শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী ঢাকায়

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বড় পরিবর্তনের আশা পাকিস্তানের

শুক্রবার, আগস্ট ২২, ২০২৫
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বড় পরিবর্তনের আশা পাকিস্তানের

নিজস্ব প্রতিনিধি: 

স্বাধীনতার পর প্রথম শুধু দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে বাংলাদেশে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। তিনি একই সঙ্গে দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির সমীকরণে অবস্থান দৃঢ় করতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে ‘বিস্ময়কর’ পরিবর্তনের পথ খুঁজছে পাকিস্তান। তবে বৈদেশিক সম্পর্কে ভারসাম্য বিবেচনায় ইসলামাবাদের সঙ্গে অন্য দেশের মতো স্বাভাবিক সম্পর্ক চায় ঢাকা। 
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে দুই দেশের মধ্যে ছয়-সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি রাখছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া এই মুহূর্তে চার দিনের সফরে ঢাকায় আছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান। 

বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র ভারত তার প্রতিবেশী নিয়ে একটু চাপের মুখে রয়েছে। প্রতিবেশী দক্ষিণ এশিয়ার শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, আফগানিস্তান বা ভুটানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে বৈরিতা না থাকলেও উষ্ণতা নেই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হয়েছে ভারতের। প্রতিবেশীর সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের দূরত্বকে কাজে লাগাতে চাইছে পাকিস্তান। 

দক্ষিণ এশিয়ার এ সবগুলো দেশের সঙ্গে চীনের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক অন্য দেশগুলোর থেকে একটু বেশি ঘনিষ্ঠ। চিরবৈরী ভারতকে সবদিক থেকে চাপে রাখার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে পাকিস্তান।

৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে। এর প্রভাব ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে পড়েছে বলে মন্তব্য করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান। তিনি বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র নীতির দুর্বলতা প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে তাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে যে সম্পর্ক হওয়ার দরকার ছিল, তা দেশটি বজায় রাখতে পারেনি। প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ওপর চাপিয়েছে দিল্লি। তারা সম্পর্ককে সব সময়ে ভূকৌশল ও সামরিকভাবে দেখেছে। বাকি দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি এক কিনা– সেটা পর্যবেক্ষণ করা দরকার ছিল। এ পরিস্থিতিতে বর্তমানে যারা সুযোগ পাবে তারা এ জায়গাটি নেওয়ার চেষ্টা করবে– এটাই স্বাভাবিক। চীনের মিত্র পাকিস্তান সেই চেষ্টা করছে।

দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার সংযোগস্থলে পাকিস্তানের অবস্থানের কথা জানিয়ে সাহাব এনাম খান বলেন, বাংলাদেশ তার জাতীয় ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে শুধু পাকিস্তানের সঙ্গে নয়, অঞ্চলের সবার সঙ্গে সম্পর্ক রাখাটা ঢাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে কারও বৈরী সম্পর্ক নেই। 

আগামীকাল দুপুরে বিশেষ ফ্লাইটে দুই দিনের সফরে বাংলাদেশ আসছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম ও পূর্ব) ড. মো. নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাবেন। এ দিন সন্ধ্যায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে অভ্যর্থনার আয়োজন করেছে ঢাকায় দেশটির হাইকমিশন। এর ফাঁকে বাংলাদেশের শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবেন ইসহাক দার।

পরদিন সকালে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। ইসহাক দার নিজ দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। আর বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বৈঠকের পর ইসকাহ দারের সফর উপলক্ষে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ। এদিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সফরকালে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বেশ কয়েকটি বৈঠকের কথা রয়েছে। 

ইসহাক দার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর গুলশানের বাসায় দেখা করতে যাবেন। জামায়াতে ইসলামীর জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাতের কথা রয়েছে। ২৪ আগস্ট রাতে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করবেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠককে কেন্দ্র করে ছয়-সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি রাখছে দুদেশ। এর মধ্যে দুই দেশের কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি, সাংস্কৃতিক বিনিময় নিয়ে সমঝোতা, দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সমঝোতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে যৌথ গ্রুপ গঠন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সঙ্গে পাকিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমঝোতা, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার মধ্যে সমঝোতা এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের পণ্য ও সেবার মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এবং কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়ে কাজ চলছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এটাই দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের প্রথম কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হতে যাচ্ছে। এর আগে যত বৈঠক হয়েছে, সবই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। এমনও হয়েছে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অন্য কোনো উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ এসেছেন, ফাঁকে বৈঠক করেছেন। তবে শুধু পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেননি।

সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন বৈঠকে দুদেশ সম্পর্কের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। তবে দুই দেশের বাণিজ্য বাড়ানো এবং আন্তঃসংযোগকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বর্তমানে ঢাকা সফরে রয়েছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী। 

বৈঠককে কয়েকটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে রাজনৈতিক সহযোগিতা, অর্থনীতি এবং অন্যান্য সহযোগিতা নিয়ে আলাপ করবে দুদেশ। এ ছাড়া আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করবে ঢাকা ও ইসলামাবাদ।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া, যুদ্ধের জন্য ক্ষতিপূরণ, বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, সম্পদের হিস্যা, ১৯৭০ সালে অবিভক্ত পাকিস্তানের ঘূর্ণিঝড়ের সময় দেওয়া বৈদেশিক সভহায়তার পাওনা পরিশোধের মতো বিষয়গুলোর সুরাহা করা জরুরি বলে মনে করে ঢাকা। বিষয়গুলো বৈঠকে তুলে ধরবে বাংলাদেশ। 
এর আগে ইসহাক দারের বৈঠককে কেন্দ্র করে গত ১৭ এপ্রিল দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টি ইসলামাবাদকে জানিয়ে দিয়েছিল ঢাকা। গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এবং ডিসেম্বরে কায়রোতে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। কায়রোতে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, ‌‌‌‌‌‌বিষয়গুলো বারবার আসছে। আসুন, আমরা সামনে এগিয়ে যেতে সেই বিষয়গুলোর ফয়সালা করি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিষয়গুলো চিরতরে সুরাহা করে ফেলা ভালো হবে।

বৈঠকে আলোচনার বিষয়গুলো জানতে চাইলে একজন কূটনীতিক বলেন, দুই দেশের প্রতিরক্ষা খাত, জঙ্গিবাদ দমন, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি, সার্ককে আবারও সচল করে তোলাসহ সার্বিক বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। দীর্ঘ সময় পরে দুই দেশের বৈঠক হতে যাচ্ছে। এটিকে সফল করতে চায় বাংলাদেশ।

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল