এম. পলাশ শরীফ, বাগেরহাট প্রতিবেদক:
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালের চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসি। ওই দপ্তরের খোদ উচ্চমান সহকারি কাম হিসাব রক্ষক মাতুব্বর মোঃ রেজোয়ান হোসেন দীর্ঘবছর ধরে নিজ জন্মস্থান এ হাসপাতালে চাকুরি করার সুবাধে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালে যে কর্মকর্তাই আসে তাকেই ম্যানেজ করে নিজ ইচ্ছামাফিক চালান গোটা হাসপাতাল। এবার অভিযোগ উঠেছে আউট সোসিংয়ে কর্মরত আয়া শাহিনা বেগমের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েও কৌশলে কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে শাহিনাকে চাকুরিচ্যুত করে নিজের মেয়ে মরিয়ম আক্তারকে উক্ত পদে যোগদান করান।
এ ঘটনায় হাসপাতালের আউটসোসিং এর চাকুরিচ্যুত (আয়া) শাহিনা বেগম বাদি হয়ে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক, জেলা সিভিল সার্জন সহ দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে রোগীরা নিয়মিত ওষুধ না পাওয়াসহ নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে হাসপাতালের মুল ফটকের সড়কে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় ভুক্তভোগী শত শত নারী পুরুষেরা।
মানববন্ধন থেকে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, এ উপজেলায় প্রায় ৫ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করনে ৫০ যশ্যার এ হাসপাতালটি এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে একের পর এক অনিয়ম অভিযোগ দিয়েও এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছেন না উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ। গোটা হাসপাতালে শুধু নেই আর নেই। ওষুধপত্রসবই কিনতে হয় বাহির (ফার্মেসী) থেকে। সরকার দিচ্ছেন বছরে কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে রোগীদের জন্য ওষুধ। সে ওষুধপত্র যায় কোথায়?।
আউট সোসিংয়ে সদ্য চাকুরিচ্যুত (আয়া) শাহিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, বিগত ৫ বছর ধরে আয়া পদে তিনিসহ আউটসোসিং ৬ জন কর্মচারির হাসপাতালে কর্মরত তাদের ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের এক বছরে মজুরি বেতন ভাতা উত্তোলনের ক্ষেত্রে এ হাসপাতালে হিসাব রক্ষক মাতুব্বর মো. রেজোয়ান হোসেনকে চেকের মাধ্যমে উৎকোচ দিতে হয়েছে ৬০ হাজার এবং নগদ ১২ হাজার মোট ৭২ হাজার টাকা। এ রকম ওয়ার্ডবয়, নাইটগার্ড, আয়াসহ ৫ কর্মচারির নিকট থেকে হাতিয়েছে মোটা অংকের টাকা।
মানববন্ধন থেকে এ সময় মাষ্টার মশিউর ইসলাম, আব্দুল হাকিম, সাইফুল ইসলাম, সুখি আক্তার, আবুল কালাম শিকদার, ফারজানা আক্তার স্থানীয়রা অভিযোগ করে আরও বলেন, উচ্চমান সহকারি মাতুব্বর মোঃ রেজোয়ান হোসেন বিভিন্ন বরাদ্দের ভূয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে টাকা আত্মসাৎকারী আউটসোর্সিং কর্মচারীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ঘুষ নেওয়াসহ নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোন ব্যবস্থা হয়নি। তারা এ ঘটনার তদন্তপূর্বক বিচারের দাবি জানান।
এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ হাসপাতালের উচ্চমান সহকারি কাম হিসাব রক্ষক মাতুব্বর মোঃ রেজোয়ান হোসেন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, তিনি কারও কাছ থেকে টাকা গ্রহন করেননি। তিনি কাউকে চাকুরিচ্যুত ও যোগদান করার অধিকার রাখেননা।
এ সর্ম্পকে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আউটসোসিং চাকুরিচ্যুত আয়া শাহিনা আক্তার কর্মস্থলে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি তিনি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের শুধুমাত্র অবহিত করেছেন। পরবর্তী ব্যবস্থা তাদের নির্দেশনায় হয়েছে। তবে, হিসাব রক্ষক মো. রেজোয়ান মাতুব্বরের মেয়ে কিভাবে এ পদে চাকুরিতে যোগদান করেছেন তিনি অবহিত নন। সাময়িকী ওষুধ সংকট শুধু এ হাসপাতালে নয়। জুলাই-আগষ্টে সব হাসপাতালে কিছুটা সংকট রয়েছে। অচিরেই এর সমাধান হবে।
এমআই