তানভীর আহমেদ:
আজ পবিত্র ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী, মানবজাতির আলোকবর্তিকা, আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শুভ জন্মদিন। এই দিনে তিনি আরবের মক্কা নগরীতে ধরায় এসেছিলেন এক গভীর আঁধারের যুগে। সেই সময়টা ছিল আইয়ামে জাহেলিয়া বা অজ্ঞতার যুগ, যখন মানুষে মানুষে বিভেদ, হিংসা আর অমানবিকতার দেয়াল গড়ে উঠেছিল। মানবিকতা তখন যেন তার শেষ নিঃশ্বাস নিচ্ছিল।
এই ঘোর অমানিশা থেকে মানবতাকে মুক্তি দিতেই করুণাময় আল্লাহ আমাদের প্রিয় নবীকে (সা.) পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সাইয়্যিদুল মুরসালিন – সকল নবী-রাসূলের মাঝে সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর মাধ্যমেই আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার, আল-কুরআন নাজিল করেন। এই ঐশী গ্রন্থটি কেবল একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, বরং এটি জীবনের প্রতিটি বাঁকে পথ দেখানোর এক নিখুঁত নির্দেশনা।
মহানবী (সা.)-এর আগমন কেবল আরবের বালু প্রান্তরে নয়, বরং সারা বিশ্বে এক অসাধারণ মানবিক ঢেউ তুলেছিল। তিনি ধনী-গরিব, উঁচু-নীচু, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি শিখিয়েছিলেন, সত্যিকারের সম্মান মানুষের হৃদয়ে লুকিয়ে থাকে, তার বিত্তে নয়। তার শিক্ষা ছিল ভালোবাসা, দয়া, ক্ষমা আর সহানুভূতির এক অনাবিল স্রোত। এমনকি পশ্চিমা বিশ্বের অনেক চিন্তাবিদও তাঁর এই অসাধারণ পরিবর্তনের কাছে মাথা নত করেছেন।
দুঃখের বিষয়, আজ আমরা তাঁর সেই পবিত্র আদর্শ থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি। আমরা ভুলে গেছি কুরআনের সেই অমূল্য বাণী। সমাজে বিভেদ আর হানাহানি যেন বিষাক্ত সাপের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু মানুষ ধর্মের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করছে, যা পৃথিবীকে অশান্তির আগুনে পুড়িয়ে মারছে। অথচ নবীজি (সা.) আমাদের শিখিয়েছিলেন শান্তি, কল্যাণ আর সম্প্রীতির ধর্ম।
মহানবী (সা.) কেবল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে আটকে থাকতে বলেননি, তিনি মানুষের জন্য জীবনকে সুন্দর করার কথা বলেছেন। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে অন্যায় আর অবিচারের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে হয়। তিনি ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবপ্রেমী, যিনি মানুষের কষ্টকে নিজের কষ্ট বলে মনে করতেন।
ঈদ-এ-মিলাদুন্নবীর এই বিশেষ দিনে আমাদের উচিত কেবল আনন্দ-উৎসব করা নয়, বরং মহানবীর (সা.) সেই অমিয় আদর্শকে নিজেদের জীবনে ধারণ করা। তাঁর ক্ষমা, উদারতা, এবং মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা যদি আমরা সত্যি অনুধাবন করতে পারি, তবেই আমাদের সমাজ আবার শান্তি আর সম্প্রীতিতে ভরে উঠবে। আসুন, আমরা সকলে তাঁর দেখানো পথে চলি এবং একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তুলি।