নিজস্ব প্রতিবেদক:
সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রবাসী শ্রমিক পাঠানো সংক্রান্ত একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, 'আগামী ২-৩ সপ্তাহের মধ্যেই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।'
শনিবার (২ আগস্ট) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে 'রেমিট্যান্স যোদ্ধা দিবস' উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, 'বাংলাদেশের ইতিহাসে অতীতে এমন কোন চুক্তি হয়নি। ভারতের সঙ্গেও না, পাকিস্তানের সঙ্গেও না। এই চুক্তি হলে সৌদি আরবে কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আগের সরকার এই চুক্তির জন্য বহুবার চেষ্টা করেও সফল হয়নি।'
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'গত বছর বিমান টিকিট ও ভিসা থাকা সত্ত্বেও যারা যেতে পারেননি, তাদের পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই বিষয়ে বৈঠক করে ঢাকায় ফিরে আসার পর জানাই যে, মালয়েশিয়া কর্মীদের নিতে রাজি হয়েছে—তখন তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়ি। আমাকে ফেসবুকে গালাগালি করে বলা হয়, অবৈধভাবে থাকা কর্মীদের বৈধ করার খবর নেই, আবার নতুন করে লোক পাঠানো হচ্ছে। আপনারা এত বড় একটা দাবি বাস্তবায়িত হওয়ার পরও গালি দেন।'
তিনি আরও বলেন, 'রিইন্ট্রিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম কিছুটা সহজ করেছি, ডিজিটালাইজেশন করেছি—যাতে প্রবাসীরা হয়রানি ও ভোগান্তি থেকে মুক্তি পান। নতুন করে বিদেশে গেলে আপনারা এই সুবিধাগুলো বুঝতে পারবেন।'
বিদেশে যেতে আগ্রহীদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, 'আপনারা বাইরে যাওয়ার আগে ভালোভাবে খোঁজ-খবর নিয়ে যাবেন। কে পাঠাচ্ছে, প্রতারক কি না, যাচাই করে নেবেন। বিদেশকে যেন 'বেহেশত' মনে না করেন। আমি সৌদি আরবে এমন অবস্থা দেখেছি যেখানে মানুষের জীবন বাংলাদেশের খারাপ বস্তির চেয়েও খারাপ। ৮-৯ লাখ টাকা খরচ করে এতটা দুর্বিষহ জীবন কেউ কামনা করে না।'
'আপনার যদি ১০ লাখ টাকা থাকে, তাহলে তা দিয়ে দেশে ছোটখাটো ব্যবসা করা যায়। ১৮ কোটি মানুষের দেশে ছোট্ট একটি দোকান দিয়েও লাভ করা সম্ভব। আমি আপনাদের নিরুৎসাহিত করছি না, কিন্তু এমন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ১০-১৫ লাখ টাকা খরচ করে ঝাঁপ দেবেন না,' বলেন আসিফ নজরুল।
বিদেশগামী কর্মীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, 'যারা বিদেশ যাচ্ছেন, তাদের ৯৯ শতাংশই ভালো মানুষ, ঠিকমতো কাজ করেন। কিন্তু মাত্র ১ শতাংশ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করেন, যার কারণে বাকি ৯৯ শতাংশকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এসব ঘটনার প্রভাব আমাদের দেশ থেকেও শ্রমিক পাঠানো কঠিন করে তোলে।'
এমআই