মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিভ্রান্তির বেড়াজালে বৃটিশ সরকারের পদবি সমূহ

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫
বিভ্রান্তির বেড়াজালে বৃটিশ সরকারের পদবি সমূহ

ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম:

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা বহুদিন ধরেই বৃটিশ রাজনীতিতে সক্রিয়। হাউস অব কমন্সে আমাদের একাধিক সংসদ সদস্য আছেন। তবে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কেউই বৃটিশ সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হননি। সে ক্ষেত্রে ভারতীয় ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূতরা অনেক এগিয়ে ছিলেন। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত রাজনীতিবিদদের মধ্যে একাধিকজন মন্ত্রী ছিলেন, এমনকি এখনো আছেন। পশ্চিমা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নগরী লন্ডনের মেয়রও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের অবস্থান আরও শক্তিশালী; বর্তমান বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও ভারতীয় বংশোদ্ভূত।

গত বছর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুইজন নারী সংসদ সদস্য—রুশনারা আলী ও টিউলিপ সিদ্দিকী—বৃটিশ সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন, যদিও তারা ছিলেন জুনিয়র মন্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে বৃটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটি তো বটেই, বাংলাদেশেও দেখা যায় প্রবল উচ্ছ্বাস। কিন্তু তাদের পদবির প্রকৃতি নিয়ে প্রচণ্ড বিভ্রান্তি ছড়ায়। অনেকে মনে করেন তারা পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন, আবার কেউ কেউ সিভিল সার্ভিসের পদবির সাথে গুলিয়ে ফেলেন।

বৃটিশ মন্ত্রিপরিষদের কাঠামো

বৃটেনে কোনো মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি হচ্ছেন Secretary of State—যাকে আমরা বাংলাদেশের পূর্ণ মন্ত্রীর সমতুল্য বলতে পারি। এই Secretary of State-ই হচ্ছেন কেবিনেট মেম্বার এবং নিয়মিত কেবিনেট মিটিংয়ে অংশ নেন।
তাদের অধীনে থাকে দুই স্তরের জুনিয়র মন্ত্রী:
Minister of State → মধ্যম স্তরের জুনিয়র মন্ত্রী
Parliamentary Under-Secretary of State (PUSS) → সর্বনিম্ন স্তরের জুনিয়র মন্ত্রী
এই জুনিয়র মন্ত্রীরা মন্ত্রণালয়ের দৈনন্দিন কাজ পরিচালনা করেন কিন্তু সাধারণত কেবিনেট মিটিংয়ে বসেন না। অন্যদিকে, Permanent Secretary হচ্ছে বিভাগের শীর্ষ আমলা, যিনি রাজনীতিবিদ নন বরং ক্যারিয়ার সিভিল সার্ভেন্ট। এই শব্দের সাথে রাজনৈতিক Secretary of State-কে গুলিয়ে ফেলা যাবে না।

রুশনারা আলীর পদবী

রুশনারা আলী এমপি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন Parliamentary Under-Secretary of State for Homelessness and Democracy পদে। এটি ছিল Ministry of Housing, Communities and Local Government–এর জুনিয়র স্তরের একটি পদ। ঐ মন্ত্রণালয়ে একজন পূর্ণ মন্ত্রী (Secretary of State) ও একাধিক জুনিয়র মন্ত্রী থাকেন। রুশনারা আলীর অবস্থান ছিল জুনিয়র মন্ত্রীদের মধ্যে একেবারে মাঝামাঝি স্তরে। অর্থাৎ তিনি কোনোভাবেই পূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন না; বরং সর্বনিম্ন স্তরের রাজনৈতিক মন্ত্রী ছিলেন।

টিউলিপ সিদ্দিকীর পদবী

একই সময়ে টিউলিপ সিদ্দিকী এমপি নিয়োগ পান Economic Secretary to the Treasury পদে। প্রচলিতভাবে এই পদটিকে “City Minister” বলেও ডাকা হয়। বৃটিশ অর্থ মন্ত্রণালয় বা His Majesty’s Treasury-র প্রধান হচ্ছেন Chancellor of the Exchequer—যাকে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর সমতুল্য বলা যায়। তার অধীনে আছেন Chief Secretary to the Treasury এবং আরও কয়েকজন জুনিয়র মন্ত্রী। তাদের মধ্যে টিউলিপ সিদ্দিকী ছিলেন দ্বিতীয় স্তরের জুনিয়র মন্ত্রী। সুতরাং, তিনিও ছিলেন কেবিনেট-বহির্ভূত একজন রাজনৈতিক মন্ত্রী।

বিভ্রান্তির মূল কারণ

বাংলাদেশে “মন্ত্রী” শব্দটি সাধারণত পূর্ণ মন্ত্রী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। তাই বৃটেনে কোনো “Minister” বা “Secretary” পদ শুনে গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষ ধরে নেন এটি পূর্ণ মন্ত্রী পদ। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। বৃটিশ মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী বোঝাতে “Secretary of State” শব্দ ব্যবহার হয়। অন্যরা হচ্ছেন জুনিয়র মন্ত্রী।

তাছাড়া “Permanent Secretary” নামক আমলাদের পদবীর সাথে “Secretary of State” নামক রাজনীতিবিদদের পদবী অনেকটা মিল থাকায় বিভ্রান্তি আরও বাড়ে।

বৃটেন একটি শতাব্দীপ্রাচীন ট্রেডিশন-নির্ভর দেশ। তাদের প্রশাসনিক টাইটেল, পদবি ও রীতি-নীতি দীর্ঘ ইতিহাস বহন করে। অনেক সময় এগুলো আমাদের কাছে বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে, কিন্তু বৃটিশরা এগুলো তাদের অলিখিত সংবিধান ও ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ধরে রেখেছে। তাই বৃটিশ রাজনীতিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কেউ মন্ত্রিসভায় যুক্ত হলে তার প্রকৃত পদবী ও অবস্থান বোঝা জরুরি—অন্যথায় অযথা বিভ্রান্তি ও অতিরঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।

লেখক : ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
কলামিষ্ট, সমাজ সেবক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, মানবাধিকার কর্মী ও রাজনীতিবিদ
চেয়ারম্যান - ডেমোক্রেসি রিসার্চ সেন্টার (ডিআরসি)।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল