জাকারিয়া শেখ,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত এক শিক্ষা কর্মকর্তার বদলির আদেশ বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় ফুলবাড়ী উপজেলা গেট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ফুলবাড়ী উপজেলার সাবেক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক ছাত্রনেতা আব্দুল হাই, শরিফুল ইসলাম, সানরেজা বসুনিয়া, সিদরাতুল সবুজ, মুন সরকার, জেলাল সরকারসহ আরও অনেকে।
বক্তারা বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের দ্বারা দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে পড়বে। তারা অভিযোগ করেন, চলতি দায়িত্বে থাকা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জনাব নূর মোহাম্মদ বিভিন্ন কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনের সময় ঘুষ ও দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন, যা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদনেও প্রকাশ পেয়েছে। এ ধরনের একজন বিতর্কিত কর্মকর্তা ফুলবাড়ীর মতো শান্তিপ্রিয় ও শিক্ষানুরাগী জনপদে যেন দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, সে বিষয়ে সকলে সজাগ থাকতে হবে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুল হাই বলেন—
"যে অফিসারের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালনের সময় ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাকে ফুলবাড়ী উপজেলায় বদলি করে দায়িত্ব দেওয়ার অর্থই হলো এখানকার শিক্ষাব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা এই দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারকে ফুলবাড়ীতে দেখতে চাই না। কর্তৃপক্ষকে দ্রুত এই বদলির আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় আমরা এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব।"
উল্লেখ্য, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন-১) মোঃ সাজ্জাদ হোসেন স্বাক্ষরিত ১৭ জুলাই ২০২৫ তারিখের এক অফিস আদেশে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা থেকে জনাব নূর মোহাম্মদকে চলতি দায়িত্বে ফুলবাড়ী উপজেলা শিক্ষা অফিসে বদলি করা হয়। আদেশে উল্লেখ করা হয়, তিনি আগামী ৩০ জুলাই ফুলবাড়ীতে যোগদান করবেন (স্মারক নম্বর: ৩৮.০১.০০০০.১০১.১৯.০৩৮.২৪-২৮৮)।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, কোনোভাবেই দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা হতে পারে না। তারা জানান, যদি এই আদেশ প্রত্যাহার না করা হয়, তাহলে তারা সর্বস্তরের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সচেতন নাগরিকদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবেন।
সমাবেশ থেকে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়:
১. ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তাকে দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।
২. ফুলবাড়ীর সব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে।
৩. স্কুল চলাকালীন সময়ে কোনো কিন্ডারগার্টেন বা প্রাইভেট টিউশন চলবে না।
৪. প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে ডিজিটাল হাজিরা ব্যবস্থার আওতায় আনতে হবে।
৫. কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে (মিছিল-মিটিং ইত্যাদি) অংশ নিতে পারবে না।
বিক্ষোভ শেষে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করার উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানান আয়োজকরা।
একে