নিজস্ব প্রতিবেদক:
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে অ্যানথ্রাক্সে মোছা. রোজিনা ওরফে আজেনা বেগম (৪৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বিষয়টি সঠিক নয় বলে নিশ্চিত করেছে গাইবান্ধার স্বাস্থ্য বিভাগ।
রোববার (৫ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধার সিভিল সার্জন মো. রফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, গতকাল (৪ অক্টোবর) রোজিনা নামের ৪৫ বছর বয়সী ওই রোগী সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। ওই রোগীর প্রেশার ছিল এবং প্রেশারের কারণে হার্টে সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া ওই নারী জটিল রোগে আক্রান্ত ছিল। একই সঙ্গে তার হাতে ফোসকা ছিল। যেটাকে আমরা অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ বলছি। কিন্তু ওই নারী অ্যানথ্রাক্সের কারণে মারা গেছে বিষয়টি সঠিক নয়। এটি বিভ্রান্তিমূলক। কেননা, যে অ্যানথ্রাক্সের চামড়ায় উপসর্গ হয়, সেটিতে মানুষের মৃত্যুর কোনো কারণ নেই। মূলত ওই নারী অন্যান্য জটিল রোগের কারণে মারা গেছেন।
আক্রান্ত পশু জবাই না করার পরামর্শ দিয়ে আতঙ্ক বা গুজব না ছড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে গুজব ছাড়ানো নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন সিভিল সার্জন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের পশ্চিম বেলকা গ্রামের (দকিদার মোড়) মো. আবুল হোসেনের স্ত্রী রোজিনা তার অসুস্থ ছাগল জবাই করেন। মাংস কাটার সময় হারের আঘাতে ওই নারীর হাতে খোচা লাগে এবং পরে দুইটি ফোসকা দেখা দেয়। এতে ওই নারী প্রথমে স্থানীয় এবং পরে উপজেলা কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। সেখান থেকে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজে রেফার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (পঃপঃ) ডা. দিবাকর বসাক বলেন, গতকাল চিকিৎসা নিতে আসা ওই নারীর প্রেসার, শ্বাসকষ্ট এবং অন্যান্য জটিল সমস্যা ছিল। একই সঙ্গে তার হাতে চামড়ায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ ছিল।
এ সময় তিনি আরও বলেন, চামড়ায় অ্যানথ্রাক্স আক্রান্তের কারণে ওই নারীর মৃত্যু হওয়ার কথা নয়। কেননা এই রোগে মানুষের মৃত্যু নেই বললেই চলে। এরপরও বিষয়টি রমেক হাসপাতাল বলতে পারবেন। ৪ অক্টোবর ওই রোগী খুব খারাপ অবস্থায় আমাদের এখানে এসেছিলেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়েই তাকে রংপুর মেডিকেল রেফার করে।
অ্যানথ্র্যক্স রোগে মারা গেছে কী-না এ ধরনের প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা পরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। তবে হিস্টরিতে এটা দেখা গেছে য়ে তার শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ ছিল। এছাড়া ওই সময় দেখেছি ওই রোগীর প্রেসার কমে গিয়েছিল।
উল্লেখ্য, গত ২৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার বেলকার কিশামত সদর গ্রামে মাহাবুর রহমানের একটি গরু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে সেটি জবাই করে মাংস ভাগাভাগি করা হয়। এ কাজে অংশ নেওয়া ১১ জনের শরীরে কয়েকদিন পর ফোসকা, ঘা এবং পাঁচজনের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। আক্রান্তদের হাত, মুখ, চোখ ও নাকে ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট হতে থাকে। পরে আক্রান্তরা চিকিৎসকের মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হোন। তাদের মধ্যে মোজা মিয়া, মোজাফফর মিয়া, শফিকুল ইসলাম ও মাহাবুর রহমানসহ পাঁচজন বেসরকারি ক্লিনিক ও গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নেন এবং অন্যরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেন।
এ ঘটনার পরে গতকাল ওই নারীর জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেও তার হাতে ফোঁসকা থাকায় ফেসবুক ও একাধিক গণমাধ্যম অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করে।
একে