জসীমউদ্দীন ইতি, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঠাকুরগাঁওয়ে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের ৭৫ টি মামলা করেছে, দীর্ঘ ১৫ বছর দেশের মানুষের ওপর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ যে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে এবং মানুষের সব মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে—এর বিরুদ্ধে বিএনপি ও অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অনেক সংগ্রাম ও লড়াই করেছে। এই দীর্ঘ সময়ে বিএনপি ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক দলের নেতা-কর্মীদের পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে এবং চরম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। সোমবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২৪ শে জুলাই আমাদের ছাত্ররা তরুণেরা, শিশুরা, মায়েরা বোনরা এবং সর্বস্তরের মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য রাজপথে নেমে এসেছে। ঢাকার রাজপথে হাজারো শিশু, নারী, তরুণ, যুবক প্রাণ দিয়েছে। এই ঠাকুরগাঁওয়ে গত ১৫ বছরে আমাদের প্রায় ১২ জন শহীদ হয়েছে। জুলাইয়ে শহীদ হয়েছেন চারজন। আসামি সাড়া দিয়েছে সাত হাজার গণতান্ত্রিক কর্মীর বিরুদ্ধে। হত্যা মামলা থেকে শুরু করে সব ধরনের মিথ্যা মামলা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপি একটি ঐতিহাসিক দল উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আজকে এক মুক্ত পরিবেশে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বিএনপির সম্মেলন করতে যাচ্ছি। এই উপলক্ষে আমরা আমাদের ১২ জন শহীদ সহকর্মীকে স্মরণ করছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি আজকে পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে চাই আমাদের মহান নেতা স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক এবং আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেবকে। তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে তিনি একটি দল গঠন করেছেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। সেই দল দীর্ঘ ৪৭ বছর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে, প্রাণ দিয়েছে এবং গণতন্ত্র থেকে কখনো সরে যায়নি। একইভাবে গভীর শ্রদ্ধা জানাই আমাদের সেই মহান নেত্রীকে, যেই নেত্রী দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছিলেন। আবার দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। একবারের জন্যও মাথা নত করেননি সেই মহান নেত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কে।
তিনি আরও বলেন, আমি আজকে অত্যন্ত আশা নিয়ে, ভরসা নিয়ে এ দেশের মানুষ যার দিকে তাকিয়ে আছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, আমাদের সেই তরুণ নেতা জনাব তারেক রহমানের প্রতি আমার শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, সম্মান জানাচ্ছি। আজকে এই সম্মেলনে আমরা এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে তাঁর নেতৃত্বে আগামী দিনে আমরা গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করব।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি হচ্ছে সেই রাজনৈতিক দল যে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে প্রবর্তন করেছে একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে। বিএনপি হচ্ছে সেই রাজনৈতিক দল, যে রাজনৈতিক দল আমাদের মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। বিএনপি হচ্ছে সেই রাজনৈতিক দল, ফ্যাসিস্ট শাসনে যখন বাংলাদেশ তছনছ হয়ে গেছে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ভেঙে গেছে, সেটাকে আবার নতুন করে গড়ে তোলার জন্য, বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য, অর্থনীতিকে গড়ে তোলার জন্য ৩১ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে। বন্ধুগণ আসুন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এখন বয়স্ক মানুষ, আমি লড়াই করেছি, সামনে থেকে লড়াই করার চেষ্টা করেছি।
২০১৭ সালে সর্বশেষ জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রাজনৈতিক নানা জটিলতায় দীর্ঘ আট বছর ধরে আর সম্মেলন হয়নি। এবার সেই আক্ষেপের অবসান ঘটছে। সম্মেলন ঘিরে সুবিশাল মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, সভাপতি পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় মির্জা ফখরুলের ছোট ভাই, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মির্জা ফয়সাল আমিন আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা বিএনপির সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন প্রার্থী—সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ৯০-এর দশকের ছাত্রনেতা পয়গম আলী, ওবায়দুল্লাহ হক মাসুদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শরিফুল ইসলাম শরীফ। এর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী শরিফুল ইসলাম শরীফ গতকাল রোববার রাতে তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। জেলার পাঁচটি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভার মোট ৮০৮ জন কাউন্সিলর ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেবেন।
ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান হান্নু বলেন, “সম্মেলনে জেলার পাঁচটি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভা—মোট আট ইউনিটের কাউন্সিলর ৮০৮ জন, সংগঠনের অবশিষ্ট চার হাজার নেতা-কর্মী, পাঁচ শতাধিক অতিথি, বিভিন্ন দলের ও বিভিন্ন সমাজকর্মী ও বিশিষ্ট মানুষদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এমআই