নিজস্ব প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর তুরাগ মধ্য থানার উদ্যোগে ইউনিট প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ১৯ জুলাই (শনিবার) জামায়াতে ইসলামীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে তুরাগ মধ্য থানার উদ্যোগে ৪ জুলাই (শুক্রবার) নলভোগ ঈদগাহ মাঠে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন থানা জামায়াতের আমীর গাজী মনির হোসাইন এবং সঞ্চালনা করেন থানা সেক্রেটারি মুহিবুল্লাহ বাচ্চু ও নায়েবে আমীর কামরুল হাসান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি ড: মো: রেজাউল করিম, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৮ আসনের জামায়াতে ইসলামীর এমপি প্রার্থী অধ্যক্ষ আশরাফুল হক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড: মো: রেজাউল করিম বলেন, “আল্লাহর আইন ও সৎ শাসকের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া এই দেশ দারিদ্র্যমুক্ত ও আত্মনির্ভর হতে পারবে না। জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে জামায়াতের পতাকাতলে আসতে হবে। প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায়, ঘরে ঘরে ইসলামের সুমহান দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। জনতার নেতা, জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের ঘোষিত ৭ দফা দাবি জনমানুষের দাবীতে পরিণত করতে হবে। তিনি সাত দফা দাবি আদায়ে সকলকে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান।
তিনি আরও বলেন, দেশে বেকাত্ব ও দারিদ্র বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। তাই দেশকে আত্মনির্ভরশীল ও দারিদ্রমুক্ত করতে আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসন প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। তিনি ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে জামায়াতের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা-১৮ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যক্ষ আশরাফুল হক। তিনি বলেন, “২০২৪ সালের জুলাইয়ে যে গণজাগরণ হয়েছে, তা ছিল একটি ঐতিহাসিক বিপ্লব। আমরা কখনো ভাবিনি, স্বৈরাচারী শাসনের অবসান এতটা কাছাকাছি এসে যাবে। কিন্তু সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবতায় রূপ দিতে হলে আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ, সচেতন ও সক্রিয় হতে হবে।
তিনি কোরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার উদাহরণ টেনে বলেন, হজরত মুসা (আ.) যখন সাগর পার হলেন, তখন ফিলিস্তিন দখলের আহ্বানে অনেকেই ভয় বা অবজ্ঞা দেখিয়েছিলেন। এর ফলস্বরূপ তারা ৪০ বছর ধরে গোলামির শৃঙ্খলে বন্দি ছিলেন। আমাদের মাঝেও যদি অলসতা বা বিভাজন কাজ করে, তবে আমরাও আবার নতুন করে নিপীড়নের মধ্যে পড়তে পারি।
তিনি আরও বলেন, সুরা বাকারাহতে বলা হয়েছে, তাগুতি শক্তির বিশাল বাহিনী থাকলেও, আল্লাহ অল্পসংখ্যক সত্যবাদী ও ঈমানদার মানুষের মাধ্যমেই বিজয় দিয়ে থাকেন। ইতিহাসে রাসূল (সা.)-এর মক্কা বিজয়ের ঘটনা আমাদের অনুপ্রেরণা। তিনিও নির্যাতিত অবস্থায় মদিনায় হিজরত করেছিলেন, পরে পুনরায় মক্কা জয় করেন। আমরাও গত ১৭ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। এখন সময় এসেছে দ্বীনের জন্য একসাথে কাজ করার। একটি শক্তি অস্ত্র ও অর্থ ব্যবহার করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে। এটি প্রতিহত করতে আমাদের জীবনের সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। আল্লাহর ওপর নির্ভর করে বিজয়ের আশাবাদ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। নিজেদেরকে আল্লাহর পথে সম্পূর্ণরূপে সঁপে দিতে হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে গাজী মনির বলেন, “প্রবাসীদের ভোটাধিকার, অবাধ নির্বাচনের সুযোগ ও সংবিধানের মৌলিক সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে। জামায়াতের সাত দফা বাস্তবায়নই আজ জনদাবিতে পরিণত হয়েছে।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও কামারপাড়া স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি অ্যাডভোকেট সুরুজ্জামান, জামায়াত নেতা সাইদুর রহমান মোল্লা, জুলফিকার আলী, মুজিবুর রহমান, মাওলানা ওয়ারেস আলী মুরাদ, ইঞ্জিনিয়ার দেলোয়ার হোসাইন, আবু তাহের মিয়াজি, সাখাওয়াত হোসাইন ও জিয়াউর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শুরু হয় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত ও দারসের মাধ্যমে। হামদ ও নাত পরিবেশন করেন সিরাজুল ইসলাম সিকিম। শেষে “জুলাই বিপ্লবের শহীদদের” রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয় এবং দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।
একে