তালুকদার হাম্মাদ, ইবি প্রতিনিধি:
স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হয়েও নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অবকাঠামোগত দূর্বলতা। সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অল্প সংখ্যক ড্রেন। আর এই ড্রেনের অভাবে বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবে যায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান। যা রীতিমতো শিক্ষার্থীদের জন্য সৃষ্টি করে ভোগান্তি। বৃষ্টির পর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক চলাচলে বাঁধাগ্রস্ত হয় শিক্ষার্থীরা। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং ড্রেন সংস্কারের অভাবে সঠিকভাবে পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদারকির অভাব ও উদাসিনতায় দীর্ঘদিনের এ সমস্যার সুরাহা হচ্ছে না বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। এদিকে বর্ষাকাল শেষ হলে ড্রেন নির্মাণ ও অন্যান্য মেরামত কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অফিস।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের প্রতিটি হলের চারপাশে রয়েছে ড্রেন। এছাড়া ক্রিকেট মাঠের পূর্ব পাশ ঘেঁষে একটি, জিয়ামোড় থেকে ‘জুলাই ৩৬’ হলে যাওয়ার পথে একটি, জিমনেসিয়াম ও পেয়ারাতলার চারপাশে একটি ড্রেন রয়েছে। এ ড্রেনগুলো একটি অপরটির সাথে সংযুক্ত। তাছাড়া নতুন প্রশাসন ভবন মোড় থেকে শুরু করে মেডিকেল মোড় পর্যন্ত একটি এবং বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের পাশে কয়েকটি ড্রেন রয়েছে। কিন্তু সংস্কারের অভাবে অকেজো হয়ে পড়েছে অধিকাংশ ড্রেন। নতুন প্রশাসন ভবন মোড় থেকে শুরু করে মেডিকেল মোড় পর্যন্ত থাকা ড্রেনটি মাটি এবং ময়লা আবর্জনায় ভরে সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এদিকে জিয়া মোড় থেকে জুলাই ৩৬ হলে যাওয়ার পথে থাকা ড্রেনটি ভরে গেছে ঝোপঝাড়ে। অন্য ড্রেনগুলো কিছুটা ভালো অবস্থায় থাকলেও বৃষ্টি হলে নিষ্কাষন করতে পারছে না মাত্রাতিরিক্ত পানি। যে কারণে ড্রেন থাকা স্থানগুলোর চারপাশও বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবে যাচ্ছে। বিশেষ করে ক্যাম্পাসের জিয়া মোড়, জিয়া হল গেইট সংলগ্ন রাস্তা এবং সাদ্দাম হল আর টিএসসিসির মাঝের মোড় পুরোপুরি পানির নিচে তলিয়ে যায়। যে কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্ন ঘটে।
অন্যদিকে ঝাল চত্বর, বাংলা মঞ্চ সংলগ্ন আমতলা, বটতলা, ইবনে সিনা বিজ্ঞান ভবন ও বিজ্ঞান ভবনের মধ্যকার রাস্তা, লাইব্রেরীর চারপাশ, চিকিৎসা কেন্দ্রের সামনের রাস্তা, শহীদ আনাস হল থেকে শাহ আজিজুর রহমান হলের পকেট গেইট সংলগ্ন রাস্তা, ডায়না চত্বরের উত্তর-পশ্চিম মোড়সহ ক্যাম্পাসের অধিকাংশ জায়গাতে নেই কোনো ড্রেন। প্রতিবার বৃষ্টি হওয়ার পর ১-২ দিন যাবৎ পানি জমে থাকে এ জায়গাগুলোতে। নিষ্কাশনের অভাবে পানি কমে যাওয়ার পরও জায়গাগুলো হয়ে থাকে কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল এবং জায়গাগুলো ভরে থাকে ময়লা ও আবর্জনায়। যা রীতিমতো দূর্গন্ধ সৃষ্টি করে। ফলে এসব জায়গা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। যেকারনে ক্লাস ও একাডেমিক ভবনে আসা যাওয়া ও সাধারণ চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয় শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া বাধাগ্রস্ত হয় শিক্ষার্থীদের নিত্য নৈমিত্তিক আড্ডা। এছাড়া চলাচলের এসব রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে থাকায় মাঝেমধ্যেই ঘটে ছোটখাটো দূর্ঘটনা।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, ড্রেনের ব্যাপারটা আসলে প্রকিয়াধীন। ভিসি স্যারের সাথে আমরা কথা বলে বিভিন্ন এস্টিমেট করছি। আপাতত ব্লকড হয়ে থাকা ড্রেনগুলো আমরা ঠিক করার জন্য কাজ করছি। আম বাগানে মাটি দেওয়ার পর আমরা ঢালাই করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছি এবং চারপাশ ও ভিতর দিয়ে ড্রেনের ব্যবস্থা করার চিন্তা করছি। যাতে আর কখনোই পানি না জমে। সাদ্দাম হলে আর টিএসসিসির মাঝখানের মোড়টাতেও আমরা মাটি দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। ধীরে ধীরে সবকিছুরই প্রক্রিয়া আমরা হাতে নিচ্ছি। বিশেষ করে আমাবাগানে শীঘ্রই শিক্ষার্থীরা দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে পাবে। তাছাড়া আনাস হল থেকে পকেট গেইট যাওয়ার মাটির রাস্তাটা আমরা পাকা করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। তবে বৃষ্টির কারণে পদক্ষেপগুলো শুরু হতে একটু দেরি হচ্ছে। লাইব্রেরী পূর্ব পাশের রাস্তার ব্যাপারে এখনো কোনো পরিকল্পনা নেই। যদিও কোনো বাজেটই অনুমোদন হয়নি। তবে শীঘ্রই আমরা প্রারম্ভিক কাজ শুরু করব।
স্টেইট অফিস প্রধান আলাউদ্দিন আলাল বলেন, আমরা আসলে লেবার দিয়ে শুধু ড্রেন পরিষ্কার করে দেওয়ার কাজ করি। আর ড্রেন ভেঙে গেলে সেটা মেরামত করার কাজ করে প্রকৌশল অফিস। সাধারণত হল বা কোনো জায়গা থেকে যদি কোনো অভিযোগ আসে, তারপর আমরা সেটা লেবার দিয়ে পরিষ্কার করে দিই। লাইব্রেরি আর মীর মশাররফ হোসেন ভাবনের পাশে যে ড্রেনটা ওটার ব্যাপারে লাইব্রেরি বা ঐ ভবন থেকে কোনো অভিযোগ না আসায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আসলে ঐখানে বিল্ডিংয়ের কাজের সব ময়লা আবর্জনা ফেলায় ওটা বন্ধ হয়ে আছে। দেখি আমরা ট্রেজারার স্যারের সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিব।
তিনি আরও বলেন, অক্টোবর মাসের দিকে আমরা ড্রেনকে ঘিরে ফেলা ঝোপঝাড়সহ সকল ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে দিব। যাতে বর্ষার আগ পর্যন্ত আর কোনো সমস্যা না হয়। আমাদের মেশিনটা একটু নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মেরামত কাজে পাঠানো হয়েছে। ওটা ফিরে আসলেই আমরা কাজ শুরু করব। আগে একসময় ২৬ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাজ করত এখন মাত্র ১১জন কাজ করে। তাই এটা একটু কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। তারপরও যেখানে যা সমস্যা আছে সবকিছু আমরা লেবার নিয়ে ঠিকঠাক করার ব্যবস্থা করব।
এমআই