বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫

সাদা পাথর লুটপাট

এক পাড়ের ‘নিয়ন্ত্রক’ পদ হারালেও অন্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

বুধবার, আগস্ট ১৩, ২০২৫
এক পাড়ের ‘নিয়ন্ত্রক’ পদ হারালেও অন্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

সিলেট জেলা প্রতিনিধি:

দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথরে পাথরখেকোদের লুটপাটের ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত। প্রকাশ্যে লুটপাটের মচ্ছব প্রশ্নবিদ্ধ করেছে প্রশাসনকে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দেশের ক্রীড়া তারকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

নজিরবিহীন লুটপাটের ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের সব পদ স্থগিত করেছে দলটি। সোমবার (১১ আগস্ট) রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে পদ স্থগিতের এ তথ্য জানানো হয়।

কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানীগঞ্জে পাথর কোয়ারি ও রেলওয়ে বাঙ্কারে পাথরখেকোদের তাণ্ডব চললেও হঠাৎ করে সাদা পাথর লুটপাটের নেপথ্যে কী? কারা এই লুটপাটের নেতৃত্বে রয়েছেন? আর প্রশাসনইবা এতটাই নিষ্ক্রিয় কেন? এই প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। লুটপাটের সঙ্গে যুবদলের নাম এলেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়টি সিলেটজুড়ে আলোচনায় রয়েছে।

দুই পাড়ের নিয়ন্ত্রণে যারা
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লুটপাটের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন সাদা পাথর ও রেলওয়ে বাঙ্কার এলাকার পশ্চিমপাড় ও পূর্বপাড়ের মানুষ। পশ্চিমপাড়ের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি (সদ্য পদ স্থগিত) সাহাব উদ্দিন। আর পূর্বপাড়ের নেতৃত্বে সিলেট জেলা যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক বাহার আহমেদ রুহেল।

সূত্র বলছে, এই নেতার নিয়ন্ত্রণে দুই পাড় থাকলেও তারা কখনো স্পটে যান না। তাদের হয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের বিশ্বস্ত লোকেরা।

‘লুটপাটের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন সাদা পাথর ও রেলওয়ে বাঙ্কার এলাকার পশ্চিমপাড় ও পূর্বপাড়ের মানুষ। পশ্চিমপাড়ের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি (সদ্য পদ স্থগিত) সাহাব উদ্দিন। আর পূর্বপাড়ের নেতৃত্বে সিলেট জেলা যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক বাহার আহমেদ রুহেল। এই নেতার নিয়ন্ত্রণে দুই পাড় থাকলেও তারা কখনো স্পটে যান না। তাদের হয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের বিশ্বস্ত লোকেরা।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, রাতের বেলা শ্রমিকদের জিম্মি করে চাঁদা তোলেন পাথর সম্রাটদের লোকজন। মুখে গামছা বেঁধে হাতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভয় দেখিয়ে চাঁদা উত্তোলন করা হয়। সম্প্রতি বাঙ্কারের গর্ত থেকে চাঁদা আদায়ের একটি অডিও রেকর্ড এসেছে জাগো নিউজের হাতে। অডিও রেকর্ডটিতে পাথর উত্তোলনকারী এক ব্যক্তির কাছ থেকে সাহাব উদ্দিনের লোক মো. নুর উদ্দিনের চাঁদা চাওয়ার কথোপোকথন রয়েছে।

তবে সাদা পাথর ও রেলওয়ে বাঙ্কার এলাকার পূর্ব পাড়ের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক বাহার আহমেদ রুহেল। তিনি বলেন, ‌আমি সাদা পাথর এলাকায় ঘুরতে যাওয়ার কোনো প্রমাণ নেই। তার ওপর চাঁদা আদায়ের প্রশ্নই আসে না। যে অভিযোগটি আমার বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে, সেটি মিথ্যে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এমনটা করা হচ্ছে বলেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি (সদ্য পদ স্থগিত) সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

