আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলন শুরুর ঠিক আগে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও কানাডা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাধা সত্ত্বেও এই দেশগুলো এই পদক্ষেপ নিলো।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলকে জানিয়েছেন যে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি ‘সহায়ক হবে না’ বলে তারা অস্ট্রেলিয়াকে জানিয়েছিল। তবে অস্ট্রেলিয়া তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতা করছে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সতর্ক করে বলেছেন যে এর জবাবে ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখল করে নিতে পারে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার রোববার বিকেলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় বলেন, “শান্তি ও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান পুনর্জীবিত করতে আমি আজ অসাধারণ এ দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করছি যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।”
এর আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যদি ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হয়, তাহলে যুক্তরাজ্য তাদের নীতি পরিবর্তন করবে। এটি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এর আগে বলেছিলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ 'সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত' করে। তবে যুক্তরাজ্যের মিনিস্টাররা যুক্তি দেন এই বলে যে, দীর্ঘমেয়াদী শান্তি চুক্তির আশা বাঁচিয়ে রাখার জন্য এই কাজ করার একটা নৈতিক দায়িত্ব ছিল।
সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে। তারা গাজার দুর্ভিক্ষ ও সহিংসতার চিত্র তুলে ধরেছেন যেটি প্রধানমন্ত্রী আগেই 'অসহনীয়' বলে উল্লেখ করেছেন। গাজা শহরে ইসরায়েলের সর্বশেষ স্থল-অভিযানে লাখ লাখ মানুষকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।
এই অভিযানকে জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা 'বিপর্যয়কর' বলে বর্ণনা করেছেন।
দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বলতে পশ্চিম তীর এবং গাজা স্ট্রিপে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনকে বুঝায়।
সপ্তাহের শুরুতে, জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, গাজায় ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে। তবে ইসরায়েল জাতিংঘের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে, এটিকে 'বিকৃত ও মিথ্যা' বলে উল্লেখ করেছে।
যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের অব্যাহত সম্প্রসারণকে তুলে ধরেন, যেটি আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী অবৈধ। কারণ, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর বা 'কি ফ্যাক্টর'।
জুলাই মাসে যখন স্বীকৃতির কথা ঘোষণা করা হয়েছিল তখন যুক্তরাজ্যের বিচারমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বিতর্কিত 'ই-১' সবতি স্থাপন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেছেন। সেসময় সমালোচকরা সতর্ক করে বলেছেন, এটি একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আশার অবসান ঘটাবে।
ডেভিড ল্যামি বলেন, " পশ্চিম তীরে আমরা যে ব্যাপক সম্প্রসারণ দেখছি, বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা দেখছি এবং ই-১ উন্নয়ন গড়ে তোলার যে উদ্দেশ্য এবং ইঙ্গিত আমরা দেখছি তারই ফলস্বরূপ একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির পরিণতি।"
এ মাসের শুরুতে স্যার স্টার কিয়ারমারের সাথে দেখা করার সময় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতির প্রতিশ্রুতির জন্য তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। ডাউনিং স্ট্রিটে এই দুই নেতাই একমত হয়েছেন যে, ফিলিস্তিনের ভবিষ্যত শাসন ব্যবস্থায় হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না।
এদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেছেন, ‘কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যত গঠনে অংশীদারিত্বের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।’
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে এটিকে "সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করা" বলে আখ্যা দিয়েছেন। তবে ব্রিটিশ মন্ত্রীরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি শান্তি চুক্তির আশা বাঁচিয়ে রাখতে এটি একটি নৈতিক দায়িত্ব।
এমআই