বিশেষ প্রতিবেদক :
বাংলাদেশের রাজনীতিতে কিছু নেতা আছেন, যাঁরা প্রচারের আলো থেকে দূরে থেকে কেবল কাজের মাধ্যমেই নিজেদের অবস্থানকে অটল রেখেছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এ বি এম আশরাফ উদ্দিন নিজান তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের সংকটময় মুহূর্ত থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের দল ভাঙার ষড়যন্ত্র—প্রতিটি দুঃসময়ে তিনি নীরব নেতৃত্ব দিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
ওয়ান-ইলেভেনে বিদ্রোহের মোকাবিলা
২০০৭ সালের জরুরি অবস্থার সময় যখন বিএনপির অধিকাংশ সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার সংস্কার প্রক্রিয়ায় যোগ দিচ্ছিলেন, তখন দলের পক্ষ থেকে কথা বলার মতো কেউ ছিল না। সেই চরম প্রতিকূল সময়ে আশরাফ উদ্দিন নিজান একাই রুখে দাঁড়ান। তিনি প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ঘোষণা করেন:
"১০২ জন তো দূরের কথা, দুজনও মান্নান মিয়ার সাথে থাকবে না। আমরা সবাই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকব।"
তাঁর এই বক্তব্য সেই অস্থির সময়ে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা তৈরি করে। এছাড়া, বন্দী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে নানা কৌশলে সাক্ষাৎ করে কঠিন পরিস্থিতিতেও দলের ঐক্য ধরে রাখতে তিনি নেপথ্যে কাজ করেন।
দল ভাঙার ষড়যন্ত্রে 'জুলাই বিপ্লব'-এ নেপথ্য যোগাযোগ
২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে যখন ক্ষমতাসীন দল বিএনপি নেতাদের প্রলোভন দিয়ে দল ত্যাগে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করে, তখনও নিজান দৃঢ়ভাবে দলের ঢাল হিসেবে কাজ করেন। শাহজাহান ওমর ও জেনারেল ইব্রাহিমের মতো নেতারা প্রলোভনে সাড়া দিলেও, নিজানের কৌশলী তৎপরতায় অনেক নেতা দলত্যাগ থেকে বিরত থাকেন। জানা গেছে, তাঁর উদ্যোগে থেকে যাওয়া নেতাদের অনেকেই বর্তমানে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।
এছাড়াও, দেশের রাজনৈতিক মহলে আলোচিত 'জুলাই বিপ্লব'-এর সময়ে তিনি হাই কমান্ডের নির্দেশে ঝুঁকি নিয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের দায়িত্ব পালন করেন বলে জানা যায়।
সততার দৃষ্টান্ত: ১০ কোটি টাকার ঘুষ প্রত্যাখ্যান
রাজনৈতিক জীবনে তাঁর সততা ও চারিত্রিক দৃঢ়তা বেশ আলোচিত। ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি তৎকালীন মন্ত্রীর দেওয়া ১০ কোটি টাকার ঘুষ প্রত্যাখ্যান করেন।
নিজের দায়িত্বকালে সরকারি অর্থে বিদেশ সফরের পাঁচটি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি একবারও যাননি। তিনি ফ্ল্যাগ, প্রটোকল বা দেহরক্ষীর মতো সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করেননি, যা তাঁর সাদাসিধা জীবনযাপনের প্রমাণ দেয়।
লক্ষ্মীপুর-৪: তৃণমূলের একক আস্থা
রামগতি-কমলনগর (লক্ষ্মীপুর-৪) আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য এলাকাবাসীর কাছে একজন অভিভাবক হিসেবে পরিচিত। কমলনগর উপজেলা গঠন, নদীভাঙন রোধ, যোগাযোগ ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা স্থানীয়ভাবে প্রশংসিত।
এই আসনের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এককভাবে আশরাফ উদ্দিন নিজানকেই দলের যোগ্য ও বিজয়ী প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। রামগতি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. আনোয়ার হোসেনের ভাষায়, "দুর্দিনে নিজান সাহেব আমাদের পাশে ছিলেন। তাঁকেই আমরা প্রার্থী হিসেবে চাই।"
হাই কমান্ডের আস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
আশরাফ উদ্দিন নিজান দলের হাই কমান্ডের কাছেও অত্যন্ত আস্থাভাজন। রাজনৈতিক মহলে বহুল আলোচিত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের গোপন বৈঠকটি তাঁর বাসাতেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা প্রমাণ করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে তাঁর গুরুত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা।
আদর্শগতভাবে তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ এবং বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বেই বিশ্বাসী। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের চূড়ান্ত ঠিকানা হিসেবে তিনি জিয়া পরিবার ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শনকে ধারণ করেন।
একে