ইবতেশাম রহমান সায়নাভ:
বাংলাদেশের সড়ক যেন প্রতিদিন এক অনিশ্চয়তার পথে ছুটে চলছে। ভোরে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষটি পরিবারে ফিরে আসবেন কিনা, তা এখন অনেকটা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে গেছে। প্রতিদিনের দুর্ঘটনা, প্রাণহানি আর আহত মানুষের দীর্ঘ তালিকা আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়, কিন্তু কিছুদিন পর আবার সবকিছু আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যায়। অথচ সড়ক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা কেবল মানুষের জীবন রক্ষার জন্য নয়, সভ্য সমাজ গড়ার জন্যও অপরিহার্য।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো অনেকাংশেই পরিচিত। বেপরোয়া গাড়ি চালানো, সড়কে প্রতিযোগিতামূলক রেস, ফুটপাথ দখল, অবৈধ পার্কিং, লাইসেন্সহীন চালক, অনিয়ন্ত্রিত রিকশা ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা—সব মিলিয়ে সড়কে নেমে আসে চরম বিশৃঙ্খলা। ট্রাফিক আইন থাকলেও প্রয়োগের ক্ষেত্রে শৈথিল্য, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
প্রশ্ন হচ্ছে, সমাধান কোথায়?
প্রথমত, চালক ও পথচারী উভয়ের মধ্যেই সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। স্কুল-কলেজ পর্যায় থেকে ট্রাফিক আইন বিষয়ক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, আইন প্রয়োগে শূন্য সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করতে হবে। যে-ই আইন ভঙ্গ করবে, তার পরিচয় বা প্রভাব যাই হোক না কেন, কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, গণপরিবহনের ব্যবস্থাপনায় আমূল সংস্কার আনা জরুরি। নির্দিষ্ট স্টপেজ, সময়সূচি এবং প্রতিযোগিতা-মুক্ত চলাচল নিশ্চিত না করলে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয়।
এছাড়া ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখা, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রাফিক মনিটরিং চালু করা, এবং চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা দরকার। উন্নত বিশ্বে যেমন ট্রাফিক সিস্টেম সমাজের শৃঙ্খলা ও উন্নতির প্রতীক হয়ে উঠেছে, বাংলাদেশেও তেমন একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
সভ্য সমাজ গড়তে হলে শুধু উন্নত ভবন, প্রযুক্তি বা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট নয়। দরকার শৃঙ্খলাপূর্ণ জনজীবন। আর সড়ক শৃঙ্খলা সেই সভ্যতার ভিত্তি। আমরা যদি সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারি, তবে সভ্য সমাজ গড়ার দাবিও অকালপক্ব থেকে যাবে।
লেখক: ইবতেশাম রহমান সায়নাভ
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।