শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫

নভেম্বর রাত্রিযাপনে নিষেধাজ্ঞা

পর্যটক সংকটে সেন্টমার্টিনে যায়নি কোনো জাহাজ

শনিবার, নভেম্বর ১, ২০২৫
পর্যটক সংকটে সেন্টমার্টিনে যায়নি কোনো জাহাজ

গোলাম আজম খান, কক্সবাজার:

কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে আজ (পহেলা নভেম্বর) শনিবার থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের কথা থাকলেও যাত্রী সংকটের কারণে কক্সবাজার থেকে কোনো জাহাজ ছাড়েনি।

চলতি মৌসুমে প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া জাহাজ কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই দুই মাস জাহাজ চলাচলের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। তাদের মতে, নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে রাতযাপনে নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রবাল দ্বীপটি ভ্রমণে পর্যটকদের মধ্যে এক ধরনের অনীহা কাজ করছে। 

‘ডিসেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে রাতযাপনে নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই তখন দ্বীপে পর্যটকের সংকট থাকবে না। এ কারণে ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকেই সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে জাহাজ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

চলাচলের অনুমতি পাওয়া সেন্টমার্টিন রুটের পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানিয়েছেন, ‘আজ শনিবার থেকে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়ারছড়ায় বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাট দিয়ে জাহাজ ছাড়ার অনুমতি ছিল। কিন্তু যাত্রী সংকটের কারণে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে জাহাজ ছাড়া সম্ভব হয়নি।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেন এমন সিদ্ধান্ত আর কেন বা জাহাজ চলাচল করা যাচ্ছে না? তার উত্তর দিয়েছেন সেন্টমার্টিন রুটের পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-এর নেতারা।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুরের সাথে আলাপকালে জানিয়েছেন, তার প্রথম কারণ সরকারি সিদ্ধান্তে শর্তের বেড়াজাল। শর্ত মতে নভেম্বরে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন গেলেও রাত্রি যাপনের সুযোগ নেই। দিনে গিয়ে দিনে তাদের ফিরতে হবে কক্সবাজার। কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়াস্থ বাঁকখালী নদীর ঘাট থেকে পর্যটনবাহী জাহাজ সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেটি ঘাটে পৌঁছতে সময় লাগে ৭ থেকে সাড়ে ৭ ঘণ্টা। ফলে দিনে গিয়ে দিনে ফিরতে জাহাজে সমুদ্রযাত্রায় সময় প্রয়োজন ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা। জোয়ার-ভাটা এবং আসা-যাওয়ার জন্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সেন্টমার্টিনে পৌঁছে জাহাজ অপেক্ষা করতে পারবে এক ঘণ্টা। ফলে ১৫ ঘণ্টার সমুদ্র যাত্রা শেষে ১ ঘণ্টার দ্বীপ ভ্রমণে ইচ্ছুক নন পর্যটকদের বেশি ভাগই।

তিনি জানান, কিছু সংখ্যক পর্যটক দিনে গিয়ে দিনে ফিরতে আগ্রহী। এদের সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে ১ থেকে দেড় শত। কিন্তু এই ১ থেকে দেড় শত যাত্রী নিয়ে জাহাজ চলাচল সম্ভব না। একটি জাহাজ সাড়ে ৩ শত যাত্রী না পেলে দ্বীপে আসা-যাওয়া করতে পারে না। তার কারণ জাহাজের খরচ। একটি জাহাজ আসা-যাওয়ার জন্য জ্বালানি, জাহাজের নাবিকসহ অন্যান্য কর্মচারী, ঘাটের টোল, সরকারি ভ্যাটসহ সকল মিলে খরচ ১০ লাখ টাকার কম-বেশি। ফলে ১ থেকে দেড় শত যাত্রী পেলেও কক্সবাজার শহর থেকে সেন্টমার্টিন আসা যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

অপরদিকে উখিয়ার ইনানীস্থ নৌ বাহিনীর জেটি ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল করলে সময় কমবে যাওয়া আসায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। এই জেটি দিয়ে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টায় আসা-যাওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সেন্টমার্টিনে জাহাজ আড়াই ঘণ্টা অবস্থান করার সুযোগ আছে। কিন্তু পরিবেশগত কারণে ওই জেটি দিয়ে জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই। টেকনাফের দমদমিয়া ঘাট থেকে সময় আরও কম। যাওয়া আসা ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। কিন্তু মিয়ানমারের আরাকান আর্মি সাথে জান্তার সংঘাত, নাফ নদী থেকে বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়া আর গোলাগুলির নিরাপত্তাজনিত কারণে তা সম্ভব না। ফলে জাহাজ মালিকরা নভেম্বরে জাহাজ চলাচলের জন্য রাজি নন।

হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, গত বছরের মতো ডিসেম্বর জানুয়ারি জাহাজ চলাচলের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।

সরকারি সিদ্ধান্তমতে বঙ্গোপসাগরের বুকে আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটকদের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস দ্বীপটিতে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন পর্যটকেরা। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিনে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে পর্যটকদের মানতে হবে সরকারের ১২টি নির্দেশনা।

সরকারি প্রজ্ঞাপন মতে, নভেম্বরে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় দ্বীপটি ভ্রমণ করতে পারবেন। রাত যাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি দুই মাস রাত যাপনের সুযোগ থাকবে।

এ ছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ১২টি নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে বিআইডব্লিউটিএ এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি পাবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।

তথ্য অনুযায়ী, আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেতে পারবেন পর্যটকেরা। আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার ৯ মাসের জন্য দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক ভ্রমণ করতে পারবেন না।

পর্যটকদের ভ্রমণকালে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়–বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষেধ। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।

ভ্রমণকালে নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক, যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

উল্লেখ্য, সরকারি বিধিনিষেধের আলোকে ৯ মাস বন্ধ থাকার পর শনিবার (১ নভেম্বর) থেকে উন্মুক্ত হয়েছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। কথা ছিল ১ নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হবে। কিন্তু নানা কারণে নভেম্বরে চলাচল করছে না জাহাজ। জাহাজ মালিকরা ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই দুই মাস জাহাজ চলাচলের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল