দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:
গোপালগঞ্জের পাশ্ববর্তী জেলা মাদারীপরের ডাসার উপজেলার নিভৃত পল্লীতে অবস্থিত দক্ষিণবঙ্গের খ্যাতিমান বিদ্যাপিঠ শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়, শশিকর-এর সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে শুক্রবার রাত ১০ টা পর্যন্ত কলেজ প্রাঙ্গণ মুখরিত হয় হাজারো সাবেক শিক্ষার্থীর পদচারণায়।
প্রায় আড়াই হাজার সাবেক শিক্ষার্থী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের জন্য নিবন্ধন করেন। এ অনুষ্ঠানে বর্ণিল পোশাকে হাজির হন সত্তরের দশক থেকে শুরু করে সদ্য সাবেক হওয়া শিক্ষার্থীরা। তারা নেচে-গেয়ে সময়টা নিজেদের ও সবার জন্য উপভোগ্য করে তোলেন।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি মো. আনিসুর রহমান তালুকদার। প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. অমল হালদার। সভাপতিত্ব করেন পুনর্মিলনী উদযাপন পরিষদের সভাপতি স্বপন কুমার সরকার।
অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ ও শোভাযাত্রা, উদ্বোধনী নৃত্য, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত, অতিথিদের বরণ, ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠ, আলোচনা পর্ব, স্মৃতিচারণ, মধ্যাহ্নভোজ ও মিলনমেলা, স্থানীয় ও অতিথি শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
মহাবিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডার এবং বর্তমানে ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অধিদপ্তরের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা পলাশ বাগচী স্মৃতিকাতর হয়ে বলেন, ‘শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এই মহামিলন যেন এক আবেগঘন উৎসব! দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর প্রিয় বন্ধুদের সান্নিধ্যে এসে শৈশব-তারুণ্যের স্মৃতিতে ফিরে যাওয়ার এই অভিজ্ঞতা সত্যিই অমূল্য। কলেজ জীবনের সোনালী দিনগুলো এক লহমায় চোখের সামনে ভেসে উঠল। এই মিলনমেলা প্রমাণ করে, সময়ের ব্যবধান বন্ধুত্বের বাঁধনকে আরো দৃঢ় করে। আয়োজকদের আন্তরিক ধন্যবাদ এমন একটি সুন্দর উদ্যোগের জন্য।’
তিনি আরো বলেন, ‘সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে দুই যুগ পরের বন্ধু-মিলন! শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয় প্রাঙ্গণ আজ যেন আনন্দ আর ভালোবাসার এক ঢেউয়ে ভাসছে। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমরা চাই, বন্ধুত্বের এই বন্ধন চিরন্তন হোক।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী সচিব মিল্টন বিশ্বাস অনুভুতি প্রকাশ করে বলেন, ‘সুদীর্ঘ ২৫ বছর পরে আবার প্রিয় বন্ধুদের কাছে পেয়ে ফিরে এসেছে পুরাতন সব স্মৃতি। প্রাণের এ মেলবন্ধন মনে জাগিয়েছে এক অনিন্দ সুন্দর অনুভূতি।’
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রভাষক ডা. মনিকা বিশ্বাস অনুভুতি জানালেন এভাবেই, ‘গত দুই রাত ছিল টানটান উত্তেজনা। কি হয় কি হয়। ভোরের আলো, মন ভালো করা, হৃদয় উথাল পাথাল করা সারাটা দিন-বন্ধু তোরা কেমন যেন, বিনি সুতার মালায় গাথা রইল স্মৃতিরা।’
রূপালী ব্যাংক পিএলসির সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ও বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জ শাখা ব্যবস্থাপক সন্দিপ সাহা বলেছেন, ‘দীর্ঘ ২৪ বছর পর প্রাণের প্রতিষ্ঠান শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে আমরা ১৯৭৬ থেকে ২০২৫ ব্যাচ। কত পরিবর্তন হয়েছে, হয়নি শুধু ঐতিহ্যের এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি হৃদয়ের টান। সিনিয়র ব্যাচ ও জুনিয়র ব্যাচ মিলেমিশে একাকার। আমরা যেন সেই ১৯৯৯ সালে ফিরে গিয়েছিলাম।’
এমআই