অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
প্রেম, দ্রোহ ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে লক্ষ্মীপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে জেলাব্যাপী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) লক্ষ্মীপুর উপজেলা মিলনায়তনে এ আয়োজন করে নজরুল একাডেমি, লক্ষ্মীপুর জেলা শাখা।
সকাল থেকে শুরু হওয়া এ প্রতিযোগিতায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আগত প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাধিক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। চিত্রাঙ্কন, নজরুল সংগীত, সংগীতের সঙ্গে নৃত্য এবং আবৃত্তি—এই চারটি বিভাগে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। শিশু, কিশোর ও কিশোরী তিনটি বয়সভিত্তিক ক্যাটাগরিতে বিভক্ত এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মো. জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, “নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, মুক্তির বার্তা বহনকারী এক প্রজ্বলিত দীপশিখা। নতুন প্রজন্মকে তাঁর জীবন ও সাহিত্য সম্পর্কে জানাতে এমন আয়োজন অত্যন্ত সময়োপযোগী।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নজরুল একাডেমির উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জেড. এম. ফারুকী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট অভি দাশ। তারা নজরুলের সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও বিদ্রোহী চেতনার ওপর আলোকপাত করেন এবং বলেন, “নজরুল কেবল একজন কবি নন, তিনি ছিলেন একটি যুগের চেতনার নাম।”
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নজরুল একাডেমির উপদেষ্টা ও সংগঠনের অন্যতম কর্ণধার অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন মাহমুদ। সভাপতিত্ব করেন জেলা শাখার সভাপতি, বিশিষ্ট সাংবাদিক সেলিম উদ্দীন নিজামী। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নজরুল একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক কার্তিক রঞ্জন সেনগুপ্ত।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় নজরুলের গান ও কবিতার পাশাপাশি চিত্রকলার মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ তৈরি হয়। আয়োজকেরা জানান, প্রতিযোগীদের পরিবেশনা মূল্যায়নের জন্য অভিজ্ঞ বিচারক প্যানেল গঠন করা হয়েছে।
এ সময় বক্তারা বলেন, “নজরুল ছিলেন সমাজের নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর। তিনি হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকল মানুষের ঐক্যের কথা বলেছেন। তাঁর চেতনা আজও আমাদের সমাজে প্রাসঙ্গিক। নতুন প্রজন্মকে নজরুলের আদর্শে গড়ে তুলতে এমন প্রতিযোগিতা আয়োজন সময়ের দাবি।”
প্রতিযোগিতা শেষে নজরুল একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক কার্তিক রঞ্জন সেনগুপ্ত এক বিশেষ ঘোষণা দেন। তিনি জানান, “আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর শনিবার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি খিলখিল কাজী। সে অনুষ্ঠান হবে আরও বর্ণাঢ্য ও জমকালো পরিসরে।”
তিনি আরও বলেন, “এই আয়োজন নজরুল একাডেমির ধারাবাহিক কার্যক্রমের একটি অংশ। আমরা নিয়মিতভাবে নতুন প্রজন্মের মধ্যে নজরুল চেতনা ছড়িয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শেষে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও দর্শনার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে। অনেকেই মন্তব্য করেন, নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এমন সাংস্কৃতিক আয়োজন সচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর অনুপ্রেরণাদায়ী ভূমিকার জন্য তিনি চিরস্মরণীয়।
এমআই