খুবি প্রতিনিধি:
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। খুবির আদিবাসী ছাত্র কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে শনিবার (৯ আগস্ট) এই দিনটি উদযাপিত হয়। দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্যে ছিল আলোকচিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা এবং তথ্যচিত্র প্রদর্শন।
দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়াতে শুরু হয় আলোকচিত্র প্রদর্শনী, যেখানে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়। বিকেলে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক আবুল বাশার নাহিদ।
তিনি বলেন, "আজকের এই বিশেষ দিনে আমরা কেবল একটি দিবস উদযাপন করছি না, বরং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অদম্য স্পৃহা ও বাস্তবতাকে তুলে ধরছি। এই মানুষগুলো দীর্ঘকাল ধরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, এবং ভূমির অধিকারের মতো মৌলিক ক্ষেত্রে গভীর বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার। তাদের জীবন সংগ্রামের এক জ্বলন্ত ইতিহাস।
তবুও, প্রতিকূলতার মুখে তারা কখনও হার মানেননি। নিজেদের অস্তিত্ব, অধিকার এবং মর্যাদার জন্য তারা নিরন্তর সংগ্রাম করে চলেছেন। তাদের ভাষা, পোশাক, লোকাচার, আর লোককথার মধ্যে তারা সযত্নে ধারণ করে আছেন এক অনন্য সংস্কৃতি, যা আমাদের দেশের বৈচিত্র্য ও ঐতিহ্যের এক অমূল্য অংশ।এই সংস্কৃতি কেবল তাদের নিজস্ব সম্পদ নয়, বরং আমাদের জাতীয় পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি সত্যকারের সমতা ও ন্যায়ের উপর ভিত্তি করে একটি সমাজ গড়তে চাই, তাহলে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারকে সর্বোচ্চ সম্মান জানাতে হবে। তাদের কণ্ঠস্বরকে মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে এবং তাদের মতামতকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। আমাদের অঙ্গীকার হোক যে, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এই সংগ্রাম কেবল ইতিহাসের পাতায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং আগামী প্রজন্মের কাছে গর্বের এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।"
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণিত ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী ও সংগঠনের সভাপতি উইনুপ্রু চৌধুরী (মারমা)। তিনি বলেন, "আমরা প্রায়শই সমাজের মূলধারা থেকে উপেক্ষিত থাকি। একজন নাগরিক হিসেবে আমাদেরও যে মৌলিক অধিকার রয়েছে, তা অনেক সময় সরকার এবং সমাজের দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়। আমরা দেশের অন্যান্য নাগরিকদের মতোই সম্মান ও অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই। বিশেষ করে, চিকিৎসা এবং শিক্ষা,এই দুটি মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমরা সরকারের কাছে জোর আবেদন জানাচ্ছি।
পাশাপাশি, আমরা আশা করি সমাজের মানুষ আমাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ পরিহার করবেন। আমাদের জাতিগত পরিচয়ের চেয়েও বড় পরিচয় হলো আমরা মানুষ এবং এই দেশের নাগরিক। আমাদের এই মানবিক ও সাংবিধানিক অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে সকলে আমাদের প্রতি সংবেদনশীল হবেন, এই প্রত্যাশা রাখি।"
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি তেমিয় চাকমা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের পক্ষে নিজেদের সংকট ও সংগ্রামের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে ছিলেন ২১ ব্যাচের শুভ মুন্ডা, ২৩ ব্যাচের অমিক চাকমা ও রেশমি চাকমা, ২৪ ব্যাচের লিমন মাহাতো এবং ২৫ ব্যাচের সাচিং চৌধুরী (মারমা)।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সীমান্ত চাকমা মিশুক। আলোচনা সভার পর সন্ধ্যায় আদিবাসীদের জীবনচিত্রের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
উল্লেখ্য, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আদিবাসী কল্যাণ সমিতির যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে।
এমআই