থাৎ পি ফাইভ প্লাস ওয়ান নামে পরিচিত পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে ইরান। এর ভিত্তিতে ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলো আইএইএ।
এরপর ২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রথবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৮ সালে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করা হয়। এরপর থেকে ইরান তার পারমাণবিক কার্যক্রমের গতি বাড়ায় এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে থাকে।
আইএইএর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরান প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি। সাধারণত ৯০ শতাংশের বেশি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে এমন অভিযোগে দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করে গত ১৩ জুন হামলা চালায় ইসরায়েল। এই ঘটনায় ইরানও পাল্টা হামলা চালালে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়।
বিবাদমান দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার দশ দিনের মাথায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করে ‘সুনির্দিষ্ট’ সামরিক অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এতে ইরানের ফরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানের পারমাণবিক স্থাপনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
ইরানের নতুন পারমাণবিক স্থাপনার তথ্য অজানা
এদিকে পারমাণবিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স বলফ্রাস বিবিসিকে বলেন, ইরানে ইসরায়েল হামলা চালানোর আগে, গত ১২ জুন ইরান আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থাকে জানিয়েছিল যে, তারা একটি নতুন পারমাণবিক স্থাপনা নির্মাণ করেছে, যেটি বেশ সুরক্ষিত এবং যেখানে তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে।
অ্যালেক্স বলেন, আমরা যতটুকু জানি ওই স্থাপনা কোথায়- তা প্রকাশ করা হয়নি, হয়তো আমেরিকান বা ইসরায়েলিরাও জানে না। সম্ভবত তারা ইউরেনিয়ামগুলো ওখানে সরিয়ে ফেলতে পারে।
হামলার তিন দিনের মাথায় বুধবার পেন্টাগনের মূল্যায়ণে বলা হয়েছে, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত ধ্বংস হয়নি। এতে বলা হচ্ছে, ইরানের সেন্ট্রিফিউজগুলো প্রায় অক্ষত রয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি মূলত স্থলভাগের অবকাঠামোতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
এছাড়া ইরানের দুটি পারমাণবিক স্থাপনার প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে গেছে এবং কিছু অবকাঠামো ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে, ভূগর্ভস্থ মূল স্থাপনাগুলো অনেকটাই অক্ষত রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা সূত্র মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোকে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে মাত্র, সর্বোচ্চ এইটুকুই।