খুবি প্রতিনিধি:
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম শীর্ষ বিদ্যাপীঠ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) বর্তমানে তীব্র ভূমি সংকটের মুখে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার ভেতরে অবস্থিত মৎস্য অধিদপ্তরের গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি আবাসন সংকট নিরসন ও ক্যাম্পাস সম্প্রসারণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি।
বর্তমানে খুবিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭ হাজারের বেশি হলেও হল রয়েছে মাত্র পাঁচটি। ফলে মাত্র ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় ভূমির এক-পঞ্চমাংশ জায়গা নিয়ে পরিচালিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞানভিত্তিক ডিসিপ্লিনগুলোর মাঠ গবেষণার ক্ষেত্রেও জমির অভাব তীব্র সমস্যা তৈরি করছে।
দীর্ঘদিন ধরেই ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ ও গল্লামারী মৎস্য খামার অধিগ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা। ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর তারা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব বরাবর স্মারকলিপি দেয়। পরবর্তীতে প্রধান ফটক ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও ব্যানার টানিয়ে জমি হস্তান্তরের দাবিতে কর্মসূচি পালন করে।
শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর সচিবদের মৌখিক অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি ৫ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর চিঠি পাঠানো হয়। এছাড়া উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি তুলে ধরেন।
তবে দীর্ঘসূত্রিতায় সমাধান না হওয়ায় ২০২৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন শেষে খামার ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা ব্যানার টানায়। সর্বশেষ ৯ মার্চ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনকালে এ দাবিকে ‘যৌক্তিক’ উল্লেখ করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ক্যাম্পাসের ভেতরে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থিত ১০.৩৫ একর আয়তনের খামারটি নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত পরিকল্পনায় অন্তরায় তৈরি করছে। জমিটি হস্তান্তর করা হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন, গবেষণাগার ও অবকাঠামো উন্নয়ন, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও প্রাকৃতিক ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব হবে। এছাড়া ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি (এফএমআরটি) ডিসিপ্লিনকে পূর্ণাঙ্গ গবেষণা ইনস্টিটিউটে রূপান্তর করা যাবে, যা দেশের মৎস্য গবেষণা ও উৎপাদনে বড় অবদান রাখবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মতে, নদীর নাব্যতা হ্রাস ও দূষণের কারণে গল্লামারী খামারের বর্তমান অবস্থান অনুকূল নেই। তাই জোয়ার-ভাটা সম্পন্ন নদীর তীরে বড় জায়গায় খামার স্থানান্তর যৌক্তিক হবে।
উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, “জমি সংকটের কারণে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গবেষণাগার সম্প্রসারণ ও আবাসন সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না। খামারের জমি হস্তান্তর হলে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনায় তাৎক্ষণিক গতি আসবে।”
এমআই