কৌশল পাল্টেছে চাঁদাবাজির
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্টের আগে সাদা পাথরের একটি পাথরেও কেউ হাত দেওয়ার সাহস পাননি। মাঝে মধ্যে রাতের আঁধারে পাথর চুরির চেষ্টা করলেও পুলিশি ও বিজিবি বাধায় লুটকারীরা নিরাপদে সরে যেতেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে বাঙ্কার ও সাদা পাথরে পাথর লুটের চেষ্টা করা হয়। পরে আইনৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে রাতের বেলা কিছু কিছু পাথর লুট অব্যাহত ছিল। সম্প্রতি দিনদুপুরে শুরু হয় পাথর লুট।

স্থানীয় শ্রমিকরা বেলচা, কোদাল ও ঝুড়ি হাতে প্রকাশ্যে পাথর লুটপাট শুরু করেন। প্রতিদিন শত শত বারকি নৌকায় করে লুট করা পাথর নিয়ে যান তারা। পরে সেগুলো ভোলাগঞ্জ, কলাবাড়ি, কালাইরাগ এলাকায় নদীতীরে নিয়ে পাথর ব্যবসায়ী ও সাপ্লাইয়ারদের কাছে বিক্রি করেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ে বাঙ্কারসহ অন্যান্য কোয়ারি থেকে লুট করা পাথর থেকে আগে নৌকাপ্রতি ১৫০০-২০০০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হতো। আর পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করা হতো আরও ৫০০-১০০০ টাকায়। পরে পাথর উত্তোলনকারীরা প্রতিনৌকা পাথর বিক্রি করতেন ৫-৬ হাজার টাকায়। কিন্তু সম্প্রতি চাঁদাবাজিতেও ‘পরিবর্তন’ এনেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতারা।

‘এক বিএনপি নেতা পদ-হারানোর পরপরই সাদা পাথরের পুরো দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। আজ সারাদিন সাদা পাথরে পাথর লুটপাটের কোনো চিত্র চোখে পড়েনি। পাথর তুলতে একটি বারকি নৌকাও ছিল না আশপাশে। অথচ গতকালও বেলচা, কোদাল ও ঝুড়ি হাতে ছিলেন শত শত শ্রমিক। কিন্তু আজ পর্যটক ছাড়া স্থানীয় মানুষজনও কম দেখা গেছে সাদা পাথরে।’

সূত্রমতে, সম্প্রতি শাহ আরেফিন ও রেলওয়ে বাঙ্কার এলাকা থেকে পাথর লুট করে তছনছ করে দেওয়ায় পাথরখেকোদের চোখ পড়ে সাদা পাথরে। গত ১৫ দিন আগে শুরু হয় সাদা পাথরের পাথর লুট। এসময় পাথরখেকোদের সঙ্গে সাধারণ শ্রমিকরাও এসে যোগ দেন। শুরু হয় হরিলুট। গণহারে লুটপাটের কারণে কয়েকদিনেই লন্ডভন্ড হয়ে যায় পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথর।

সাদা পাথর ও বাঙ্কার এলাকা থেকে যে কেউ পাথর তুলতে পারেন। এজন্য নৌকাপ্রতি কোনো চাঁদা দিতে হয় না। তবে উত্তোলন করা পাথর নির্ধারিত সিন্ডিকেটের সদস্যদের কাছেই বিক্রি করতে হবে এবং প্রতিনৌকা পাথর সর্বোচ্চ ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি করা যাবে। এর চেয়ে বেশি দামে কোনো সিন্ডিকেট সদস্য পাথর কিনবে না।

অবাক হওয়ার মতো তথ্য, এক বিএনপি নেতা পদ-হারানোর পরপরই সাদা পাথরের পুরো দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। আজ সারাদিন সাদা পাথরে পাথর লুটপাটের কোনো চিত্র চোখে পড়েনি। পাথর তুলতে একটি বারকি নৌকাও ছিল না আশপাশে। অথচ গতকালও বেলচা, কোদাল ও ঝুড়ি হাতে ছিলেন শত শত শ্রমিক। কিন্তু আজ পর্যটক ছাড়া স্থানীয় মানুষজনও কম দেখা গেছে সাদা পাথরে।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন নাহার বলেন, ‘আজ সোমবার কোনো অভিযান পচিালনা করা হয়নি। গতকাল অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আবার বুধবার অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল