চবি প্রতিনিধি:
ঘড়ির কাটায় সময় তখন রাত সাড়ে ১০টা। খাবার-দাবার এবং পড়াশোনা শেষ করে সবেমাত্র বিছানা গুছিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ফরহাদ। শোবার বিছানা পরিচ্ছন্নের জন্য বালিশ সরাতেই আঁতকে ওঠেন তিনি। বালিশের নীচে প্যাঁচিয়ে বসে আছে ডোরাকাটা এক বিষাক্ত সাপ।
গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় এমনই এক ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পুলিশ ফাঁড়ি গলির সুরমা কটেজ নামের এক প্রাইভেট ছাত্রাবাসে। ভুক্তভোগী ফরহাদ হোসেন ২২-২৩ সেশনের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় স্থান পরিদর্শন এবং এ বিষয়ে খোলামেলা আলাপ করেছেন ফরহাদ।
তিনি বলেন, এই কটেজে (আবাসন) প্রায় দেড় বছর ধরে বসবাস করছেন। সেদিন বৃহস্পতিবার বালিশ সরাতেই দেখতে পান সাপ, ফণা তুলে ফোঁস করে আছে। সরাসরি এমন ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়ে উদ্বিগ্ন আছি, শুনেছি এর আগে এখানে এক সিনিয়র ভাইয়ের সাথেও এমন ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, বলেন ফরহাদ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও রুমমেট দিদার হোসেন রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী। শুক্রবার রাতে পাশের বিছানায় শোয়া থেকে উঠে দিদার জানান, সেদিন রাতে সাপটি ছিটকে আমার খাটের নিচে লুকায়। পরে আশপাশের সবাইকে ডাকা হলে লাঠি দিয়ে বিষাক্ত সাপটি মারা হয়।
আজ বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক ইসহাক ভুঁইয়ার সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এত বড়ো ক্যাম্পাস থাকার পরেও শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ ছাত্রাবাসে ভাড়ায় থাকতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০০ শতাংশের মধ্যে ২১ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য আগামী ১ বছরের মধ্যে আরো ১০ শতাংশ আবাসনের ব্যবস্থা এবং বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্প ত্বরান্বিত করার জন্য কাজ করব।
পাহাড়ি ভূ-প্রকৃতি আর সবুজের চাদরে মোড়ানো এই ক্যাম্পাসে সাপের কামড়ের ভয় যেন শিক্ষার্থীদের নিত্যদিনের সঙ্গী। বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে যোগাযোগ করা হলে চিকিৎসক ডা: মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে সাপে কাটার কোনো ভ্যাকসিন নেই। এটি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে। ভ্যাকসিন সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় এটি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, আর এটি এখানে রাখলেও ব্যবহারের সময় উলটো অ্যাকশনের বদলে রিঅ্যাকশন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে।
কোনো শিক্ষার্থী তাৎক্ষণিক বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হলে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে প্রেরণ করে দিই– বলেন ডা: মোহাম্মদ আবু তৈয়ব।
আজ শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে মুঠোফোনে সুরমা কটেজের মালিক মিসেস সুরমা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমি এই ঘটনা শুনিনি, আমাকে কেউ জানায়নি। আপনার (প্রতিবেদক) কাছ থেকেই শুনলাম। আর তা ছাড়া এই এলাকায় সাপের উপদ্রব বেশ। এখানে বসবাসরত শিক্ষার্থীদেরকে ১৫ দিন পরপর বিছানাপত্র এবং নিয়মিত কাপড়-চোপর রোদে শুকাতে বলি। স্যাঁতসেতে পরিবেশে সাপের আনাগোনা বেশি হয়।
তিনি আরো বলেন, এখানে বসবাসরত চবি শিক্ষার্থীদেরকে আমার সন্তানের মতোই স্নেহ করি, কারণ আমার ছেলেও ঢাবিতে পড়াশোনা করে। উল্লেখ্য, সর্বশেষ সাপ তাড়াতে ব্যবহৃত ফেনল বা কার্বলিক অ্যাসিড ছাত্রাবাসের কোণে ঝুলিয়ে বা মাটিতে পুঁতে রাখার পরামর্শ দেন এই প্রতিবেদক।
একে