জসীমউদ্দীন ইতি ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দক্ষিণ চাড়োল পতিলা ভাষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৪৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯৪ জন মুসলিম শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়টিতে ছয় পদের বিপরীতে ৫ জন শিক্ষক কর্মরত থাকলেও প্রধান শিক্ষকসহ সকলেই হিন্দু ধর্মের। এরফলে গেল ৭ মাসের বেশি সময় ধরে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
উপায় না পেয়ে বছরের শেষ সময়ে বিদ্যালয় ছাড়তে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষক আসবে আসবে করে তারা অনেক সময় অপেক্ষা করেছেন। এখন নিরুপায় হয়ে পাশের মাদ্রাসায় ভর্তি করাতে বাধ্য হচ্ছেন বাচ্চাদের।
এদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছেন, মৌখিকভাবে একাধিকবার সহকারী শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বলেও কাজ হয়নি। হিন্দু ধর্মের শিক্ষক হওয়ার কারণে আরবি পড়াতে বিপাকে পড়েছেন তারা।
বুধবার বিকাল ৩টার পর বিদ্যালয়ে গেলে কথা হয় কয়েকজন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাথে। চতুর্থ শ্রেণির সাইমুন ইসলাম জানান, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে পড়ানোর জন্য স্যার নেই। যিনি ছিলেন, তিনি চলে গেছেন ৭ মাস হলো। আমরা সব বই পড়তে পারলেও ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষাতে পিছিয়ে পড়ছি।
৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আতিক হাসান আহাদ বলেন, আরবি পড়াতে পারছে না কেউ। তিন মাস পরেই ফাইনাল পরীক্ষা। পড়াশোনা না করলে প্রশ্নের উত্তর লিখবো কী?
অভিভাবক খাদেমুল ইসলাম জানান, এই এলাকায় হিন্দু-মুসলিম সব পরিবার বসবাস করে। বিদ্যালয়ে মুসলিম শিক্ষার্থী বেশি। অথচ শিক্ষক নেই। যেখানে কমপক্ষে ৪ জন মুসলিম শিক্ষক প্রয়োজন ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে পড়ানোর জন্য। পরিবেশেরও একটা ব্যাপার আছে।
বিদ্যালয়টির শিক্ষকের তথ্য বলছে, ১৯৮৯ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক সুখদেব চন্দ্র সিংহ যোগদানের পর পরবর্তী ছয় শিক্ষকের মধ্যে ৪ জন শিক্ষকই হিন্দু ধর্মের সেখানে যোগদান করেছেন। মহেন্দ্র নাথ সিংহ ১৯৮৯ সালে, শেফালী বালা ১৯৯২ সালে, প্রীতিলতা ২০২০ সালে এবং দিতী রানী ২০২৩ সালে যোগদান করেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ওই বিদ্যালয়ের কর্মরত সবগুলো শিক্ষকের বাড়ি বিদ্যালয়ের পাশে। নিজেদের সুবিধার জন্য বাড়ির পাশে বদলি নিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থীকে বিপাকে ফেলেছেন। অন্যদিকে এসব বদলি হয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় থেকে। তাদের যাচাই-বাছাইয়ে অবহেলার কথাও বলছেন অভিভাবকরা।
তবে দক্ষিণ চাড়োল পতিলা ভাষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুখদেব চন্দ্র সিংহ বলেন, আমরা একাধিকবার শিক্ষা অফিসে মুসলিম শিক্ষকের জন্য অফিসে জানিয়েছি। আমাদেরকেই স্থানীয়ভাবে ম্যানেজ করতে বলছে। এক সপ্তাহে ৩ শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ছেড়েছে। আরও কয়েকজন অভিভাবক বাচ্চাদের নিয়ে যাবে কথাবার্তা বলছে।
জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার অতুল চন্দ্র সিনহা জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। চেষ্টা করছি আশপাশের কোনো শিক্ষককে ডেপুটেশনে সেখানে দেওয়া যায় কিনা। বিদ্যালয়ে মুসলিম শিক্ষার্থী বেশি হওয়া সত্ত্বেও এমন অবস্থা কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বদলি অনলাইনে, সেখানে মতামতের সময় হিন্দু-মুসলিম বলার সুযোগ নেই।
তবে বেশ কয়েকজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষক বদলি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের অনুমোদন ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। প্রতিটি বিদ্যালয় মাসিক রিপোর্ট জমা করে অফিসে। এতকিছু তথ্য থাকার পরেও ৯৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি শিক্ষক থাকবে না, এটা অবহেলা ছাড়া অন্য কিছু নয়।
একে