নিজস্ব প্রতিবেদক:
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যাসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক দুই মামলায় সাবেক তথ্যমন্ত্রী জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ চার আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশের দিন ধার্য রয়েছে আজ।
রোববার (২ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেবেন।
অন্য দুই সদস্য হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
গত ২৮ অক্টোবর আটটি অভিযোগের কিছু পড়ে শোনান ইনুর আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। এক পর্যায়ে কোনো অভিযোগই সত্য নয় জানিয়ে তার অব্যাহতির আবেদন করেন তিনি। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনালকে এসব অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখার অনুরোধ জানান। তবে ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতা হিসেবে কোনো দায় ইনু এড়াতে পারেন না বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কথোপকথনের মাধ্যমেও কমান্ড রেসপনসিবিলিটি প্রমাণ করে। তাই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রার্থনা করা হয়। পরে আদেশের জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ২৩ অক্টোবর ইনুর বিরুদ্ধে আনা আটটি অভিযোগ পড়ে শোনান প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। একই সঙ্গে তার বিচার শুরুর প্রার্থনা করেন।
১৪ অক্টোবর এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইনুর পক্ষে ট্রাইব্যুনালে সময় চান আইনজীবী নাজনীন নাহার। তিনি বলেছিলেন, এ মামলায় মোট ১৭০০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র পড়তে ও প্রিভিলেজ কমিউনিকেশনের জন্য আট সপ্তাহ সময়ের প্রয়োজন। পরে আসামির সঙ্গে তিনদিন দুই ঘণ্টা করে কথা বলার অনুমতি দেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে, ২৯ সেপ্টেম্বর এ মামলায় ইনুকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ ছিল। কারাগার থেকে আনার পর তার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জের (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) ওপর শুনানির জন্য এক সপ্তাহ সময় চান প্রসিকিউশন। তবে আসামিপক্ষে আরও দু’দিন বাড়িয়ে সময়ের আবেদন করেন নাজনীন নাহার। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ১৪ অক্টোবর ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
২৫ সেপ্টেম্বর এই জাসদ সভাপতির বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে গণহত্যায় সহযোগিতাসহ সুনির্দিষ্ট আটটি অভিযোগ এনে ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) দাখিল করে প্রসিকিউশন। এরপর শুনানিতে আটটি অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়। শুনানি শেষে অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেন আদালত।
গত বছরের ২৬ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা থেকে হাসানুল হক ইনুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন এই জাসদ নেতা। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসেবে কুষ্টিয়ায় নিজ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে হেরে যান তিনি।
এদিকে, একই দিন হানিফসহ পলাতক চার আসামির পক্ষে অভিযোগ পড়েন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। শুরুতেই তিনি ফরমাল চার্জে প্রসিকিউশনের আনা পটভূমি নিয়ে সমালোচনা করেন। এরপর সুনির্দিষ্ট তিনটি অভিযোগ পড়ে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন করেন। শুনানি শেষে অভিযোগ গঠনের আদেশের জন্য আজকের দিন ঠিক করা হয়।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন– চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম, আবদুস সোবহান তরফদার, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।
গত ২৭ অক্টোবর হানিফসহ চার আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠন নিয়ে শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি সুনির্দিষ্ট তিনটি অভিযোগ পড়ে শোনানোর পাশাপাশি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আবেদন জানান।
এ মামলায় হানিফ ছাড়া অন্য তিন আসামি হলেন– কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সদর উদ্দিন খান, জেলা সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা।
গত ২৩ অক্টোবর হানিফসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার কথা ছিল। তবে পলাতক থাকায় আইনানুযায়ী তাদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। ১৪ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে এই চারজনকে হাজির হওয়ার নির্দেশ ছিল। না আসায় তাদের গ্রেপ্তারে জাতীয় দৈনিক দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল।
এর আগে, ৬ অক্টোবর হানিফসহ চারজনের বিরুদ্ধে আনা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-২। একই সঙ্গে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ৫ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেন প্রসিকিউশন। এতে সুনির্দিষ্ট তিনটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে রয়েছে উসকানিমূলক বক্তব্য, ষড়যন্ত্র ও কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যা।
উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে কুষ্টিয়ায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ছয়জন। একই সঙ্গে আহত হন বেশ কয়েকজন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। এরই ধারাবাহিকতায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।
একে