আবুল খায়ের, নিজস্ব প্রতিনিধি:
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার সকালে রাজধানীর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এসময় কবির প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা জাতীয় কবির মর্যাদা ও উত্তরাধিকার সংরক্ষণে একটি সুসংহত নীতিমালা ও আইন প্রণয়নের দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, নজরুল শুধু একজন সাহিত্যিক নন, তিনি বাঙালির মুক্তচেতনার প্রতীক এবং জাতীয় ঐক্যের অনুপ্রেরণা। তাঁর সাহিত্য, সঙ্গীত ও জীবনদর্শন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে শক্তি যুগিয়েছে। অথচ দুঃখজনকভাবে জাতীয় কবি হিসেবে তাঁর মর্যাদা রক্ষায় এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট আইন বা নীতিমালা নেই।
নাট্যকার লুৎফুল আহসান বাবু বলেন, “জাতীয় কবি হিসেবে আমরা নজরুলের নাম উচ্চারণ করি, কিন্তু তাঁর রচনা সংরক্ষণ ও উত্তরাধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো পরিকল্পনা নেই। একটি নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি।”
ছোটগল্পকার কাজী এনায়েত হোসেন উল্লেখ করেন, “যেভাবে জাতীয় দিবস ও জাতীয় নেতাদের জন্য আইনগত সুরক্ষা রয়েছে, তেমনি নজরুলের সাহিত্য ও ঐতিহ্যকে বিকৃতি ও অবহেলা থেকে রক্ষায় একটি আইন থাকা উচিত।”
অ্যাডভোকেট কে এম আশরাফ বলেন, “কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও সাংবিধানিকভাবে তা সুরক্ষিত নয়। সংসদে আইন প্রণয়ন করে এ মর্যাদা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।”
কবি রওশন আলী, লিন্ডা আমিন, গোলাম মোস্তফা তাপস, মতিয়ারা চৌধুরী মিনু, শাকিল হাসান ও গিয়াস হায়দার একযোগে বলেন, নজরুল কেবল সাহিত্যচর্চাতেই নয়, সমাজ সংস্কার ও মানবমুক্তির আন্দোলনেও পথিকৃৎ ছিলেন। অথচ তাঁর রচনা সংরক্ষণ ও প্রচারে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের ঘাটতি স্পষ্ট।
ডা. হাফিজুর রহমান কবির, সংগঠক টিমুণী খান রীনো, রিয়াদ মাহমুদ খান, মো. মনির হোসেন ও ডা. মআআ মুক্তাদীর জাতীয় পর্যায়ে নজরুল গবেষণা ও পাঠচর্চার জন্য একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রস্তাব রাখেন।
বক্তারা মনে করেন, নজরুলের সাহিত্য নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমে তাঁর রচনা অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। একই সঙ্গে নজরুল গানের স্বত্ব ও সুর সংরক্ষণে আধুনিক আর্কাইভ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
সভায় সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়—জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রতিবছর কেন্দ্রীয়ভাবে আরও সুনির্দিষ্ট রাষ্ট্রীয় আয়োজনের দাবি জানানো হবে। বক্তাদের অভিমত, “জাতীয় কবি নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন এখন আর বিলম্ব করার মতো বিষয় নয়; এটি জাতির মর্যাদা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।”
একে