আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বুধবার কিয়েভকে বলেছেন, 'যদি কাণ্ডজ্ঞান ও বিবেচনা কাজ করে, তবে আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার সুযোগ রয়েছে।' তিনি জানান, আলোচনার পথকেই তিনি অগ্রাধিকার দেন, তবে প্রয়োজনে যুদ্ধকে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেও শেষ করতে তিনি প্রস্তুত।
বেইজিং সফরের শেষে পুতিন এ মন্তব্য করেন। সফরকালে চীনের সঙ্গে একটি নতুন গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণে সমঝোতা হয়। পুতিন বলেন, তিনি 'টানেলের শেষ প্রান্তে কিছুটা আলো দেখতে পাচ্ছেন', কারণ তার মতে ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় স্থলযুদ্ধের সমাধান খুঁজতে যুক্তরাষ্ট্র আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
পুতিন সাংবাদিকদের বলেন, 'আমার মনে হয় যদি তাদের কাণ্ডজ্ঞান কাজ করে, তবে এই সংঘাত শেষ করার জন্য গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এটাই আমার ধারণা।'
তিনি আরও বলেন, 'বিশেষ করে আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের মনোভাব লক্ষ্য করছি। শুধু বক্তব্যই নয়, আমরা তাদের আন্তরিকভাবে এই সমাধান খুঁজে বের করার ইচ্ছাও দেখতে পাচ্ছি... আর আমি মনে করি টানেলের শেষ প্রান্তে কিছুটা আলো রয়েছে। এখন দেখা যাক পরিস্থিতি কীভাবে এগোয়।'
'অন্যথায় আমাদের সামনে যে কাজগুলো রয়েছে, তা অস্ত্রের শক্তি দিয়েই সমাধান করতে হবে,' বলে সতর্ক করেন পুতিন।
তবে পুতিন তার দীর্ঘদিনের দাবিগুলোতে কোনো নমনীয়তার ইঙ্গিত দেননি। এর মধ্যে রয়েছে—কিয়েভকে অবশ্যই ন্যাটোতে যোগদানের যেকোনো প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করতে হবে এবং রুশভাষী জনগণের বিরুদ্ধে যে বৈষম্য চলছে বলে মস্কো দাবি করে, তা বন্ধ করতে হবে।
পুতিন বলেন, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসতে প্রস্তুত, তবে শর্ত হলো জেলেনস্কিকে মস্কোতে আসতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এমন বৈঠক অবশ্যই ভালোভাবে প্রস্তুত হতে হবে এবং বাস্তব ফলাফল বয়ে আনতে হবে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মস্কোকে বৈঠকের স্থান হিসেবে প্রস্তাব করাকে 'অগ্রহণযোগ্য' বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
দুই পক্ষের অবস্থান এখনও অনেক দূরে
জেলেনস্কি সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির শর্ত নিয়ে আলোচনা করার জন্য পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের জন্য চাপ দিয়ে আসছেন, যদিও দুই পক্ষের অবস্থান এখনো অনেক দূরে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছেন, পুতিন সম্মত না হলে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে।
শান্তি চুক্তি মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন ট্রাম্পও। তিনি বলেন, জেলেনস্কি ও পুতিনের সাক্ষাৎ হওয়া উচিত। তবে এখন পর্যন্ত তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিলেও তা কার্যকর করেননি।
পুতিন বলেছেন যে সম্ভব হলে তিনি কূটনৈতিকভাবে, 'শান্তিপূর্ণ উপায়ে', যুদ্ধ শেষ করতে চান।
রাশিয়া দাবি করছে, তারা ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল দখল করে সংযুক্ত করেছে। তবে কিয়েভ ও অধিকাংশ পশ্চিমা দেশ এ দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তাদের মতে, এটি অবৈধভাবে ভূখণ্ড দখলের প্রচেষ্টা এবং উপনিবেশবাদী ধাঁচের আগ্রাসী যুদ্ধেরই অংশ।
এমআই