রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষা

রোববার, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫
শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষা

মো: শহিদুল ইসলাম খান

রহস্যময় এই পৃথিবীতে প্রকৃতি অনেক জীব সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃতিগত কিছু শিক্ষা জন্মের আগেই জীব পেয়ে থাকে। যার কারণে গর্ভাবস্থায় বা অংকুরোদম অবস্থায় কিভাবে নিজে পৃথিবীতে মাকলুকাত সংঙ্গী হবে তা প্রকৃতির অপার মহিমার শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েই পৃথিবীতে আগমন হয়। যেমন একটা শিশু বা বা”চা কিভাবে জন্ম লগ্ন হতে খাবার গ্রহন করবে, এবং প্রতিকুল পরিবেশ কান্নার ডাকের মাধ্যমে জানান দেয়। এ শিক্ষা প্রকৃতি লব্ধ শিক্ষা। সেই প্রগৈতিহাসিক কাল হতে প্রকৃতির সৃষ্টিকে জয় করার জন্য চলে আসছে শিক্ষার গবেষনা। যুগে যুগে প্রেরিত হয়েছে ধর্ম প্রবর্তক। এ ছাড়া বিদ্যজন মনীষি গবেষনা লব্ধ জ্ঞান শিক্ষার জন্য প্রচার করেছেন। কেউবা শিক্ষার আলো প্রচারে, প্রসারে দিতে হয়েছে নিজ জীবন, সহ্য করতে হয়েছে অনেক অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন। কারণ একটা কথা সর্বজন স্বীকৃত,‘‘যে মানুষ, যে পরিবার যে জাতি যত বেশি শিক্ষার আলোয় আলোকিত সে জাতি যত সভ্য, তত উন্নত ও সমৃদ্ধ। তাই উন্নত ও প্রাঞ্জলম জীবন যাপনে শিক্ষার কোন বিকল্প নাই। শিক্ষা একটি জীবন ব্যাপি চলমান প্রক্রিয়া।

শিক্ষা কি? এর সর্বজন স্বীকৃত কোন সংঙ্গা নেই। নানা মনীষি নানান ভাবে স্ব-স্ব দৃষ্টি কোন হতে একে সংঘায়িত করেছেন। শিক্ষা একটি সংস্কার যোগ্য প্রক্রিয়া তাই এর সংঘা অন্ত নেই। শিক্ষার সংঙ্গা, তাৎপর্য্য বিশ্লেষণ করে বলা যায় শিক্ষা হল একটি অনন্ত চলমান প্রক্রিয়া, প্রকৃতি হতে অনুশীলন ও অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞানের মাধ্যমে যদি আচরণিক, শারীরিক, আধ্যাতিœক, মানষিক, সামাজিক, নৈতিক, চারিত্রিক গুণের যদি বিকাশ বা পরিবর্তন হয় তাই হল শিক্ষা।

শিক্ষায় পরিবর্তনীয় যে গুণ গুলোর কথা বলা হয়েছে বর্তমান অবক্ষয়ের দৃশ্যপটে আমি নৈতিক শিক্ষা নিয়ে আলোকপাত করা জরুরী মনে করি। কারন নৈতিক জ্ঞান হীনতার কারণে আমাদের সমাজ রাষ্ট্র, রূপ নেয় বর্বরতায়। সমাজের বিশৃংখলা হানাহানি মারামারি কলহ বিবাদ, হত্যা সব কিছুর জন্য অনেকটা দায়ী নৈতিক শিক্ষা। বিদেশে যে সফল দেশ বা জাতি আজ উন্নক ও সমৃদ্ধ, বিশ্লেষনে দেখা যায় তারা নৈতিক শিক্ষায় সমৃদ্ধ।

নৈতিকতার একটি ইংরেজি হল ঊঞঐওঈঝ, যা গ্রীক শব্দ এর অর্থ হল চরিএ বা রীতি। চরিত্র বা রীতি উরম ও হতে পারে অধম ও হতে পারে । উওম চরিএ সমাজের জন্য কল্যান কর, শাান্তির কারন আর অধম চরিএের কারনে সমাজে সৃষ্টি হয় হানাহনি,খুন,বিশৃংখলা, তাই সুস্থ জীবন যাপন আতিœক শান্তির জন্য নৈতিক শিক্ষা অপরিহার্য। নৈতিকতা ব্যক্তির মৌলিক মানবিয় গুন ও অমূূল্য সম্পদ যা অর্জন করলে জীবন সুন্দর ও উন্নত হবেই। এজন্য সকল শিক্ষার সাথে অগ্রাধিকার ভিওিতে আমাদের নৈতিক শিক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে। শিক্ষার আমাদের সামষ্টিক অর্জন হলেও নৈতিক শিক্ষার অভাবে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। নৈতিক শিক্ষার অভাবে সর্বএ বিশৃংখলা হিং¯্রতা। বিশে^ আজ বাজছে যুদ্ধের দামামা। দিন দিন মানুষ হয়ে উঠছে আতœ কেন্দ্রিক। সহযোগীতা, সহমর্মিতা আজ প্রায় বিলুপ্ত। আপন স্বার্থ চারিতার্থ করার জন্য মানুষ মানুষকে হিংসা করে। আর এই হিংসা রূপ নেয় জিগিংসায় যার কারণে সমাজ আজ বিশৃংখলা হানাহানি, মারামারি, হত্যার ক্ষেত্র ভুমিতে পরিণত হয়েছে। তাই সুন্দর সাবলীল সৌহার্য্যপূর্ণ সমাজ বিনির্মানে নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নাই। আমাদের এখন ভাবতে হবে কিভাবে আমাদের মানব সম্পদকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা যায়। কোন উৎসেব আলোকে নৈতিক শিক্ষা প্রসার করা যায়। এ বিষয়ে আমার নানা গবেষনা, মতামত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে নি¤েœর উৎস অবলম্বনে মানুষকে নৈতিক শিক্ষায় দীক্ষিত বা ধাবিত করা যায়।

১। মা ও পরিবার : মানুষের প্রথম শিক্ষার স্তর হল মা ও পরিবার। মা ও পরিবার উর্ধর ও পরিস্কার মস্কিকে নৈতিক শিক্ষাকে রোপন করে দিতে হবে। মিথ্যা না বলা, চুরি না করা, কারো মনে কষ্ট না দেয়া অন্যের ক্ষতি না করা বিপদে মানুষের পাশে দাড়ান। মানুষ মানুষের জন্য, স্বার্থহীন হওয়া, প্রতিবেশীর প্রতি ভাল আচরণ করা,অন্নহীনকে অন্য দেয়া। অপরের ব্যথায় নিজে ব্যথিত হওয়া, নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে অন্যকে সুখী করা, এ সকল শিক্ষা প্রথমে মা ও পরিবারকেই দিতে হবে। এ জন্যই বলা একজন শিক্ষিত মা যেমন শিক্ষিত জাতি উপহার দিতে পারে তেমনি একজন নীতিবান মা তার সন্তানকে নৈতিক শিক্ষায় সমৃদ্ধ করতে পারে।

২। ধর্মীয় শিক্ষায় উৎসাহিত করা: পৃথিবীতে অনেক ধর্ম আছে, ধর্ম মত পার্থক্য থাকলেও মৌলিক কিছু কিছু বিষয়ে মত পার্থক্য নাই। যেমন কোন ধর্মে বলা নাই মিথ্যা কথা বল,হত্যা কর, পর সম্পদ লন্ঠন কর, কোন অধিকার ক্ষুন্ন কর। বরং সব ধর্মেই বলে সৎ হও, বিনয়ী হও মানুষের উপকার কর, মানুষকে অযথা কষ্ট দিওনা, কারো সম্পদ জোর পূর্বক ভোগ দখল কর না, অনাহারীকে অন্ন দাও, পরোপকার কর। সুতরাং ধর্মীয় বানী নিয়মিত চর্চায় মানুষ নৈতিক শিক্ষায় দীক্ষিত হবে।

