শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

লক্ষ্মীপুরের জলাশয় উদ্ধার, মানুষের স্বস্তি

বৃহস্পতিবার, জুলাই ৩, ২০২৫
লক্ষ্মীপুরের জলাশয় উদ্ধার, মানুষের স্বস্তি

অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর:

বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর, একসময় প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ ছিল। বিশেষ করে জেলার বিস্তৃত খাল, বিল ও জলাশয় সাধারণ মানুষের জীবিকা ও জীবনযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পরিচিত। কৃষি, মৎস্যচাষ, নৌ-যোগাযোগ, এমনকি স্বাভাবিক বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনেও এই খাল-বিলের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন উপজেলার খাল, বিল ও জলাশয় নিয়ে এক ভয়াবহ সংকট দেখা দেয়। কিছু অসাধু চক্র এই জলাশয়গুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ রোধ করে সেখানে বাঁধ গড়া ও জাল দিয়ে মাছ চাষ শুরু করে। ফলে পানি আটকে গিয়ে চারপাশের গ্রামগুলোর সাধারণ মানুষ পড়েন চরম বিপদে।

এই বাঁধের কারণে বর্ষা মৌসুমে পানি স্বাভাবিকভাবে নামতে না পারায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। কৃষিজমি ডুবে গিয়ে ফসল নষ্ট হয়, ঘরবাড়িতে পানি ঢোকে, রাস্তাঘাট অচল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা এবং সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এমনকি পানি দাঁড়িয়ে থাকার কারণে এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়ে গিয়ে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো রোগের প্রকোপও বাড়তে থাকে। মানুষের জীবনে নেমে আসে এক নিদারুণ অনিশ্চয়তা।

বিগত বছরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ, হতাশা এবং নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি হলেও, প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকা এসব অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে কেউ সহজে মুখ খুলতে সাহস করতেন না। প্রশাসনের কিছু অংশের নিস্ক্রিয়তা এবং স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রের প্রভাবের কারণে সমস্যার সমাধান মিলছিল না। ফলে মানুষ ভাবতে শুরু করেছিল হয়তো এই অবস্থা মেনে নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে হবে।

কিন্তু এই বছর লক্ষ্মীপুরের চিত্র বদলে দিতে সাহসী উদ্যোগ নেন জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ভোগান্তি এবং স্থানীয় বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি সরেজমিনে বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন এবং গ্রাম পরিদর্শন করে সমস্যার গভীরে গিয়ে বোঝেন, খাল ও জলাশয় অবৈধভাবে দখলমুক্ত না করলে মানুষের দুর্ভোগ দূর হবে না। তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন শাখা যেমন ভূমি অফিস, পুলিশ প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সাথে সমন্বয় করে এক সুপরিকল্পিত অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন।

জেলা প্রশাসকের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রথম দিকে কিছু প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। প্রভাবশালী মহল নানা চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করে, কেউ কেউ আইনি মারপ্যাঁচে সমস্যাকে দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছে। কিন্তু রাজীব কুমার সরকার কোনো প্রকার ভয়ভীতি বা চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে কঠোর হাতে অভিযান চালিয়ে যান। অবৈধ বাঁধ কেটে দিয়ে খালগুলো পুনরায় স্বাভাবিক প্রবাহে ফিরিয়ে আনা হয়। এ সময় অনেক অবৈধ দখলদারকে জরিমানা করা হয় এবং কিছু জায়গায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এই পদক্ষেপের ফলে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন খাল, বিল ও জলাশয় দখলমুক্ত হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও আগের মতো স্বাভাবিক হয়েছে। অনেক এলাকায় দীর্ঘদিন পর কৃষিজমিতে পানি নেমে গিয়ে চাষাবাদের উপযুক্ত হয়েছে। মানুষ এখন স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারছে। গ্রামবাসীর মধ্যে ফিরে এসেছে স্বস্তি ও আশার আলো।

বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে যখন টানা বৃষ্টি হয়, তখন খালগুলো দিয়ে পানি নেমে যাওয়ায় আর আগের মতো জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে ডুবে থাকছে না। শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে, কৃষকরা ফসল রক্ষা করতে পারছে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী মানুষ স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছে।

এই উদ্যোগের জন্য রাজীব কুমার সরকার জেলা জুড়ে মানুষের অকুণ্ঠ প্রশংসা অর্জন করেছেন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদপত্র ও টেলিভিশন প্রতিবেদনে তাকে নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, একজন সৎ, সাহসী এবং দূরদর্শী প্রশাসকই পারে জনগণের প্রকৃত সমস্যা সমাধান করতে।

লক্ষ্মীপুরের মানুষের চোখে আজ রাজীব কুমার সরকার একজন নায়ক। তিনি প্রমাণ করেছেন, প্রশাসনের সদিচ্ছা, সঠিক সিদ্ধান্ত এবং দৃঢ়তা থাকলে যে কোনো বড় সমস্যার সমাধান সম্ভব। তাঁর এই উদ্যোগ শুধু লক্ষ্মীপুর নয়, পুরো দেশের প্রশাসনের জন্যই একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কারণ দেশের অন্য অনেক জেলা বা উপজেলার ক্ষেত্রেও একই সমস্যা বিদ্যমান। তাই রাজীব কুমার সরকারের এই উদ্যোগ অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে অন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জন্যও।

অবশেষে বলা যায়, জনগণের স্বার্থে যে প্রশাসন কাজ করে, জনগণ তাকে সাদরে গ্রহণ করে এবং তার পাশে দাঁড়ায়। লক্ষ্মীপুরের খাল-বিল দখলমুক্ত করার এই অভিযান সাধারণ মানুষের জীবনে যে স্বস্তি ও স্বপ্ন ফিরিয়ে দিয়েছে, তা ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে থাকবে।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল