আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়ামে এত নিরাপত্তার মধ্যেও কীভাবে হলো দুঃসাহসী চুরি- এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে অনেকের মনে। সেখানে কীসের ঘাটতি ছিল, চোরেরা কীভাবে ঢুকলো আর কীভাবেই বা নিরাপদে বেরিয়ে যেতে পারলো?
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিদর্শিত এই মিউজিয়াম থেকে রাজকীয় গহনা চুরির এক সপ্তাহ পর শনিবার প্রথম সন্দেহভাজনদের গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে প্যারিস প্রসিকিউটরের কার্যালয়।
কীভাবে চুরি হলো, কীভাবে জানা গেলো ও কীভাবে সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করা হলো- নিচে পুরো ঘটনার ধাপে ধাপে বিবরণ দেওয়া হচ্ছে:
১০ অক্টোবর
চোরেরা একটি ‘বাস্কেট লিফট’ (ট্রাক-সংযুক্ত উত্তোলন যন্ত্র) চুরি করে। প্যারিসের প্রসিকিউটর লরেন্স বেকো জানিয়েছেন, তারা নিজেদের বৈধ ক্রেতা পরিচয় দিয়ে ট্রাকটির মালিক কোম্পানির সঙ্গে দেখা করে এবং হুমকি দিয়ে গাড়িটি নিয়ে যায়, যদিও কোনো সহিংসতা হয়নি। কোম্পানিটি এরপর ট্রাক চুরির অভিযোগ দায়ের করে ল্যুভরেস নামে শহরে, যা প্যারিস থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নামের মিল দেখে অনেকে ঘটনাটিকে কাকতালীয় বলে মনে করেন।
১৯ অক্টোবর
সকাল ৯টা: ল্যুভর মিউজিয়াম দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
সকাল ৯টা ৩০ মিনিট: সংস্কারকাজের কর্মীর ছদ্মবেশে চোরেরা বাস্কেট লিফটযুক্ত ট্রাকটি ল্যুভরের সামনে ফুটপাতে দাঁড় করায়। তারা ট্রাকের চারপাশে ট্র্যাফিক কোন বসিয়ে ‘রক্ষণাবেক্ষণ কাজ’ চলছে এমন ভান তৈরি করে। দুইজন মই বেয়ে ব্যালকনিতে উঠে জানালা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।
সকাল ৯টা ৩৪ মিনিট: দুজন চোর অ্যাপোলো গ্যালারির দক্ষিণ প্রান্তে প্রবেশ করে। নিরাপত্তা কক্ষের অ্যালার্ম বাজে এবং একজন কর্মকর্তা রেডিওতে মূল নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে বিষয়টি জানান।
সকাল ৯টা ৩৫ মিনিট: চোরেরা ডিস্ক কাটার ব্যবহার করে দুটি প্রদর্শনী কাচ কেটে রাজকীয় গহনা নিয়ে নেয়। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা নিয়ম অনুযায়ী দর্শনার্থীদের সরিয়ে দেন। মিউজিয়ামের ব্যবস্থাপক কাছের থানায় ফোন করে চলমান চুরির কথা জানান এবং অবিলম্বে সহায়তা চান।
সকাল ৯টা ৩৬ মিনিট: নিয়ন্ত্রণ কক্ষের এক কর্মকর্তা বিশেষ নিরাপত্তা বাটন চাপেন, যা সরাসরি প্যারিস পুলিশের সদর দপ্তরের সঙ্গে সংযুক্ত।
সকাল ৯টা ৩৭ মিনিট: সব দরজা বন্ধ রাখার নির্দেশ পাঠানো হয়।
সকাল ৯টা ৩৮ মিনিট: চোরেরা একই জানালা দিয়ে বেরিয়ে যায় এবং দুই স্কুটারে অপেক্ষমাণ সহযোগীদের সঙ্গে পূর্ব দিকে পালিয়ে যায়। তারা সাইটে একটি হলুদ জ্যাকেট ও ডিস্ক কাটারসহ কিছু সরঞ্জাম ফেলে যায়। ফরাসি সংস্কৃতি মন্ত্রী রাশিদা দাতি জানিয়েছেন, নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এক চোরকে ট্রাকটিতে আগুন ধরাতে বাধা দেন।
সকাল ১০টা ৩৪ মিনিট: দাতি সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা দেন, ‘আজ সকালে ল্যুভর মিউজিয়ামে চুরি সংঘটিত হয়েছে।’
পরে সেদিনই নেপোলিয়ন তৃতীয়ের স্ত্রী, সম্রাজ্ঞী ইউজেনির পান্না জড়ানো রাজমুকুট—যাতে ছিল এক হাজার তিন শতাধিক হীরা—মিউজিয়ামের বাইরে থেকে উদ্ধার করা হয়। তবে চোরেরা অমূল্য ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন আরও আটটি বস্তু নিয়ে পালায়।
২২ অক্টোবর
মিউজিয়াম আবারও খুলে দেওয়া হয়। প্রসিকিউটর বেকো জানান, প্রায় ১০০ তদন্তকারী কাজ করছেন, পাশাপাশি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা মিউজিয়াম ও ট্রাক থেকে নেওয়া দেড় শতাধিক নমুনা বিশ্লেষণ করছেন।
২৬ অক্টোবর
বেকো জানান, শনিবার সন্ধ্যায় কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তিদের একজন প্যারিস শার্ল দ্য গোল বিমানবন্দর থেকে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে কোনো গহনা উদ্ধার হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করেননি তিনি।
এই অভিযান পরিচালনা করেছে প্যারিস পুলিশের বিশেষ ইউনিট, যারা সশস্ত্র ডাকাতি, গুরুতর চুরি এবং শিল্পকর্ম চুরির মামলার তদন্তে বিশেষজ্ঞ।
এমআই