৩। শিক্ষক ও শিক্ষালয়: একজন আদর্শ ও নীতিবান শিক্ষক নৈতিক শিক্ষার অন্যতম ক্ষেত্র কথায় আছে যেমন শিক্ষক তেমন শিক্ষার্থী, শিক্ষক যে সকল গুণে গুণান্বিত ঐ গুণাবলী নহরের পানির মত শিক্ষার্থীর দিকে ধাবিত হবে। তাই নীতিবান আদর্শ শিক্ষক দিয়ে শিক্ষাদান করালে শিক্ষার্থী নৈতিক শিক্ষায় সমৃদ্ধ হবে। শিক্ষালয়ের পরিচালনা পর্ষদ রাষ্ট্র সকল শিক্ষকদের আগে নিজেদের নীতিবান নৈতিকতা শিক্ষা দিয়ে তার আলোকে শিক্ষালয়কে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার্থীর মধ্যে কৃত্রিম বৃদ্ধি মত্তা জাগ্রত করতে হবে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থী নিজে মানবিক ও আদর্শ হয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে। উন্নত দেশে শিক্ষালয়ে নৈতিক ও মানবিক শিক্ষার উপর জোর বেশী দেয়া হয়। প্রাক-প্রাথমিক হতে নানা কৌশলী শ্রেণি কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে নৈতিক শিক্ষা দেয়া হয়।

৪। মনীষীদের জীবনী অনুসরণ: নৈতিক শিক্ষায় সমৃদ্ধ করার জন্য শিক্ষার্থীদের মনীষীদের জীবনী পড়তে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদের ত্যাগ,জীবন যাপন প্রক্রিয়া, শিক্ষার্থীদের বলতে হবে। নীতি ও নৈতিকতার জন্যই আজও তারা মরিয়াও অমর। এ কথা কোমল ভংগিতে কোমল হৃদয়ে স্থান করিয়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে শাসন দিয়া সমাজে শান্তি শৃংখলা আনয়ন সম্ভব না নৈতিক শিক্ষাই শুনাতে পারে শান্তির অভয় বানী। নৈতিক শিক্ষা না থাকলে সুশাসনের সৃষ্টি হবে না আর সৃষ্টি হলেও তা স্থায়ীত্ব পাবে না।

৫। সর্বত্র নৈতিক শিক্ষার প্রচলন: নৈতিক শিক্ষা পরিবার বা শিক্ষক শিক্ষালয় হতে প্রসারণ সম্ভব নয়। সমাজের সর্বত্র এটার প্রচলন প্রয়োজন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় প্রচারক যারা আছে তারা সকল কে এই শিক্ষায় অনুপ্রানিত করতে পারে। সর্বস্তরের মানুষ যদি নৈতিক শিক্ষায় দীক্ষিত হয় তাহলে গড়ে উঠবে আলোকিত মানুষ, আলোকিত সমাজ, শান্তিময় পৃথিবী।

৬। নীতিবান বন্দু নির্বাচন : কথায় আছে সংঘ দোষে পাথর ভাসে, চুম্বকের সাথে যদি লোহার মিলন হয় তাহলে লোহাও ক্ষনিকের জন্য চুম্বক হয়। মানুষ সংগী ছাড়া চলতে পারে না কিন্তু যদি খারাপ সংগী হয় তাহলে আস্তে আস্তে সেও খারাপ হবে আর যদি একজন নীতিবান সংগী হয় তাহলে নীতিবান বন্দুর প্ররোচনায় তার সংগীর মধ্যে বিকশিত হবে নৈতিকতা। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে খেয়াল রাখতে হবে, তার সন্তান যেন সংগী বা বন্ধু নির্বাচনে ভুল পন্থা অবলম্বন না করে। একজন ভাল বন্ধুর বা সংগীর কারণে জীবনে সফলতা আসে এমন অনেক উদাহরণ আছে।

সুতরাং সুন্দর শান্তিময় সমাজ বিনির্মানে নৈতিক শিক্ষা অপরির্হায্য। যে যানবাহনের চালক নেই সেই যানবাহন কখনও গন্তব্যে পৌছতে পারে না, তেমনি যে শিক্ষায় নৈতিকতা নেই সে শিক্ষা সমাজে ডেকে আনে অশান্তি হিংসা, বিদ্বেস হানাহানি তাই শিক্ষার সর্বস্তরের সবার উচিত নৈতিক শিক্ষার প্রতি বিশেষ নজর দেয়া যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থী নৈতিক শিক্ষার আলোকে শিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠতে পারে। এজন্য পরিবার,সমাজ, রাষ্ট্র সবার ভুমিকা কাম্য। 

লেখক: মো: শহিদুল ইসলাম খান
প্রধান শিক্ষক
মোরেলগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল