নিজস্ব প্রতিবেদক:
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাতা বাড়ানোর দাবিকে যথেষ্ট যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পোস্টে উপ প্রেস সচিব লেখেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করছেন। তাদের এই দাবি অনেকটাই ন্যায্য। আমি গ্রামে বড় হয়েছি। গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া করেছি। শিক্ষকদের কষ্ট নিজের চোখে দেখেছি। তাদের বাড়ি ভাড়ার দাবি পূরণ করা গেলে সেটা সব দিক থেকে সবার জন্য আনন্দদায়ক হবে। তবে এই দাবি আদায় করতে গিয়ে শিক্ষকরা যদি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেন সেটা হবে দুঃখজনক।
তিনি লেখেন, সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে তাদের দাবিগুলো বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদের বাড়ি ভাড়া কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় এই বিষয়ে সরকার কাজ করছে। আপাতত পাঁচ শতাংশ বাড়িভাড়া বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। আগামী বাজেটের আগে আরও পাঁচ শতাংশ যাতে বাড়ানো যায় সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। কিন্তু শিক্ষকদের অনেকেই চাইছেন সরকার এখনই যেন তাদের দাবিগুলো মেনে নেয়। এটা কতটা বাস্তবসম্মত তা বিবেচনার দাবি রাখে।
আবুল কালাম আজাদ মজুমদার লেখেন, সরকার পাঁচ শতাংশ বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দিলেও বলেছে ন্যূনতম বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি হবে ২ হাজার টাকা। এর ফলে যাদের বেতন স্কেল ২০ হাজার টাকার কম তাদের বাড়ি ভাড়া মূলত দশ শতাংশই বাড়বে। যতদূর জানি অধিকাংশ শিক্ষকের মূল বেতনই ২০ হাজার টাকার কম। সুতরাং তাদের দাবির একটা বড় অংশ এতেই পূরণ হয়ে যাচ্ছে।
উপ প্রেস সচিব লেখেন, যেসব স্কুল এমপিওভুক্তির সব শর্ত পূরণ করেছে তাদের শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি সরকার অবশ্যই বিবেচনায় রাখবে। কিন্তু আমাদের এটাও ভেবে দেখতে হবে এমপিওভুক্ত হয়েছে কারা? বছরের পর বছর রাজনৈতিক বিবেচনায়, তদবিরের জোরে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। ছাত্র-শিক্ষক থাকুক না থাকুক, তারা এমপিওভুক্ত হয়েছে। কোনো রকম একটা ছাপড়ি ঘর হলেই হলো। সাম্প্রতিক পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলগুলোতেও এর প্রতিফলন দেখা গেছে।
তিনি লেখেন, গতকাল প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে ২০০’র অধিক কলেজে কেউ পাস করেনি। এসএসসিতেও মোটামুটি একই হাল। এখন, যাদের শিক্ষার এই হাল, তাদেরকে কেন জনগণের করে বাড়তি অর্থ দেওয়া হবে?
উপ প্রেস সচিব আরও লেখেন, এমপিওভুক্ত স্কুলগুলো সরকার নির্ধারিত ক্রাইটেরিয়া মেনে এমপিওভুক্ত হয়েছে কিনা, সেই বিষয়টি তাই তদন্ত করে দেখার এখন সময় এসেছে। ক্রাইটেরিয়া মানার ধারের কাছে নেই। ফলাফলেরও অবস্থা তথৈবচ। এমন সব স্কুলকে, স্কুলের শিক্ষককে কেন বাড়তি সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে সেটা ভেবে দেখার অবকাশ আছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার বলেছেন, বর্তমানে শিক্ষক সংগঠনগুলো বাড়ি ভাড়া ২০ শতাংশ বৃদ্ধিসহ অন্যান্য দাবিতে আন্দোলন করেছেন। সরকারের আর্থিক বাস্তবতা অনুযায়ী ৫ শতাংশ বৃদ্ধি (ন্যূনতম ২ হাজার টাকা) নিয়ে আলোচনা চলছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমি শুরু থেকেই শিক্ষকদের বেতন, প্রশিক্ষণ ও মর্যাদা বৃদ্ধির পক্ষে সোচ্চার। আমার মন্ত্রিসভার সহকর্মীরাও এই বিষয়ে সহানুভূতিশীল। আমি বিশ্বাস করি, নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশে আগামী বছর আরও সম্মানজনক কাঠামোর দিকে যেতে পারব। সরকার শতাংশভিত্তিক বাড়িভাড়া বিষয়ে শিক্ষকগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সংবেদনশীল।
শিক্ষা উপদেষ্টা আরও বলেন, সামর্থ্য অনুসারে শতাংশভিত্তিক বাড়ি ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। একইসঙ্গে আমরা শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের দিকেও কাজ করছি- কারণ বেতন শুধু নয়, সম্মান ও সক্ষমতাও গুরুত্বপূর্ণ।
একে