মো. মোস্তাফিজুর রহমান রিপন, ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
ঝালকাঠির নলছিটিতে শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীদের পাঠদানকালে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত (নবীজি (সা:)-কে কটূক্তি) দেওয়ার অপরাধ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় নলছিটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক মিলন কান্তি দাসকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তার পক্ষ অবলম্বন করায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাওলানা মো. ফেরদাউস ও অপর তিন নারী শিক্ষককে শো-কজ করে ৩দিনের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব দিতে বলা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের চিঠি পেয়ে গত ২০ আগস্ট বুধবার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিগত ১৫ মে-২৫ তারিখ নলছিটি গার্লস স্কুলের ভোকেশনাল ১০ম শ্রেণির ছাত্রীদের বাংলা বিষয় পাঠদানকালে মুসলিম ও হিন্দু ধর্মের অবমাননা করে ছাত্রীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেন শিক্ষক মিলন কান্তি দাস। বিষয়টি জানাজানি হলে শহরে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে তিনি উল্টো কয়েকজন শিক্ষকের সহায়তায় ছাত্রীদের দিয়ে তার (মিলন কান্তির) পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করান। এতে শহরের পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে এ ঘটনায় নলছিটিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক করেন। এবং এ ঘটনার তদন্তে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটি দীর্ঘ প্রায় দুই মাস পর মিলন কান্তির মুসলিম ও হিন্দু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার ঘটনা সত্য উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন। এছাড়াও ৪ জন শিক্ষক ছাত্রীদের ভয়-ভীতি ও অভিশাপের কথা বলে মিলন কান্তি দাসের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য ও ভিডিও করার ঘটনা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তদন্ত কমিটি ধর্ম অবমাননা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনায় নলছিটি গার্লস স্কুলের শিক্ষক মিলন কান্তি দাসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন।
((তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নলছিটি গার্লস স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক মিলন কান্তি দাস শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের সময়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনায় নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (তৎকালীন) গত ২৮ মে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আনোয়ারুল আজিম, নলছিটি থানার ওসি মো. আব্দুস ছালাম, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আল আমিন মোল্লা ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. বদরুল আমীনের সমন্বয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে ওই ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গত ১ জুন নলছিটি গার্লস স্কুলের ১০ম শ্রেণির ভোকেশনাল শাখার ১৯ ছাত্রীর (যার মধ্যে ২ জন হিন্দু ছাত্রী স্মৃতি দাস ও ঝিলিক দাস) লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য গ্রহণ করে। এছাড়াও অভিযুক্ত শিক্ষক ও সাংবাদিক মিলন কান্তি দাসেরও লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য গ্রহণ করে। তদন্তকালীন নলছিটি উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।))
তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম (সাবেক) গত ২২ জুলাই ওই তদন্ত প্রতিবেদন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে প্রেরণ করেন। গত ১৯ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নলছিটি গার্লস স্কুল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে ৫ শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়। এর প্রেক্ষিতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে নলছিটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. জলিলুর রহমান আকন্দ জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশনা মোতাবেক ম্যানেজিং কমিটির সভায় শিক্ষক মিলন কান্তি দাসকে প্রাথমিক পর্যায়ে সাময়িক বরখাস্ত এবং অপর ৪ শিক্ষক-শিক্ষিকাকে শো-কজ করা হয়েছে।
এমআই