বুধবার, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫
অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন শত শত ভ্রমণপিপাসু লক্ষ্মীপুরের রামগতির মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধ এলাকায় ভিড় করছেন। কেউ স্পিডবোটে চড়ে নদীর বুকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আবার কেউ নতুন জেগে ওঠা লম্ভাখালীরচর ও চর আবদুল্লাহ ঘুরে দেখছেন।
সরকারিভাবে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এখনো এ এলাকাকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দেয়নি। অথচ বিআইডব্লিউটি এর মজুচৌধুরীরহাট নদীবন্দরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলম নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করে বাঁধের সোয়া দুই কিলোমিটার এলাকাকে ‘ট্যুরিস্ট জোন’ ঘোষণা করে কোটেশন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইজারা দেন।
অভিযোগ উঠেছে, বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা শাহ আলম টুরিস্ট জোন হিসেবে কোটেশন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইজারা প্রদান করে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা। এই ইজারার সুযোগ নিয়ে একটি চক্র পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত চাঁদা আদায় করছে। স্পিডবোট, অটো, দোকানদার, হকার এমনকি সাধারণ দর্শনার্থীদের কাছ থেকেও নানা অজুহাতে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে। পর্যটন উন্নয়নের নামে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
জানা যায়, বিআইডব্লিউটিএর ইজারা প্রদান পদ্ধতির ৩৩-এর (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে ৩০ দিনের জন্য শুল্ক /চার্জ আদায়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। মজুচৌধুরীরহাট নদীবন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন আলেকজান্ডার টুরিস্ট ঘাট পয়েন্টটি গত ১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত শুল্ক চার্জ আদায় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনুমতি প্রদান করেন বিআইডব্লিউটিএর মজুচৌধুরীরহাট নদীবন্দরের ভারপ্রাপ্ত বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলম। যার নামে ইজারা দেওয়া হয়েছে তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও চাঁদা তুলতে দেখা গেছে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কর্মীদের। এ পয়েন্ট থেকে বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদিত যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলের একমাত্র বৈধ পয়েন্ট বহদ্দারহাট লঞ্চঘাটের দূরত্ব আধা কিলোমিটার।
এছাড়া বিআইডব্লিউটিএর বন্দর ইজারা ও কোন ধরনের নৌযান থেকে কি পরিমাণ শুল্ক আদায় হবে তার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম থাকলেও চিঠিতে এসব কিছুই উল্লেখ নেই। অননুমোদিত স্থান ইজারা দেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে তৎক্ষণাৎ ওই ইজারার চিঠিটি বাতিল করেন কর্মকর্তা শাহ আলম। কিন্তু ওই চিঠিকে ব্যবহার করে চক্রটি রামগতি উপজলা পরিষদের সামনে থেকে টুরিস্টদের নিয়ে নদীতে ঘুরে বিনাদনের জন্য ঘুরতে যাওয়া ছোট স্প্রিডবোট ও নৌযান থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করা হচ্ছে নিয়মিত।
লক্ষ্মীপুর জেলা বিআইডব্লিউটিএর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ আলমের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিকে পুঁজি করে একটি প্রভাবশালী মহলও চাঁদাবাজি করছে এখানে। যদিও শাহ আলমের বক্তব্য তিনি পরবর্তিতে ওই চিঠি বাতিল করেছেন। এদিকে চাঁদাবাজরা তাদের চাঁদা উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। উপজেলার মাজার রোড এলাকার আবদুস সহিদের ছেলে মোছলেহ উদ্দিনের নাম ব্যবহার করে আদায় করা হচ্ছে টোল। যদিও মোছলেহ উদ্দিন নামে এমন কাউকে খুঁজে পাননি বিআইডব্লিউটিএর কর্তৃপক্ষ ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
ভুক্তভোগী নেছার উদ্দিন ও জাফর আহমদসহ ৪ জন নৌকার মালিক জানান, তাদের ৮টি হলুদ রঙের ছোট ফাইবার বোট রয়েছে। দৈনিক ৩শ’ টাকা আর তার চেয়ে একটু বড়গুলো থেকে দৈনিক ৬শ’ টাকা হারে চাঁদা দিতে হচ্ছে। এখন দর্শনার্থী তেমন নেই। তবুও চাঁদা দিতে হচ্ছে তাদের।
বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, একটা পক্ষ আমাকে ভুল বুঝিয়ে মোছলেহ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি একটি চিঠি ইস্যু করে নিয়েছে। পরে মোছলেহ উদ্দিনের কোনো হদিস না পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই চিঠি আবার বাতিল করে দিয়েছি। চিঠি বাতিলের পর চাঁদা আদায়ের আর সুযোগ নেই।
বন্দর ও পরিবহন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিনের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এমআই