রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

ইউজিসির প্রতিবেদন

বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধেকের বেশি শিক্ষকের নেই উচ্চতর ডিগ্রি

শনিবার, অক্টোবর ৪, ২০২৫
বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধেকের বেশি শিক্ষকের নেই উচ্চতর ডিগ্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রায় ৫৬ শতাংশ শিক্ষকের উচ্চতর ডিগ্রি নেই। বাকি শিক্ষকদের মধ্যে ৩৮ শতাংশ পিএইচডি এবং ৬ শতাংশ এমফিল বা সমমানের ডিগ্রিধারী। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে (২০২৩ সালের তথ্য নিয়ে তৈরি) এ চিত্র উঠে এসেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার ওপর জোর দেওয়ার কথা থাকলেও যোগ্য শিক্ষকের ঘাটতির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না বলে শিক্ষাঙ্গনে অভিযোগ আছে। অধিকাংশ শিক্ষকের উচ্চতর ডিগ্রি না থাকায় গবেষণামূলক পড়াশোনা করানো তাঁদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে শুরুর পদেই পিএইচডি থাকার আবশ্যকতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে। তবে বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি।

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে বিশেষ করে শুরুর পদে (প্রভাষক) পিএইচডি ডিগ্রি বাধ্যতামূলক নয়। তবে পদোন্নতিতে এ ডিগ্রিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পাস করার পরপরই শিক্ষক হন। কিন্তু স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পড়াতে গিয়ে অনেকেই হিমশিম খান বা ভালোভাবে পড়াতে পারেন না বলে অভিযোগ আছে। যা দেশের উচ্চশিক্ষার মানের ওপর প্রভাব পড়ছে।

পদোন্নতির ক্ষেত্রে পিএইচডি ও স্বীকৃত জার্নালে গবেষণা প্রকাশকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতিতে পিএইচডি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ২০২৩ সাল থেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের অনেক দেশেই শিক্ষক নিয়োগে কেবল পিএইচডি নয়, পোস্টডক্টরাল গবেষণাও বাধ্যতামূলক। তাই বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগে শুরুর পদেই অন্তত পিএইচডি থাকা বাধ্যতামূলক করা উচিত।

ইউজিসির সাম্প্রতিক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ২০২৩ সালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ৫৩টি (পরে আরও কয়েকটি অনুমোদন হয়েছে)। এগুলোতে মোট শিক্ষার্থী ৪৮ লাখ ২১ হাজার ১৬৫ জন। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৪৪ লাখ ১৫ হাজার ৬৪৯। এক বছরের ব্যবধানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার কমেছে। বর্তমানে মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৫৩ শতাংশ এবং ছাত্রী ৪৭ শতাংশ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২ হাজার ২৫৭টি কলেজে শিক্ষার্থী পড়েন প্রায় ৩৪ লাখ। যা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মোট শিক্ষার্থীর ৭০ দশমিক ২০ শতাংশ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে বাকি ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক ১৬ হাজার ৮০৫ জন এবং শিক্ষার্থী প্রায় তিন লাখ। বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষকের মধ্যে ৫ হাজার ৩৪১ জন অধ্যাপক, ৩ হাজার ৪৮ জন সহযোগী অধ্যাপক, ৫ হাজার ৯৭ জন সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক ২ হাজার ২৮৮ জন। এ ছাড়া অন্যান্য পদে শিক্ষক আছেন ১ হাজার ৩১ জন। যেমন ২০২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৪টি বিভাগে ২ হাজার ৪১৮ জন শিক্ষক ছিলেন। এর মধ্যে ৯২৩ জন অধ্যাপক, ৪৫৯ জন সহযোগী অধ্যাপক, ৫২৯ জন সহকারী অধ্যাপক, ৩৮২ জন প্রভাষক এবং ১২৫ জন অন্যান্য পদে আছেন।

সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলে মোট ৬ হাজার ৪০৭ জন শিক্ষকের পিএইচডি এবং ১ হাজার ৩২ জনের এমফিল বা সমমানের ডিগ্রি আছে। অর্থাৎ উচ্চতর ডিগ্রিধারী শিক্ষক ৭ হাজার ৪৩৯ জন, যা মোট শিক্ষকের ৪৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। শিক্ষকদের মধ্যে শিক্ষাছুটিতে আছেন ২ হাজার ৬৮৩ জন।

ইউজিসির কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এবার কোনো সুপারিশও রাখা হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পিএইচডি থাকার আবশ্যকতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সোচ্চার আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন। এ নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও লেখালেখি করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে শুরুর পদেই ন্যূনতম পিএইচডি থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, যেহেতু ইউনিভার্সিটি, তাই তার আইন ও নিয়মকানুনও সেই মানেরই হতে হবে। বহু আগে ইউরোপের দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পাস ব্যক্তিদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হতো। এখন সেখানে শিক্ষক নিয়োগে কেবল পিএইচডিই যথেষ্ট নয়, পোস্টডক্টরাল গবেষণাও থাকতে হয়। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অনেক উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হতে হলে পিএইচডি ও পোস্টডক্টরাল গবেষণা থাকতে হয়। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানেও এ নিয়ম আছে। বাংলাদেশেও শুরুর পদে পোস্টডক্টরাল গবেষণা না থাকলেও অন্তত পিএইচডি থাকা দরকার।

কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হওয়ার জন্য পিএইচডি বাধ্যতামূলক করায় অধ্যাপক কামরুল হাসান আশা প্রকাশ করে বলেন, একসময় শুরুর পদেও পিএইচডি বাধ্যতামূলক হবে।

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল