নিজস্ব প্রতিবেদক:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় বর্ষাসহ তিনজনকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি।
পুলিশ জানায়, জোবায়েদ ও মাহির দুজনের সঙ্গেই প্রেম ছিল বর্ষার। একসঙ্গে দুজনের সঙ্গে প্রেম করায় একপর্যায়ে জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে সে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তার সঙ্গে কাজ করে প্রেমিক মাহির। গত ২৬ সেপ্টেম্বরের পর থেকে জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে আসছিল। এজন্য অনলাইনে চাকু কেনেন তারা।
পুলিশ জানায়, জোবায়েদ মারা যাওয়ার আগে প্রেমিকা বর্ষার আরেক প্রেমিক মাহিরের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে বর্ষার কাছে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিল। কিন্তু বর্ষা তাকে সাহায্য না করে মৃত্যুর মুখে ফেলে দেয়।
গ্রেফতার তিনজন হলো-বর্ষা, তার প্রেমিক মাহির রহমান ও মাহিরের বন্ধু ফারদীন আহমেদ আয়লান।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী।
তিনি বলেন, তদন্তে জানা গেছে ছুরিকাঘাতের সময় বর্ষা ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিল। জোবায়েদ যখন ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় বাঁচার জন্য আকুতি জানাচ্ছিল, তখন বর্ষা তাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘তুমি না সরলে আমি মাহিরের হব না।’
জোবায়েদ আহত অবস্থায় দ্বিতীয় তলার দরজায় নক করে সাড়া না পেয়ে তৃতীয় তলায় বর্ষাদের দরজায় যায়। বর্ষা দরজা খুললেও তাকে সাহায্য করেনি। অল্প সময়ের মধ্যেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে জোবায়েদের মৃত্যু হয়।
ডিসি সামী আরও বলেন, বর্ষাদের বাসা পাঁচতলায় হলেও ঘটনার সময় সে তিনতলার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে নিচের হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করে। হত্যাকাণ্ড ঘটে দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে।
একই সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) এস এম নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনার দিন মাহির ও তার বন্ধু আয়লান অনলাইনে ছুরি কিনে বর্ষার বাসায় যায়। বর্ষা তখন তার শিক্ষক ও প্রেমিক জোবায়েদকে ডেকে নেয়। পরে বর্ষার বাসার সিঁড়িতে মুখোমুখি হয় দুজন। সেখানে মাহির জোবায়েদকে বর্ষার কাছ থেকে সরে যেতে বলে। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে মাহির জোবায়েদের গলায় ছুরি মারে।
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, পুরো হত্যার পরিকল্পনাই ছিল বর্ষার। বিষয়টি অনেকটা বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার মতো। বর্ষা দুই প্রেমিকের কাউকেই ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তাই সে নিজেই পরিকল্পনা সাজায়।
তিনি আরও জানান, মাহির ও বর্ষা ২৬ সেপ্টেম্বর থেকেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এখানে রাজনৈতিক কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি। এটি নিছক ত্রিভুজ প্রেমের জটিলতা থেকে ঘটেছে।
এমআই