ইবতেশাম রহমান সায়নাভ, বেরোবি প্রতিনিধি :
গত ১৭আগষ্ট বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি), রংপুরে ছাত্র সংসদ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সংযুক্তকরণ ও দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৯-এর ৩৮ ও ৩৯ ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও চূড়ান্তকরণের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটকে দেওয়া হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় খসড়া গঠনতন্ত্র পরীক্ষা ও অনুমোদনের জন্য গত ৩০ জুলাই ইউজিসির সদস্য প্রফেসর মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির দায়িত্ব ছিল খসড়া সংবিধি যাচাই-বাছাই করে মহামান্য চ্যান্সেলরের অনুমোদনের জন্য পাঠানো এবং পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করা।
তবে নানা জটিলতার কারণে গঠিত কমিটি ২০ দিনেও কোনো বৈঠক করতে পারেনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নেয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (১৭আগষ্ট) পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নয়জন শিক্ষার্থী অনশনে বসেন।
তবে সময় গড়াতে আন্দোলন নাটকীয় মোড় নেয়। অনশন শুরুর ৩০ ঘণ্টার মাথায় তিন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।”
অপরদিকে দাবিদাওয়া না আদায় হওয়ায় সোমবার (১৮ আগষ্ট) দুপুরে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন ও দ্রুততম সময়ে ছাত্র সংসদকে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানায়।
আন্দোলনের চাপে উপাচার্যও খাবার গ্রহণ বন্ধ করে দেন এবং উপর মহলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন।
সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদিকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরাও ফিরে আসেন অনশনস্থলে।
সোমবার সন্ধ্যায় উপাচার্য আন্দোলনরত ও নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সিন্ডিকেট কক্ষে বৈঠকে বসেন। তিনি ১০ কার্যদিবস সময় চান এবং আশ্বাস দেন, গ্যাজেট প্রকাশ পেলেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে ২৫ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনার কথাও জানান।
বৈঠক চলাকালীন সময়ে নেতৃত্বদানকারী সাবেক ও কিছু বর্তমান শিক্ষার্থী ভেটো প্রদান করে বৈঠকটি বানচাল করে দেয়।
এর কিছুক্ষণ পর দুই শিক্ষার্থী উপাচার্যের আশ্বাসে আস্থা রেখে অনশন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন। এসময় অভিযোগ ওঠে, দুই সাবেক সমন্বয়কারী অনশন প্রত্যাহারকারী শিক্ষার্থীদের হুমকি ও ট্যাগিং করেছেন।
কিছুক্ষণ পর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সমন্বয়কারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান।
আন্দোলনে ভাটা পড়লে নতুন করে সাবেক শিক্ষার্থীরা অনশনে যোগ দেয় এবং বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের তাদের ক্লাস-পরিক্ষা বয়কট করে অনশনে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান।
মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন অনশন প্রত্যাহারকারী দুই শিক্ষার্থী ও ঘোষণা দেন অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণের। এর কিছুক্ষণ পর আরেক শিক্ষার্থী অনশন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়।
পুনরায় আলোচনার টেবিলে বসে সমন্বয়কারীরা দফায় দফায় উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা চালান। এ সময় গণমাধ্যমে অনশনকে পুঁজি করে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী ও বর্তমান সমন্বয়কারীদের স্বার্থ হাসিলের খবর আসে। চাপের মুখে তারা অবশেষে অনশন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। রাত ১০টায় উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ডাব খাইয়ে অনশন ভাঙান এবং গ্যাজেট প্রকাশের পর নির্বাচনের সম্ভাব্য রোডম্যাপ ঘোষণা করেন।
এমআই